যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম এখন ম্যাসেঞ্জার। ম্যাসেঞ্জারে হাই, হ্যালো চলতেই থাকে! কবি, কথাসাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী—কেউ বাদ পড়েন না। এসময়ে তাই শুধুমাত্র হাই, হ্যালো ছাড়িয়ে চ্যাটিং গড়াচ্ছে বিভিন্ন চিন্তামূলক আলাপে। সম্প্রতি কথাসাহিত্যিক মেহেদী উল্লাহ তাঁর ফেসবুক টাইমলাইনে এমনই চিন্তামূলক চ্যাটিং আয়োজন--'হাফ এন আওয়ার চ্যাটিং এবাউট কালচার' (Half an hour chatting about culture) প্রকাশ করছেন। বলে রাখা ভালো, আমাদের বিগতকালের লেখক-বুদ্ধিজীবীগণের সংস্কৃতি বিষয়ক বহুবিধ ও বহুমাত্রিক চিন্তা তাঁদের রচিত গ্রন্থগুলোতে প্রকাশ পেয়েছে। তাঁদের সময়ের চিন্তার সাথে বর্তমান সময়ের লেখক-বুদ্ধিজীবীর চিন্তার তূলনামূলক এই পাঠ এক অতি বড় সুযোগ। আমরা মেহেদী উল্লাহ’র এমন উদ্যোগকে খুব গুরুত্বপূর্ণ কাজ মনে করি। তাই এটির সংকলন ও প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছি। গতিপথ বাংলা ওয়েবজিনের আলাপ-সিরিজে প্রতি রবিবার মেহেদী উল্লাহ’র হাফ এন আওয়ার চ্যাটিং এবাউট কালচার এর একটি করে পর্ব প্রকাশিত হবে।
আলাপ সিরিজ : মেহেদী উল্লাহ’র হাফ এন আওয়ার চ্যাটিং এবাউট কালচার পর্ব-২
মেহেদী উল্লাহ’র টাইমলাইন: বৃহস্পতিবার, ১৪ মে ২০২০; বিকেল ৫ টা ৩৫ মিনিট
আজ কথা হলো লেখক Salah Uddin Shuvro ভাইর সাথে। আধঘণ্টায় সংস্কৃতি নিয়ে অনেক কথা হলো—
মেহেদী উল্লাহ : বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় আপনি খুব সংক্ষেপে ফেসবুকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তোলেন। সেসবের বর্ধিত চিন্তা করেন না মনে হয়, ওই বিষয়ক দীর্ঘ লেখা পরবর্তীকালে পাই না আপনার। চিন্তার ওই সংক্ষিপ্ত পরিসরই কি আপনাকে ঘিরে রাখে?
সালাহ উদ্দিন শুভ্র : চিন্তা-ভাবনা আমি একটু কমই করি। ফেইসবুক হইল আমিও আছি, এ রকম একটা জানান দেয়া, নিজের মনে কিছু একটা উঠলে সেটা বলা। বড় কিছু লেখালেখির বুদ্ধিজীবীতায় আমি নাই।
মেউ : ফেসবুকের বাস্তবতায় ছোট কিছু লেখার বুদ্ধিজীবীতা ব্যাপারটা কেমন তাহলে? অনেকেই এভাবে মত প্রকাশ করছেন?
সা উ শু : এইটা তো আমি এনজয় করি। একটু বুদ্ধিজীবীও থাকা হইল, অন্যের বুদ্ধিবৃত্তিক ভাবগাম্ভীর্যও নষ্ট করা হইল। সমাজে কোনো কিছুকে প্রধান হইতে না দেয়ার কাজটাই ফেইসবুক করে।
মেউ : এই যে ছোট ছোট ব্যাপার দিয়ে বড় প্রভাব তৈরি হচ্ছে, এটা কেন্দ্রকে ভাঙছে। ভালো ব্যাপার। অন্যদিকে, বাজারে ছোট মুদ্রা অর্থাৎ এক টাকার কয়েনের বদলে চকলেট দেওয়া হচ্ছে, এটা দীর্ঘদিন যাবত হয়ে আসছে। দেশের মানুষ এই ছোট্ট বিসর্জনে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। এটার কি কোন সাংস্কৃতিক কারণ থাকতে পারে? যেহেতু তারা মেনে নিচ্ছে।
সা উ শু : অর্থনৈতিক সংস্কৃতিতে এরকম এক টাকার কয়েনের বদলে চকলেট দেয়ার ব্যাপারগুলা পুরানা। আমাদের ইউনিভার্সিটির হলে দেখতাম কাটা কাগজ ধরায়া দিত খুচরা টাকার বিনিময়ে। পরে এসব কাটা কাগজই নোট হয়ে উঠছে। করোনায় দেখা যাবে ভার্চুয়াল লেনদেনের কালচারের বিস্তৃতি ঘটছে। এইটা বিসর্জন না। এখানে তো বিষাক্ত, মেয়াদোত্তীর্ণ খাবার এভেইলেবল। এখানে এক টাকা ম্যাটার করে না। মানুষ যে মেনে নিচ্ছে এই ভেজাল খাবার, কারণ তার অস্তিত্ব সংকট। স্পেসকে ওউন করতে পারে না সে, ঢাকাকে ওউন করার কনফিডেন্স নাই। বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার ব্যাপারটা এখানে আলাদা। ব্লগের লেখালেখি দিয়ে যার শুরু বলা যায়। পরে ফেসবুক। এসব প্ল্যাটফর্ম এসে স্টাবলিশমেন্টকে নাজুক করে দিছে। যেখানে অনেক বুদ্ধিজীবীর দেখা পাওয়া যাচ্ছে। ফেসবুক সেলেব্রিটি যারা তাদের সাবস্ক্রাইবার অনেক। সে তুলনায় আমি হয়ত পঞ্চাশটা নিয়মিত লাইক পাই।
মেউ : হ্যাঁ, আপনার লাইকের ব্যাপারটায় আসব। আমি এটাও বলতে চাচ্ছি, চকলেট দিয়ে শিশুকে বুঝ দেয়া হয়, এখন বড়দেরও দেওয়া হচ্ছে। বিভিন্নক্ষেত্রেই এমন বুঝ দেওয়ার ঘটনা বেড়েই চলেছে, যার মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সমতা দেখি না, এই বিষয়টা কি ভাবাচ্ছে আপনাকে?
সা উ শু: শিশুদের আলাপ আনলে এটা বুঝা যাবে না। এক টাকার জন্য চকলেট যে দিচ্ছে বা যে নিচ্ছে তাদের আর্থসামাজিক নৈকট্য আছে। অন্তত আমাদের সোসাল কনটেক্সটে। এরা চকলেটের মালিক না, টাকাও খুব বেশি নাই। মানে এটা কালচারাল সহাবস্থান। নিজেদের মধ্যে নিজেদের বসাবসির জন্য একটা গ্যাপ রাখতে হয়, সেটা। এখানে ঠকানোর ব্যাপারটা নাই আসলে। যখন এটা মালিক-শ্রমিক, ক্ষমতাবান আর দরিদ্র, বিএনপি আর আওয়ামী লীগ এসবের মধ্যে ঘটে তখন ঠকানো বা প্রতারণার ব্যাপার থাকে। আবার সাহিত্যে পুরস্কার দেয়ার মধ্য দিয়ে এসব বুঝ দেয়ার ব্যাপার থাকে। বা বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চায় নিজের কাছের, বন্ধুদের বাহবা দেয়ার ব্যাপারগুলা তো থাকেই।
মেউ : আচ্ছা। ছোট লেখা নিয়ে আলাপ হচ্ছিল শুরুতে। আপনি ছোট পোস্ট দিলেও, সেখান থেকেই যদি কমেন্টে প্রশ্ন আসতে থাকে বিভিন্নজনের, তাহলে কিন্তু উত্তরে উত্তরে লেখাটা বড়ই হয়ে যাচ্ছে এক প্রকারে। নাকি আপনি একে লেখার অংশ বলবেন না? কিন্তু আপনার পোস্টে কমেন্ট ও লাইক কম পড়ে, এটা কি ফেসবুক বন্ধুরা বুঝতে পারছে না বলে, নাকি বুঝেও না বুঝা, নাকি কোন উৎকণ্ঠা, নাকি প্রশ্নহীন সময়ের সাক্ষ্য বহন করতেই তারা ইচ্ছুক?
সা উ শু : সবই কিন্তু লেখা। স্ট্যাটাস, কমেন্টস সব। আর লাইক কমেন্ট বিষয়ে আমার মত হইল তা যত কম পড়ে তত ভালো। বেশি লাইক কাউকে ডিরেইলড করে দিতে পারে। তখন তিনি একজন মনোরঞ্জকে পরিণত হন। অডিয়েন্সের অপনিয়ন বা পলিটিক্যাল অবস্থার বাইরে যাইতে পারেন না। কম লাইক গুড ফর হেলথ।
মেউ: ধন্যবাদ ভাই। অন্যকোনো সময় আমাদের আরো বিস্তারিত আলাপ হবে। ভালো থাকবেন, সাবধানে থাকবেন।
সা উ শু : ওকে।
[চলবে]
অন্যপ্রান্তের লেখক: সালাহ উদ্দিন শুভ্র। জন্ম আশির দশক, ফেনী। স্নাতকোত্তর (আর্কিওলজি), জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। পেশা : লেখালেখি ও সাংবাদিকতা। প্রকাশিত বই : মানবসঙ্গবিরল [গল্প; ২০১১] গায়ে গায়ে জ্বর [উপন্যাস; ২০১৪] মেয়েদের এমন হয় [গল্প; ২০১৯] আলোয় অন্ধ শহর [সায়েন্স ফিকশন; ২০২০]।
ᐯᐱᐯᐱᐯᐱᐯᐱᐯᐱᐯᐱᐯᐱᐯᐱᐯᐱᐯᐱᐯᐱ
লেখকের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি:
![]() |
মেহেদী উল্লাহ (জন্ম: ১৯৮৯ সাল) |
0 মন্তব্যসমূহ