bdtime

বঙ্গাব্দ ꘡

শফিক আশরাফের জানালা ꘡ আমাদের ভুটানযাত্রা ꘡ পর্ব-৩


শফিক আশরাফ গল্পকার, প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। সম্প্রতি প্রথম উপন্যাসের খসড়া করলেন। লেখার টেবিলে বসে উপন্যাস বা গল্প লেখার ফাঁকে ফাঁকে আখ্যান ফুঁড়ে আরও কত শত ভাবনারা বেরিয়ে আসে। ভাবনার আকাশে কল্পনার, অভিজ্ঞতার, আনন্দ-বিষাদের হাজারো ইমেজ উঁকি মারে, দোল খায়--ফের হারিয়েও যায়। টেবিলের ওপারে ছোট্ট জানালা দিয়ে সে আকাশ দেখা যায়। কত্ত বিশাল আকাশের খানিক মাত্র! সেখানে খেলা করে কত রঙ! কত তার রূপ!
প্রিয় পাঠক, চলুন, লেখকের মানসপটে ভেসে থাকা ওই জানালায় আমরাও চোখ রাখি ।
গতিপথ বাংলা ওয়েবজিনে ধারাবাহিক গদ্য শফিক আশরাফের জানালা  শুরু হয়েছে তাঁর ভ্রমণ পর্ব দিয়ে। প্রতি রবিবার নতুন পর্ব পাঠের আমন্ত্রণ।

আমাদের ভুটানযাত্রা: পর্ব-৩

ভারতের ইমিগ্রেশন পুলিশ আমাদের পাসপোর্ট চেক করে কাস্টমস অফিসে পাঠালো লাগেজ চেকিংয়ের জন্যে। ভারতের কাস্টমস অফিসার জিজ্ঞাসা করলো আপনার কাছে কি কোনো রুপি আছে? আর বাংলা টাকা কতো আছে? আমি খানিকটা সর্তক হলাম। সঙ্গে টাকা, ডলার থাকলে কিছু বলবে না কিন্তু রুপি নিয়ে ঢুকতে দেবে না। বললাম,
- না, কোন রুপি নেই, আর টাকার পরিমাণ উল্লেখ করলাম। আমরা আসলে ভারত হয়ে ভুটান যাবো। কাস্টমস অফিসার ভুটানের কথা শুনে, আর কোন কথা না বলে আমাদের ছেড়ে দিলো। ভারতের এপাশে মানিএকচেঞ্জার ও পারাপারে সহায়তাকারী আনোয়ারের লোক ছিল। তারা আমাদের পাসপোর্ট নিয়ে গেল ইমিগ্রেশনের কাজ করতে। বাংলাদেশ বর্ডারের ইমিগ্রেশন অংশে পাকা দালান, টাইলস বসানো মেঝে, আর ভারতের অংশে তালাইয়ের বেড়ার দুচালাঘর, কিন্তু পরিবেশটা বেশ শান্ত, স্নিগ্ধ। আমরা আনোয়ারের মানিএকচেঞ্জের ঘরে বসে অপেক্ষা করছি। আনোয়ার ছোট ছোট কাপে দুধ চা খাওয়ালো। ভারতে এই ছোটকাপে চা খেতে গেলে আমার হাসি পায়। এতছোট পিচ্চিকাপে ওরা চা খেয়ে কি মজা পায় কে জানে, আমার তো গলাই ভেজে না! আনোয়ারকে বললাম,
- জয়গাঁ বর্ডারের একটা ট্যাক্সি বা প্রাইভেট কার ভাড়া করে দেন, আমরা ভুটান যাবো। আর ভুটানে কি ইন্ডিয়ার রুপি চলে নাকি ভুটানি মুদ্রা নিয়ে যেতে হবে। আনোয়ার বললো,
- ইন্ডিয়ার রুপি, ভুটানি মুদ্রা দুটোই চলে সেখানে। এখান থেকে রুপি নিয়ে যান, সেটা ভালো হবে, এখানে রেটটাও ভালো পাবেন। আমি কিছু বাংলাদেশি টাকা রেখে বাকিটা ইন্ডিয়ান রুপি করে নিলাম। ইন্ডিয়ান ইমিগ্রেশনেও ফটো তুলে পাসপোর্টে এন্ট্রি সিল মারতে হয়। ইমিগ্রেশন থেকে আমাদের ডাক পড়াতে, সবাইকে নিয়ে সেখানে গেলাম। ইমিগ্রেশন কক্ষের বাইরে দু’জন ইমিগ্রেশন পুলিশ বসে আছে, পাশে চেইন দিয়ে বাঁধা একটা ছোট কুকুর। স্বনন কি দিয়ে কুকুটাকে খোঁচা মারাতে কুকুরটা এমন বিকট শব্দে ঘেউঘেউ করে উঠলো সকলে তটস্থ হয়ে সেদিকে তাকালাম। ইমিগ্রেশন পুলিশ কুকুরটাকে শান্ত করার চেষ্টা করছে আর স্বনন দৌড়ে এসে আমার পেছনে লুকালো। কুকুরের বিকট শব্দে সেও খানিকটা ভয় পেয়েছে। আমি তাকে আশ্বস্ত করলাম, ওটা শিকল দিয়ে বাঁধা, কিছু করতে পারবে না। আমাদের ইমিগ্রেশনের কাজ শেষ হলো। আনোয়ার ভাই বেশ সস্তায় একটা ট্যাক্সি ভাড়া করে দিয়েছে। জয়গাঁ বর্ডার পর্যন্ত মাত্র বারোশ রুপি ভাড়া।
আমরা চ্যাংড়াবান্দা বর্ডার থেকে জয়গাঁ যাচ্ছি। ভারতের এদিকের ল্যান্ডস্ক্যাপের সঙ্গে রংপুর-দিনাজপুরের ল্যান্ডস্ক্যাপের একটা মিল আছে। দুদিকেই বিস্তীর্ণ সমভূমি, মাঠের পর মাঠ বিভিন্ন শস্যক্ষেত্র। কোথাও কোথাও নদীবিধৌত অঞ্চল। তবে এপারের রাস্তাঘাট বেশ চওড়া আর গাড়িতে ঝাঁকি লাগে কম। ফরেস্টের পাশ দিয়ে যাওয়ার পথে জঙ্গলের কোন কোন অংশ দেখা যাচ্ছিল। আবার কোথাও কোথাও একেবারে চা বাগানের মাঝদিয়ে রাস্তা চলে গেছে। মাইলের পর মাইল চা বাগানের সবুজ পাতা সমৃদ্ধ এক সমান চা গাছ দেখার মতো দৃশ্য। আমরা সাধারণত পাহাড়ে চা চাষের দৃশ্য দেখে অভ্যস্ত কিন্তু সমভূমিতে চা বাগান সত্যি অপূর্ব! 
কখনো কখনো ঘুমে আমার চোখ খানিকটা লেগে আসছিল। তখন মনে হলো, আজ সকালেই সারা রাত জার্নি করে ঢাকা থেকে রংপুর এসে নেমেছি। এইসব দৃশ্যে আমার রাতজাগার ক্লান্তিও দূর হয়ে যাচ্ছে। যথারীতি আমি সামনের সিটে আর স্বনন আমার কোলে! পেছনে আইরিন ও বুনন বসেছে। আমাকে লক্ষ্য করে আইরিন এক দু’বার বললো:
- তুমি না হয় খানিকটা ঘুমিয়ে নাও। স্বননকে পেছনে আমার কাছে দাও। এ কথা শুনেই স্বনন আধো ঘুম থেকে জেগে উঠে বললো,
- না, আমি পেছনে যাবো না, আমি বাবার কাছেই থাকবো। আমি বললাম,
- থাকো বাবা, পেছনে যেতে হবে না, বরং তুমি ঘুমাও। আইরিনকে বললাম,
- এত সুন্দর দৃশ্য দেখে ঘুমাতে ইচ্ছে করে না, আবার ঘুমও পায়!
- হ্যাঁ, সত্যিই অপূর্ব। বলতে বলতে আমরা আরেকটা জঙ্গলের মাঝের রাস্তায় চলে আসলাম। হঠাৎ গাড়ি সজোরে ব্রেক কষে থেমে গেল। ড্রাইভার মুখে আঙ্গুল দিয়ে চুপ থাকতে বলে, সামনে ইঙ্গিত করলো। সামনে তাকিয়ে দেখি অদ্ভূত দৃশ্য! একদল বাইসন রাস্তা পার হচ্ছে। গলার কাছে লম্বা লম্বা লোম ঝুলে আছে। চোখা শিং, বাইসনগুলো বেশ ত্রস্তভারেই রাস্তা পার হচ্ছে। জীবনে প্রথম বন্য পশুদের এভাবে রাস্তা পার হতে দেখছি। স্বনন বুননকে জাগিয়ে তুলে দৃশ্য দেখালাম। স্বনন বিস্মিত হয়ে জানতে চাচ্ছে
- ওগুলো কী বাবা! আমি ফিসফিস করে বললাম,
- বাইসন।
- আমাদের বইয়ে ইয়াক আছে! এগুলো সেই ইয়াক বাবা?
- ওই ইয়াকের মতোই, ইয়াক আরো বড় হয়, এগুলো দেখছো কেমন ছোট! এগুলোও এক ধরণের জঙলি গরু বাবা।
বাইসনের দলটা বেশ মাঝারি ছিল। ১৫/২০টার মতো দল। বাইসনগুলো রাস্তা পার হওয়ার পর আমাদের যাত্রা আবার শুরু হলো। আমি এই কথা মনে করে কষ্ট পাচ্ছিলাম, আমাদের বাড়ির কাছেই মধুপুর ভাওয়ালের জঙ্গল। আমি অনেকবার সেই জঙ্গলে গিয়েছি। রাস্তার দুপাশেই কিছু গাছপালা দেখা যায়, ভেতরে ভেতরে গাছ কেটে ফাঁকা করে ফেলেছে। কোন পশু তো নেইই, আগে দু একটা বানর দেখা যেত এখন সেটাও কমে আসছে। অথচ এর আগে আমি লাটাগুড়ি ফরেস্টে অসংখ্য ময়ূরের নাচানাচি দেখেছি, শুনেছি বনমোরগের ডাক। পশ্চিমবঙ্গ সরকার এই ফরেস্টকে কেন্দ্র করে বিশাল একটা টুরিজম এলাকা গড়ে তুলেছে। প্রতি বছর দেশি-বিদেশি লক্ষ লক্ষ পর্যটক যায় জঙ্গল ভ্রমণে। জঙ্গলে যাওয়ার জন্যে আলাদা প্রায় শব্দহীন টুরিস্ট বহনের গাড়ি রয়েছে। আর আমরা জঙ্গল কেটে ফাঁকা করে ফেলছি।

আমরা দুপুর পার করে জয়গাঁর ভুটান বর্ডার পৌঁছালাম। এখানে এসে আবার ইন্ডিয়ার ইমিগ্রেশন অফিস থেকে পাসপোর্টে এক্সিট সিল নিতে হয়। এখানে ভীড় একেবারেই নেই। আমরা ছাড়া আর দু’জন আছে যারা ইমিগ্রেশন ফরম পূরণ করছে। এখান থেকে ইমিগ্রেশনের কাজ কমপ্লিট করে জয়গাঁতেই একটা রেস্টুরেন্টে ঢুকলাম দুপুরের আহারের জন্যে। ছোটখাট রেস্টুরেন্ট কিন্তু বেশ ভীড়। আমরা গোটা একটা টেবিল পেয়ে গেলাম। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রেস্টুরেন্ট। কয়েকজন বেয়ারা উর্দি পরে খাবার সার্ভ করছে। ইন্ডিয়ার থালি সিস্টেমে আহার। একটা চিকেন থাল, একটা মাটন থাল ও একটা এগ থাল অর্ডার করলাম। আমাদের উদ্দেশ্য আসলে সকল ধরনের খাবার টেস্ট করে দেখা। একটা থালের ভেতর বাটিতে খানিকটা সব্জি, একটাতে ডাল, একটাতে টক, একটাতে এগ বা চিকেন দিয়ে পরিবেশন করছে। থালের এক কোণায় ভাত ও তার উপর পাপড় ভাজি। এই হোটেলের রান্নাটা আমাদের কাছে দারুণ লাগলো। খাবারের পর বুনন, স্বনন বললো, তারা আইসক্রিম খাবে, ওদের ইচ্ছে দেখে আমাদেরও আইসক্রিম খাওয়ার ইচ্ছে হলো। আমুলের চারটা ম্যাঙ্গো আইসক্রিম নিলাম। আইসক্রিমটাও বেশ সুস্বাদু।
খাওয়া শেষে আমরা হাঁটতে হাঁটতে ভুটানের ফুলসিলিং চলে গেলাম। ভুটানের ফুলসিলিং ঢুকেই আমি ও আইরিন একসাথে ‘ওয়াও’ বলে উঠলাম। ভারতের জয়গাঁ অংশে ঘিঞ্জি, লোকজনের গ্যাদারিং, জায়গায় জায়গায় নোংরা কিন্তু এপাশেই একদম ঝকঝকে তকতকে। কোথাও কোন ময়লা বা নোংরা নেই। ঘরবাড়ির প্যাটার্নটাও ভারতের থেকে আলাদা। মানুষজনের ভীড়বাট্টা তেমন একটা নেই। দূরে মনোরম পাহাড় হাতছানি দিচ্ছে। অপরাহ্নবেলায় পাহাড়ের উপর সূর্যের সোনালী আভা দেখে আমাদের মনে হলো, দোজখ থেকে বেহেস্তের দরজায় এসে দাঁড়িয়েছি।

ভুটানের ইমিগ্রেশনের কাজ সম্পন্ন করতে করতে সন্ধ্যা পার হয়ে গেল। ফুলসিলিং বর্ডার থেকেই একটা ভুটানি মোবাইল সিমকার্ড কিনে আগে থেকেই বুকিং করে রাখা হোটেলে ফোন দিলাম। বাংলাদেশে বসেই বুকিং ডটকম থেকে ভুটানে হোটেল বুক দিয়ে রেখেছিলাম। ভুটানের ভিসার জন্যে হোটেল বুকিংয়ের কপি দেখাতে হয়। তরুণ মতো ইমিগ্রেশন অফিসার জিজ্ঞাসা করেছিলেন আমরা ভুটানে কয়দিন থাকবো? আমি সাত দিনের কথা বলায়, আমাদের সাত দিনের ভিসা দিয়েছে। ভিসা নেওয়ার পর মনে হলো, আরো কয়েকদিন বাড়িয়ে নিলে বোধহয় ভালো হতো। 

ফুলসিলিং থেকে থিম্পু পর্যন্ত রাতের ট্যাক্সিভাড়া খানিকটা বেশি। সময়ও লাগে বেশ, প্রায় পাঁচ ঘণ্টার জার্নি। সাড়ে তিনহাজার রুপিতে আমরা একটা ট্যাক্সি ঠিক করে ফেললাম। ভুটানি ড্রাইভার। বেশ সহজ সরল প্রশান্ত চেহারা। ভাঙা ভাঙা হিন্দি জানে, তবে ইংরেজিটা বেশ ভালো বলে। সাদা রঙের ঝকঝকে তকতকে সুমো গাড়িটাতে আমরা উঠে বসলাম। ড্রাইভারকে জিজ্ঞাসা করলাম, রাস্তায় বুনোহাতি বা অন্যকোন জন্তুজানোয়ারের ভয় আছে কি না? ড্রাইভার নিশ্চিত করলো সেটা খানিকটা থাকলেও খুব অসুবিধা নেই, তবে ফগিওয়েদার তাদের সমস্যার সৃষ্টি করে। রাস্তার কোথাও কোথাও মেঘ-কুয়াশায় ঢাকা থাকে তখন অনেক সাবধানে গাড়ি চালাতে হয়। যেতে যেতেই পাহাড়ের বাঁক, এক পাহাড় থেকে আরেক পাহাড়ে ওঠার উঁচু-নিচু খাদ টের পাচ্ছিলাম। ড্রাইভার আমাদের জিজ্ঞাসা করলো:
- আপনারা কোথায় কোথায় ঘুরবেন তার কোন প্যাকেজ ঠিক করেছেন? আমি বললাম,
- ‘আমাদের কোন প্যাকেজ নেই। যদি থিম্পু ভালো লাগে, হোটেলে শুয়ে সারাদিন আকাশ দেখবো, যদি ‘পারো’ ভালো লাগে সেখানে দুএকদিন থাকবো, আমাদের মতো ঘুরবো। তবে সাইটসিইং করার জন্যে আমাদের একটা গাড়ি লাগবে। তুমি যদি রাজি থাকো, আমরা যখন ডাকবো তখন চলে এসে বিভিন্ন স্পট দেখাবে।’ আমাদের পরিকল্পনা শুনে ড্রাইভার আমাদের বোঝার চেষ্টা করছে। সাধারণত অন্যান্য টুরিস্টরা ২/৪ দিনের জন্যে আসে সারাদিন হুড়মুড় করে বিভিন্ন স্পট দেখে বেড়ায়। ঐ চারদিনের চুক্তিতে গাড়ি রিজার্ভ করে। ফলে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দৌড়ের উপরে থেকে শ্রান্ত-ক্লান্ত হয়ে তারপর ফিরে যায়। আমরা সেটা করতে চাইনি। যদি মনে চায় সাইটসিইং করার জন্যে বেরিয়ে পড়বো, যদি কোনও পাহাড় ভালো লাগে তবে তার কোলে বসে সারাদিন কাটিয়ে দেব। ভুটানের সব কিছু দেখেই ফিরতে হবে তার কোন মানে নেই। ড্রাইভার তবুও বললো:
- তোমরা কয়দিনের জন্যে আমাকে রিজার্ভ করতে চাও। আমি বললাম,
- কোন দিনটিন না, যেদিন ডাকবো সেদিন সারাদিনের ভাড়া তোমাকে দেব। সারাদিনের জন্যে তোমাকে কত দিতে হবে বলো?
- তোমরা পারো, দোচালাপাস, পুনাখা জং যাবে তো?
- তা যেতে পারি, যদি মনে চায়। তোমার পার-ডে ভাড়া কত?
- ৩.৫ দিও প্রতিদিন।
- সাড়ে তিন হাজার রুপি বেশি হয়ে যায়, আমরা তোমাকে ২.৫ দেব। যদি রাজি থাকো ফোন নম্বর দাও, আমরা ডাকবো।
- এটা তো অফ সিজনের ভাড়া বললা!
- এখন তো পিক সিজনও না, পিক সিজনে ব্যবসা করে নিও, এখন এটাতেই রাজি হয়ে যাও। আমি একটা একটা বিচক্ষণ ভাব দেখিয়ে বললাম, তুমি জানো এই রেটে থিম্পুতে আমি গাড়ি পাবো।
আমার কথায় ড্রাইভার রাজি হয়ে গেল। ড্রাইভারের ফোন নম্বর রাখলাম। ওনার নাম, সুপো।
অন্ধকারে রাস্তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বোঝা যাচ্ছে না। কোথাও কোথাও মেঘ এসে রাস্তাটাকে আচ্ছন্ন করে রেখেছে। গাড়ি মেঘের ভেতর দিয়ে আস্তে আস্তে যাচ্ছে। গাড়ির হেড লাইটের আলোয় নিশ্চল ধবধবে সাদা মেঘ কেমন একটা ঘোর লাগা ভাব তৈরি করছে। গতকালের রাত জাগা ও সারাদিনের ক্লান্তিতে আমার দু’চোখ খানিকটা বুজে এসেছিল। স্বননও আমার কোলে ঘুমিয়ে পড়েছে। গাড়ির হালকা মৃদু ঝাঁকিতে বারেবারে ঘুমও ভেঙে যাচ্ছে। এ অবস্থার একবার ঘুম ভেঙে তাকিয়ে দেখি ঐ দূরে পাহাড়ের গায়ে গায়ে আলোর ঝর্নাধারা। মনে হচ্ছে, আকাশের তারাগুলো সব পাহাড়ে নেমে এসে মিটমিট করে জ্বলছে। কোথাও মালার মতো, কোথাও উঁচুনিচু আলোর ফোয়ারা। ঘুমভাঙা চোখে এক ভালোলাগায় মনটা ভরে গেল। বুঝলাম থিম্পুর কাছাকাছি চলে এসেছি। যাক শেষ পর্যন্ত আসতে পারলাম! রাত এগারোটাতেই থিম্পুর দোকানপাট সব বন্ধ। তবে রাতের আলোয়, পরিপাটি, ছিমছাম ও পরিচ্ছন্ন শহর দেখে ভালো লাগলো। সুপো হোটেলের ম্যানেজারের সঙ্গে ফোনে কথা বলে হোটেলে লোকেশন জেনে নিল।
একেবারে হোটেলের কাঁচঘেরা দরজার সামনে আমাদের গাড়ি থামলো।

[চলবে]




লেখক পরিচিতি:
শফিক আশরাফ (জন্ম: ৬ আগষ্ট ১৯৭১)
শফিক আশরাফ গল্পকার, প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট। জন্মস্থান টাঙ্গাইলের কালিহাতী থানার অন্তর্ভুক্ত সিঙ্গাইর গ্রামে। বর্তমানে রংপুরে বসবাস করেন। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে বিভিন্ন লিটলম্যাগে লেখালেখির শুরু। ২০০০ সালে তিনি ও বন্ধু কবি শামীম নওরোজ এবং ফারুক আকন্দ মিলে অন্যতম ছোটকাগজ ‘চিহ্ন’ প্রথম বের করেন। পরবর্তী সময়ে ‘চিহ্ন’ সম্পাদক এবং আরো পরে প্রখ্যাত সাহিত্যিক শিমুল মাহমুদ সম্পাদিত ছোটকাগজ ‘কারুজ’ এর সহযোগী সম্পাদক ছিলেন। ছোটকাগজ অন্বীক্ষা, লোকপত্র, মাটি, প্রকৃতি -তে তিনি নিয়মিত লিখেছেন।

তাঁর প্রথম প্রকাশিত গল্প ‘নহর আলীর মা’ (১৯৯৯)। দীর্ঘ সময়ে তিনি বেশকিছু গল্প লিখেছেন।চন্দন আনোয়ার সম্পাদিত গল্প পঞ্চাশৎ, রাশেদ রহমান সম্পাদিত এই সময়ের নির্বাচিত ছোটগল্প প্রভৃতি সংকলনে তাঁর গল্প প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া তাঁতি সম্প্রদায়কে নিয়ে তাঁর প্রথম উপন্যাস ‘পাউঠি’র খসড়া সম্প্রতি শেষ হয়েছে। প্রকাশিতব্য গল্পগ্রন্থ ‘পাগল অথবা প্রত্যাশিত মৃত্যু’।   

প্রকাশিত গবেষণাগ্রন্থ: বাংলাদেশের গ্রাম ভিত্তিক ছোটগল্পে জীবন, সমাজ ও সংস্কৃতি ১৯৪৭-২০০০ (প্রকাশকাল ২০১৩); প্রবন্ধ-গ্রন্থ: সিনেমা ও সাহিত্য প্রাসঙ্গিক পাঠ (২০২০)।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ