প্রচ্ছদঃ রাজীব দত্ত |
হোসেন রওশনের প্রথম কাব্যগ্রন্থ অন্ধ ফিলোসফারের কান পাণ্ডুলিপি থেকে...
গন্তব্য
সকাল নয়টা থেকে রাত এগারোটা পর্যন্ত আমি ভিক্ষা করি। আমার দুই কাঁধে দুইটা ভিন্ন কালারের ঝুলি আছে। বাম কাঁধে সাদা ঝুলি, সেখানে দুঃখ রাখি। ডান কাঁধে কালো ঝুলি, সেখানে আনন্দ।
যেদিন কালো ঝুলিতে ভিক্ষা বেশি হয় সেদিন বন্ধুদের কাছে যাই, মদ খাই, অর্ণব শুনি, কাফকা পড়ি, শাহীন মোমতাজ কে ফোন করি, রণজিৎ দাশের একটি দুঃখের কথা পড়ে নিজের আগামি নিয়ে ভাবি।
আর যেদিন সাদা ঝুলিতে ভিক্ষা বেশি হয়-
সেদিন আমার কোথাও যাবার থাকেনা,
তোমার কাছে যাই।
᧖᧖᧖᧖᧖᧖᧖᧖᧖᧖᧖᧖᧖᧖᧖᧖᧖᧖᧖᧖᧖᧖᧖᧖᧖᧖᧖᧖᧖᧖᧖᧖᧖᧖᧖᧖
বন্ধু সিরিজের কবিতা
১
(নাদিয়া জান্নাত আপনাকে)
মাবুদ বললেন, আমার কোনো শরীক নাই কিন্তু প্রফেট আমার বন্ধু।
আমি শিখলাম, শরীক ছাড়াও দুনিয়ার মতো হাজারটা দুনিয়া মাবুদ বানাইতে পারেন কিন্তু বন্ধু ছাড়া পারেন না।
২
বন্ধুরা বড়লোক হয়ে গেলে তাকে আর "তুই" ডাকা যায় না। সফলতার ভারে তুইয়ে মেদ চর্বি জমে আপনি হয়ে যায়। আমাদের দরকারি কথা হয় টাকা ধার সংক্রান্তই। গতমাসে উনার একটা পাঁচ কাঠার জমি হাত ছাড়া হয়ে গেছে। সামনের মাসে দশ কোটি ব্যাংক লোন পাবেন। এই মাসটা কষ্টে যাচ্ছে উনার। বড়লোক বন্ধুর বড় অভাব, বড় দুঃখ।
এইসব দুঃখের গল্প শুনে দুই হাজার টাকা ধার চাওয়ার সাহস হয়না আর। আমতা আমতা করে আমরা চিনি ছাড়া চা খাই। বড়লোক বন্ধুর সাথে হাত মিলায়ে বাইরে আসি আর রিক্সা অলারে বলি, এইটা আমার বন্ধুর অফিস। রিক্সা অলার ছোটলোক চোখ হঠাৎ বড়লোক হয়ে ওঠে।
৩
বন্ধুদের কথা মনে পড়লেই ছোট হয়ে যাই।
যেন তাদের পাওনাদার পকেট আমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে ঘৃণায়-
আমি সেই পকেটের দিকে কৃতজ্ঞ বনসাই।
বলি, এই মাসটা চাপে যাচ্ছে। আপনার বাচ্চারা ভালো আছে?
বন্ধুরা কখনো সখনো প্রভুর মতো আশ্রয় দেয় কখনো বা শয়তানের মতো উৎসাহ;
ফেরার তাড়া থাকলেও বসি, হাসি, হাসাই।
জুতার কাছে পা আর পাওনাদারের পকেটে মাথা বন্ধক রেখে সিজদার মতো নত হয়ে থাকি প্রায়ই।
আশ্চর্য, পাওনাদার ছাড়া আমার কোনো বন্ধু নাই।
᧖᧖᧖᧖᧖᧖᧖᧖᧖᧖᧖᧖᧖᧖᧖᧖᧖᧖᧖᧖᧖᧖᧖᧖᧖᧖᧖᧖᧖᧖᧖᧖᧖᧖
অন্ধ ফিলোসফার
বিশ্বাস, দাসত্ব আর প্রেমও এক অন্ধত্ব।
ক
যথা হইতে আসে অসুখ তথা হইতে শেফা, কারণ ও জিজ্ঞেসের আগেই আমাদের শেখানো হলো পরীক্ষা।
খ
মানুষের পোষ মানা বাঘ আর বাঘ থাকলো না।
গ
আমিই সেই অন্ধ ফিলোসফার, পুষ্পমাল্যের লোভ দেখায়ে যাকে পরিয়ে দেয়া হয়েছে নির্মম ফাঁসির রশি।
0 মন্তব্যসমূহ