bdtime

বঙ্গাব্দ ꘡

সংস্কৃতিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে রাষ্ট্র ব্যর্থ হয়েছে, বুদ্ধিবৃত্তিক জাগরণ দরকার-- শিমুল সালাহ্উদ্দিন


যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম এখন ম্যাসেঞ্জার। ম্যাসেঞ্জারে হাই, হ্যালো চলতে থাকে! কবি, কথাসাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী—কেউ বাদ পড়েন না। হাই, হ্যালো ছাড়িয়ে চ্যাটিং গড়াচ্ছে বিভিন্ন চিন্তামূলক আলাপে। সম্প্রতি কথাসাহিত্যিক মেহেদী উল্লাহ তাঁর ফেসবুক টাইমলাইনে এমনই চিন্তামূলক চ্যাটিং আয়োজন--'হাফ এন আওয়ার চ্যাটিং এবাউট কালচার' (Half an hour chatting about culture) প্রকাশ করছেন। বলে রাখা ভালো, আমাদের বিগতকালের লেখক-বুদ্ধিজীবীগণের সংস্কৃতি বিষয়ক বহুবিধ ও বহুমাত্রিক চিন্তা তাঁদের রচিত গ্রন্থগুলোতে প্রকাশ পেয়েছে। তাঁদের সময়ের চিন্তার সাথে বর্তমান সময়ের লেখক-বুদ্ধিজীবীর চিন্তার তূলনামূলক এই পাঠ এক অতি বড় সুযোগ। আমরা মেহেদী উল্লাহ’র এমন উদ্যোগকে খুব গুরুত্বপূর্ণ কাজ মনে করি। তাই এটির সংকলন ও প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছি। গতিপথ বাংলা ওয়েবজিনের আলাপ-সিরিজে প্রতি রবিবার মেহেদী উল্লাহ’র হাফ এন আওয়ার চ্যাটিং এবাউট কালচার এর একটি করে পর্ব প্রকাশিত হচ্ছে।

আলাপ সিরিজ : মেহেদী উল্লাহ’র হাফ এন আওয়ার চ্যাটিং এবাউট কালচার পর্ব-৩

মেহেদী উল্লাহ’র টাইমলাইন: শনিবার, ১৬ মে ২০২০; সন্ধ্যা ৬ টা ৫৩ মিনিট


আজ থাকছেন কবি Shimul Salahuddin ভাই। সংস্কৃতি নিয়ে কথা হলো তাঁর সঙ্গে—

মেহেদী উল্লাহ : আপনি দীর্ঘসময় ধরেই সংস্কৃতি-অঙ্গনের সঙ্গে জড়িত, ছাত্রজীবনে আবৃত্তি করতেন, পরে সংস্কৃতি-সাংবাদিকতার শুরু। সংস্কৃতি বিষয়ক পাঠে যেটা জানা যায় তা হচ্ছে, মানুষের অভ্যাস, চর্চা সবই সংস্কৃতি, তাহলে এইদেশে সংস্কৃতি বলতে কেন শুধু পরিবেশনামূলক ব্যাপারগুলোকে বোঝায়, যেমন, আবৃত্তি, নাচ, গান, মঞ্চনাটক ইত্যাদি? এই ক্ষুদ্রতর ও অস্পষ্ট একটা পথে আমরা কেন গেলাম?

শিমুল সালাহ্উদ্দিন : প্রিয় মেহেদী, তোরে ধন্যবাদ আমার সাথে যে এ ব্যাপারে আলাপ করা যায় এটা ভাবার জন্য, আমারে প্রশ্ন করার জন্য। তুই-ই বললি, 'এইদেশে সংস্কৃতি বলতে কেন শুধু পরিবেশনামূলক ব্যাপারগুলোকে বোঝায়', কে বোঝায় আদতে? এইটা প্রশ্নে পরিষ্কার করা দরকার আগে।
পরিবেশনামূলক ব্যাপারগুলো সামগ্রিক জীবনাচরণের কী বাইরে? আবৃত্তি হয় কবিতা বা সাহিত্যের, নাচ ও গানের ক্ষেত্রেও বা মঞ্চনাটকের ক্ষেত্রেও তাই, লিটারারি টেক্সট-ই মূলত, তো তা তো জীবনের বাইরের কোন কিছু নিয়া সেই অর্থে হয় না। সামগ্রিক জীবন থেকেই এসবের উপাদান আসে। আমি নিজে মনে করিনা যে শুধুমাত্র পরিবেশনামূলক ব্যাপারই সংস্কৃতি।
ধর, দীর্ঘসময় তো শিল্পসাহিত্যবিষয়ক অনুষ্ঠান পরিকল্পনা, প্রণয়ন ও প্রচার করছি আমি, তাতে সবসময় পরিবেশনাগত সাংস্কৃতিক উপাদানের সাথে জীবনাচরণ, উৎসব, ঐতিহ্য এসবও আমি রেখেছি। সামগ্রিকভাবে যে 'আমরা'র কথা তুই বলতেছিস, সেই আমরা আসলে এক্সিস্ট করে না। ক্ষুদ্রতর ও অস্পষ্ট পথটা না বোঝাবুঝিজনিত কারণে মনে হইতে পারে, বুঝতে না চাওয়ার কারণেও।
আর ছাত্রজীবনে সাংগঠনিকভাবে আবৃত্তি সংগঠন করলেও, আমি কিন্তু কবিতাও লিখতাম, আন্দোলন করতাম, নৃবিজ্ঞান-ও পড়তাম।
তোর হয়তো মনে থাকবে, জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতিও ছিলাম ক্রুশাল একটা পিরিয়ডে।
একটু পর থেকে হইলেও, তুই তো চোখের সামনেই দেখছিস আদতে আমাদের সময়টা।

মেউ : হ্যাঁ, আপনার কবিতা আমার ভালো লাগে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আপনাদের সাংস্কৃতিক বিনিময় ছিল।
তাহলে মূলধারার গণমাধ্যমে সংস্কৃতি বিষয়ক সংবাদে কী ছাপা হয়, তা কেন বক্স করে সীমিত পরিবেশনাগুলোকেই তুলে ধরা হচ্ছে। এছাড়া আমাদের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কাজ কী—সেটা পর্যবেক্ষণ করলেই বোঝা যায় দেশে সংস্কৃতি বলতে আসলে কি কি বিষয়ের দায়িত্ব তারা নিচ্ছে। আর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতেও আমরা দেখছি, আলাদা করে বলা হচ্ছে, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। তার মানে, আপনার কথা অনুযায়ী, জীবন্ত জীবনধারা ও চর্চাকে আলাদা করে উপস্থিত করা হয় পরিবেশনায়, কিন্তু সেটা তো জীবন্ত একটা বিষয় কৃত্রিম হয়ে যাচ্ছে, মানে সাজানো?

শিমুল সালাহ্উদ্দিন : প্রতিষ্ঠানের নানা রকম সীমাবদ্ধতার মধ্যে কাজ করতেই হয়। গণমাধ্যমে আমি মনে করি সংস্কৃতিবিষয়ক কাজ করার জায়গাটাই এখনো দাঁড়ায় নাই। যদিও অনেক মহাজন (কামাল লোহানী, শাহাদাৎ চৌধুরী, শামীম আজাদ, চিন্ময় মুৎসুদ্দী, রুমি নোমানর-রা) প্রচুর কাজ করেছেন। গণমাধ্যমে এখনো পর্যন্ত সংবাদই ছাপা হয়, সেই অর্থে মূল্যায়ন বা গবেষণাধর্মী কাজ না। এবং সেটা বিনোদন দেয়ার লক্ষ্যেই। ফলে চাইলেও অনেক কিছু একজন সাংস্কৃতিক প্রতিবেদক বা সম্পাদক করতে পারেন না। সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কাজ ও পরিধি নিয়ে প্রচুর সমালোচনা আছে, মন্ত্রণালয়গুলো যে আমলারা চালায় তাদের ধ্যান ধারণার পরিবর্তন না হলে এর কোন উন্নয়নের সম্ভাবনা আমি দেখি না।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বলাটা ঠিকই আছে বলে আমার মনে হয়। এর মাধ্যমে কো-কারিকুলার একটিভিটিস হিসেবে এঁকে অন্তর্ভুক্ত করা হয় পাঠসূচীতে।
সকল শিল্পবস্তুই তো জীবনের প্রতিরূপ। কৃত্রিমতা না, এইটা আরেকটা বাস্তবতা আদতে। তুই যখন গল্প লিখিস, তখন কী পূর্ণ বাস্তবতা ধরতে পারিস, মানুষিক সীমাবদ্ধতার কারণেই, একটা না একটা বেরিয়ার তো টানতেই হয়। সাজানো বলেই তো তা গল্প, কবিতা, নাটক, শিল্পের উপাচারে পরিবেশিত। তাই না?
ফোকলোরচর্চাও এদেশে আমি নতুনই বলবো। তোরা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে এসব ধ্যানধারণা বদলাতে বড় ভূমিকা রাখবি বলে আমার প্রত্যাশা।

মেউ : আচ্ছা ভাই। কিন্তু এর ফলে এমন কি ঘটছে যে, সমাজে ঘটমান সাংস্কৃতিক রাজনীতিকে লুকিয়ে ফেলে সেটাকে শিল্পে বনসাই সংস্কৃতি হিসেবে অনুমোদন দিতেই বেশি ইচ্ছুক যে কোনো কর্তৃপক্ষ? যেমন আপনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌন নিপীড়ন বিরোধী আন্দোলনে সরাসরি সক্রিয় ছিলেন, লিড দিয়েছেন, সামনের সারির যোদ্ধা, এর ফলে কিন্তু তারা নীতিমালা করেছে আলাদা করে, এই যে যৌন নিপীড়নের সংস্কৃতির বিরুদ্ধে আপনাদের আন্দোলন, বা রাষ্ট্রে এমন সংস্কৃতিগুলোর বিরুদ্ধে যে প্রতিবাদ তৈরি হয়, তা সমাজে না হয়ে যদি শিল্পে করা হয়, অর্থাৎ কবিতা লিখে প্রতিবাদ করলেন। তার মানে কি সংস্কৃতিকে শিল্পের দিকে নিলে কর্তৃপক্ষের জন্য ঝুঁকি কম?

শিমুল সালাহ্উদ্দিন : খুবই ইন্টারেস্টিং আর্গুমেন্ট রে মেহেদী। তুই তো বলেই দিলি প্রায়। সমাজে ঘটমান সাংস্কৃতিক রাজনীতিকে লুকিয়ে ফেলার চেষ্টা সবসময়ই ক্ষমতায় থাকা ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান করেছে। করছেও। সংস্কৃতিকে 'শিল্পের আবরণ'-এ শুধুমাত্র আর্ট ফর আর্ট সেক করে ফেলতে পারলে তো সুবিধাই হয়। তখন শুধু বড়লোকের ডোনেশন দিয়া শিল্প চলবে বা রাষ্ট্রের ডোনেশন দিয়া হয়তো! গণমানুষের সংস্কৃতি' জেগে উঠলে ভয়টা তো ক্ষমতার কেন্দ্রে থাকাদেরই। ফলে, শিল্পীর মানুষের জন্য যে দায় আছে, সেখান থেকেই তার এই রাজনীতিটা বুঝতে হবে। তোদেরও।
আমার এসব নিয়ে ধর রফিক স্যার, সঞ্জীবদা, কফিল ভাই, অরূপ রাহীদের সাথে দীর্ঘ আলাপ হইছে। বা কিশোরদাও। সুমন ভাই কিংবা অমিতদাও। এই রাজনীতিটা শিল্পী সাহিত্যিক অধ্যাপক লেখক তাদের বুঝতে হবে। চর্চাটা গণমানুষের পাশে দাঁড়িয়ে, সামগ্রিক সংস্কৃতিকে বুঝেই করা উচিত বলে আমি মনে করি । আমাদের বড় বুদ্ধিজীবীরা এইসবের ইশারা দিয়েছেন। আবদুর রাজ্জাক, আহমদ ছফা থেকে শুরু করে হুমায়ুন আজাদ বা মোহাম্মদ রফিকরা । আনিসুজ্জামান বা সনজীদা খাতুনরাও। অথবা তারও আগে মোতাহার হোসেন চৌধুরী বা আহসান হাবীব, সৈয়দ আলী আহসান বা জিল্লুর রহমান সিদ্দিকীর মতো অনেকে।

মেউ : ঠিক ভাই। আনিসুজ্জামান স্যার আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন! আমি যদি ভুল না করি বিগত কয়েক দশকে সুশীল সমাজের পক্ষ থেকে যে বিবৃতিগুলো দিয়ে প্রতিবাদ করা হয়েছে বা বিচার দাবি করা হয়েছে শুরুর নামটি তাঁর ছিল। আপনি কি মনে করেন এতে সবসময় কাজ হয়েছে? এই বিবৃতিকে আমলে না নেওয়া কিন্তু আনিসুজ্জামানকে মান্যতা না দেওয়া। ব্যাপারটা ভেবেছেন, কোথায় কোথায় সংস্কৃতির যাঁরা চর্চা করেন (সংস্কৃতি বিশেষজ্ঞ) তারা অবরুদ্ধ?

শিমুল সালাহ্উদ্দিন : সংস্কৃতির না, পারটিকুলার ঘরানার বা ধরনের শিল্পচর্চা যারা করেন তাদের কারো কারো কূপমণ্ডুকতা, ভাবনার সীমাবদ্ধতা তো আহত করেই প্রতিদিন।
সংস্কৃতির বোঝাবুঝি পরিষ্কার থাকলে এইটা তারা হয়তো করতেন না। আমাদের দেশ স্বাধীন হয়েছে একটা সাংস্কৃতিক লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে।
১৯৪৮ সালে প্রখ্যাত ভাষাবিদ ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ ঢাকায় অনুষ্ঠিত ‘পূর্ব পাকিস্তান সাহিত্য সম্মেলন’-এর উদ্বোধনী ভাষণে বলেছিলেন, ‘আমরা হিন্দু বা মুসলমান যেমন সত্য, তার চেয়ে বেশি সত্য আমরা বাঙালি। এটি কোনো আদর্শের কথা নয়, এটি একটি বাস্তব কথা। ’ অথচ সেই অনস্বীকার্য বাস্তবতাকে অস্বীকার করে ইতিপূর্বেই অর্থাৎ ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশ সরকার ধর্মভিত্তিক জাতীয়তাবাদের নামে দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে ভারতবর্ষকে দ্বিখন্ডিত করেছিল। ফলে আলাদা রাষ্ট্র হিসেবে জন্ম হয় ভারত ও পাকিস্তানের।
পূর্ববাংলার জনগণ ‘পাকিস্তান’ নামের নতুন রাষ্ট্র লাভের মধ্য দিয়ে তাদের আশা-আকাঙ্খা পূরণের স্বপ্ন দেখছিল। কিন্তু একদিকে শ্রেণিবৈষম্যের তীব্রতা, অন্যদিকে পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠীর দ্বারা জাতিগত শোষণ ও ভাষাগত নিপীড়নের ফলে অচিরেই সে স্বপ্ন ভেঙে যায়। সেই স্বপ্নভঙ্গের যন্ত্রণাই প্রতিফলিত হতে থকে পরবর্তীকালের বিভিন্ন বিক্ষোভ ও গণ-আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। এরই তীব্রতম প্রকাশ ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলন। রাজনৈতিক তাৎপর্য ছাড়াও বাঙালি মুসলমানদের আত্মপরিচয়কে ঘিরে যে অস্পষ্টতা ও অস্বচ্ছতার কুয়াশা তাদের চেতনাকে আচ্ছন্ন করে রেখেছিল, এই আন্দোলনই প্রকৃতপক্ষে সেই কুয়াশাকে দুহাতে সরিয়ে বাঙালি সত্তার উন্মেষ ঘটাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল। বাহান্নর একুশে ফেব্রুয়ারির সঙ্গে বাংলাদেশের সংগ্রামী মানুষের সাংস্কৃতিক আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার ও বাঙালি জাতিসত্তার অস্তিত্ব রক্ষার বহু রক্তাক্ত স্মৃতি জড়িয়ে থাকলেও এ-কথা আজ সর্বজনবিদিত যে, এই নিরন্তর আন্দোলনের পরিণতিতেই ‘বাংলাদেশ’ নাম-পরিচয়ে মাতৃভাষাভিত্তিক একটা স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের জন্ম সম্ভব হয়েছে। ফলে রাষ্ট্র হিসেবে সংস্কৃতিকেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে, এ বিষয়ক গবেষণা ও চর্চার পথ সুগম করা আমাদের দায়িত্ব ছিলো।
অন্য অনেক জায়গার মতো এখানেও আমরা ব্যর্থ হয়েছি বলেই তুই যে মিসকনসেপশন বা না বোঝাবুঝির কথা বলছিস, সেগুলো সমাজে বিরাজমান।

মেউ : আমরা তাহলে বাংলাদেশে সংকটের সংস্কৃতি কীভাবে মোকাবেলা করতে পারি, ভবিষ্যতে?

শিমুল সালাহ্উদ্দিন: সংকট মোকাবেলার লড়াইটা তো চলমান রে। চলছে। অনেকে জীবন দিচ্ছে। এই যে ঠিক মত চলছে না, হচ্ছে না সেই সংকটের চর্চা, সংকট নিরসনের জন্য সবার আগে বুদ্ধিবৃত্তিক জাগরণ দরকার। এখন সেইটা চাইলেই তো হচ্ছে না। লড়াইটা শিল্পী সাহিত্যিক গবেষক সংস্কৃতিকর্মী সবার।
কোন কিছু তুই না বুঝলে, কি করিস? আগে বোঝার চেষ্টা করিস। জাতিগতভাবে আমার মনে হয় আমাদের সেই চেষ্টাটাই নাই। অন্তত দেড় দশকের শিল্প-সংস্কৃতি নিয়ে কাজ করার অভিজ্ঞতায় আমার এটাই মনে হয়।

মেউ : ভাই, অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। পরে এই বিষয়ে আরো বিস্তারিত আলাপ হবে আমাদের, সরাসরি। সাবধানে থাকবেন।

শিমুল সালাহ্উদ্দিন : অবশ্যই। তবে আমি পজিটিভিস্ট লোক রে। আমার মনে হয় বাংলাদেশ বদলাচ্ছে। সামাজিক, অর্থনৈতিক, প্রশাসনিক, সাংস্কৃতিক সব ক্ষেত্রেই। এবং এসব পরিবর্তন আসতেছে বিভিন্ন উদ্ভাবনী উদ্যোগ থেকে। মাঠ পর্যায়ের গবেষক, শিল্পী, সাহিত্যিক উদ্যোক্তারা এই দেশকে ভালোবেসে নানা উদ্ভাবন বাস্তবায়ন করতেছে। এসবই আশা, এই আর কী! নতুনরাই তো পরিবর্তনের নায়ক। তোদের দিকেই তাকায়া আছি। তোর জায়গা থেকে প্রচুর কর, ফোকলোর এর দারুণ শিক্ষার্থী গবেষক গড়ে তোল। সংকটের সংস্কৃতি থাকবে না।
তোরেও অনেক ধন্যবাদ।

ᐯᐱᐯᐱᐯᐱᐯᐱᐯᐱᐯᐱᐯᐱᐯᐱᐯᐱᐯᐱᐯᐱ

অন্যপ্রান্তের লেখক: শিমুল সালাহ্উদ্দিন। বাংলাদেশের কবি, সংস্কৃতিকর্মী ও গণমাধ্যম-ব্যক্তিত্ব। জন্ম ১৯৮৭ সাল, ঢাকায়। স্নাতকোত্তর (নৃবিজ্ঞান), জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। প্রকাশিত কবিতা বই: শিরস্ত্রাণগুলি (২০১০), সতীনের মোচড় (২০১২), কথাচুপকথা... (২০১৪), সংশয়সুর (২০১৬)।

ᐯᐱᐯᐱᐯᐱᐯᐱᐯᐱᐯᐱᐯᐱᐯᐱᐯᐱᐯᐱᐯᐱ

লেখক পরিচিতি:
মেহেদী উল্লাহ (জন্ম: ১৯৮৯ সাল)
মেহেদী উল্লাহ বাংলাদেশের কথাসাহিত্যিক। জন্মস্থান নোয়াখালীর সুবর্ণচর, বেড়ে ওঠা চাঁদপুরের কচুয়ায়। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা শেষে বর্তমানে জাতীয় কবি কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে ফোকলোর বিভাগে শিক্ষকতা করছেন। তিরোধানের মুসাবিদা (২০১৪) তাঁর প্রথম গল্পগ্রন্থ। তিরোধানের মুসাবিদা গ্রন্থের পান্ডুলিপির জন্য তিনি জেমকন তরুণ কথাসাহিত্য পুরস্কার-২০১৩ অর্জন করেন। প্রকাশিত অন্যান্য গল্পগ্রন্থ: রিসতা (২০১৫), ফারিয়া মুরগীর বাচ্চা গলা টিপে টিপে মারে (২০১৬), জ্বাজ্জলিমান জুদা (২০১৭), অনুমেয় উষ্ণ অনুরাগ (২০১৯)। প্রথম প্রকাশিত উপন্যাস: গোসলের পুকুরসমূহ (২০১৮)। প্রবন্ধ গ্রন্থসমূহ: ফোকলোরের প্রথম পাঠ (২০১৫), ফোকলোর তত্ত্বপ্রয়োগচরিত (২০২০), লোকছড়া: আখ্যানতত্ত্বের আলোকে (২০২০), নজরুল বিষয়ক সংকলন চর্চার ধরন (২০২০)

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ