bdtime

বঙ্গাব্দ ꘡

কবীর রানার গল্প ꘡ পদ্মপুকুর


বাড়িগুলো তৈরি করার পর ছাদে এসে তারা আকাশ দেখার কৌশলটা বুঝতে চাইলো। 
সেউজগাড়ির নাগরিকরা এ সকল বহুতল ভবন তৈরি করার জন্য মরুভূমির পথে পথে, মরুভূমির বালিতে বালিতে কতো অসংখ্যবার সন্তানদের মাথার জন্য, স্ত্রীদের মাথার জন্য, নিজেদের মাথার জন্য ছায়া সন্ধান করেছে। তাদের সবার যৌবন, যৌবনের গান বাড়ি তৈরির জন্য মরুভূমিতে ব্যয় করে সেউজগাড়িতে বাড়ি নির্মাণ হলে, ছায়া নির্মাণ হলে তারা নিজেদের ছায়া বেয়ে বেয়ে ছায়ার মাথায়, ছাদের মাথায় এসে দাঁড়ায়। ছায়ার মাথায় মাথায় দাঁড়িয়ে তারা তাদের শরীরের দিকে তাকায়। শরীরের ভেতর কতো সব ছায়া। এ সকল ছায়া তাদেরকে গতি দেয়। তারা মরুভূমিতে পরিশ্রম করেছে ভ্রমণ করেছে সে সকল ছায়ার মায়ায়। শৈশবের দিকে, কৈশোরের দিকে একবার চোখ যায়। কেউ কেউ কিশোর, মাঠে মাঠে বল। বল নিয়ে কতো কতো মাঠ পাড়ি দেওয়া হলো। তারপর বল গড়তে গড়তে মাঠ শেষ হয়। তারপর তারা তরুণ। ঠোঁটে যমুনা পাড়ের বাঁশি। তারপর বাঁশি ছেড়ে মরুভূমিতে যাওয়া হয় ছায়া আহরণে। ছায়া আহরিত হলে ছায়ার মাথায়, ছাদের মাথায় দাঁড়িয়ে এখন তারা চাইলো শিখতে আকাশ দেখার কৌশল। এতো বড় বড় ভবন নির্মাণের পর যদি তারা আকাশ দেখার কৌশল না জানে তবে তো তাদের নিজস্ব ভবন নির্মাণ বিপুল অপচয়। আকাশ দেখার কৌশল খুঁজে না পেলে ছায়ার মাথা থেকে তারা কীভাবে নামবে? তারা সঠিক কৌশল না জানলে ভুল কৌশলে যায়, যেহেতু তাদেরকে যে কোনো রূপে নামতে হবে ছায়ার মাথা থেকে।
তারা বলে, আকাশে আলো- আলো উদিত হও, অস্ত যাও;
তারা বলে, আকাশে অন্ধকার- অন্ধকার উদিত হও, অস্ত যাও;
তারা বলে, আলো, তুমি আকাশের যাদু;
তারা বলে, অন্ধকার, তুমি আকাশের যাদু।
আলো অন্ধকার যদি তাদের জীবনেরও যাদু হয় তবে তারা ভুলভাবে ভুল কৌশলের ছায়ার মাথা থেকে, ছাদের মাথা থেকে নামে।

এতো বড় বড় ভবন তৈরি তো এমনি এমনি নয়, তা বিনিয়োগ। তাদের এই চিন্তা মাথার ভেতর সারাক্ষণ থাকে যে মানুষ যা কিছু করে সেসব কিছু বিনিয়োগ। তারা ভালোবাসা থেকে শুরু করে সন্তান জন্ম দেওয়া সকল কিছুকে বিনিয়োগ জ্ঞান করে। যেহেতু সকল বিনিয়োগ থেকে কিছু লাভ আসে তারা ভবনগুলোর দিকে সেভাবে তাকায়। যদি বিনিয়োগ, তবে সেউজগাড়ির এ সব ভবনের মালিকেরা তাদের ভবনের অতিরিক্ত অ্যাপার্টমেন্টগুলো ভাড়া দিতে চায়। তারা ভবনগুলোর জানালায়, দেয়ালে টাঙিয়ে দেয় ‘ভাড়া দেওয়া হবে’ বিজ্ঞাপন। নিচে থাকে তাদের মোবাইল ফোন নাম্বার। তাদের মোবাইল ফোনে কল আসে। তারা বাড়ির বর্ণনা দেয়। বাড়ির ভেতরের সকল সুবিধা ও আরামের বর্ণনা দেয়। তাদের অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া হয় না। সেউজগাড়ির দৈনিক পত্রিকায় তারা তাদের ভবনের অ্যাপার্টমেন্টগুলো ভাড়া দেবার বিজ্ঞাপন দেয়। কি চমৎকার সে সকল বিজ্ঞাপন! সেউজগাড়ির কবিদের লেখা সে সকল বিজ্ঞাপন। সেউজগাড়ির কবিরা বেশ কিছুদিন যাবৎ বিজ্ঞাপন লেখা পেশা ও নেশা হিসাবে নিলে সেউজগাড়ির বিজ্ঞাপন শিল্প সোনালী সময় পার করতে থাকে। এ সকল বিজ্ঞাপনে কেউ সাড়া না দিলেও ভবন মালিকদের নিজেদেরই ইচ্ছা হয় এ সকল ভবনের অ্যাপার্টমেন্টগুলো তারা ভাড়া নিবে। কিন্তু নিজেদের ভবন তারা নিজেরা কীভাবে ভাড়া নেবে!

তারা একদিন মিটিং করে তাদের ভবন গুলো কেনো ভাড়া হচ্ছে না সে বিষয়ে। তারা দেশী জ্ঞানে, বিদেশী জ্ঞানে, পুস্তক জ্ঞানে, পুস্তক বহির্ভূত জ্ঞানে জানার চেষ্টা করে ভাড়া না হওয়ার কারণ। তারা দেখে এ শহরের অন্যান্য সকল মহল্লার সকল ভবনের অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া হয়। অথচ সেসকল অ্যাপার্টমেন্ট সেউজগাড়ির অ্যাপার্টমেন্ট গুলোর চেয়ে অনেক খারাপ। তাদের একজন, যে নগর ব্যবস্থাপনা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছিলো, কথা বলে। সে অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া না হওয়ার কারণ জানায়। সে জানায়, তাদের মহল্লার নর্দমা ব্যবস্থা ভালো নয়। যারা এ মহল্লার নর্দমা উন্নয়নের কথা বলে ভোট চেয়েছিলো তারা নর্দমা বিষয়ে কোনো অবদান রাখেনি। আর এতো হাজারবার ঠিক যে মানুষ তো নর্দমা প্রিয় একটা প্রাণী। তার শরীরের সকল আবর্জনা সে ভালো নর্দমা দিয়ে দূরে পাঠাতে চায়। শহরের অন্যান্য মহল্লার নর্দমাগুলোকে কি চমৎকার ভাবেই না করতোয়া নদীর সঙ্গে সংযোগ সাধন করা হয়েছে। নগর ব্যবস্থাপনা বিজ্ঞানী আরো জানান, তাদের সেউজগাড়িতে যে তেত্রিশটা জমির প্লট ছিলো তার ভেতর তেইশটাতে ভবন নির্মাণ হলেও বাকি দশটাতে এখনো ভবন নির্মাণ হয়নি। সে দশটা প্লটে অন্যান্য ভবনের সকল নোংরা পানি ও আবর্জনা জমা হয়।
তাদের ভেতর একজন ছিলো উদ্ভিদবিজ্ঞানী। তারও পরামর্শ থাকে। সে উপদেশে যায়। তার উপদেশে সেউজগাড়িকে একটা স্বাধীন দেশ মনে হয়। শহরের অন্যান্য মহল্লা থেকে পৃথক মনে হয়।
সে জানায়, সেউজগাড়ির প্রাকৃতিক ও মানবিক পরিবেশের উন্নতি না হলে তাদের ভবনসমূহ ভাড়া হবে না। আর ভবনসমূহের অ্যাপার্টমেন্টসমূহ ভাড়া না হলে তাদের বিপুল বিনিয়োগ ব্যর্থ হয়ে যাবে।
সে আরও পরামর্শ দেয়, যে দশটা প্লট এখন জলাভূমি, জঞ্জালভূমি তা পরিষ্কার করে সেখানে জলজ ফুল চাষ করা যেতে পারে। যেহেতু মানুষ ফুল ভালোবাসে, মানুষ এখানে আসবে ফুলের টানে, মানুষ ভাড়া নেবে এখানকার অ্যাপার্টমেন্ট।
তার প্রস্তাবে মতামত দিতে বাকীরা একটু সময় নেয়। তারা নানা জায়গায় ফিরে যায় সে সময়টুকুতে, মনে মনে। তারা জন্মদিনে ফুলচর্চা করে। ফুল কি মানুষের আয়ু বাড়ায়, ফুল কি মানুষের সম্পর্ক বাড়ায়। ফুল ছেঁড়ার কথাও মনে আসে কারো কারো।
একজন ভাবে, একবার তো একজন অচেনা মেয়েকে সে ফুল ভেবেছিলো। সেই মেয়েকে ফুল দেবার ভাবনা ভাবা হয়েছিলো। একবার কিংবা বারবার অচেনা মেয়েকে ফুল ভেবে ফুল দেবার কথা ভাবা হয়েছিলো।
তাদের একজন ড্রাইভার ছিলো মরুভূমির দেশে। সে তো ফুল পরিবহন করতো ট্রাকে করে। মরুভূমির লোক কতো যে ফুল ভালোবাসে তা তার মনে আসে।
তাদের আরেকজনের ফুলের গন্ধে ঘুম আসে না একলা জেগে রই-- গানটির বা কবিতাটির কথা মনে পড়ে।

ফুল চিন্তায় তারা অনেকক্ষন স্তব্ধ থাকে। তবে ফুল নিজের শরীরে দীর্ঘক্ষণ গন্ধ বা সুবাস ধরে না রাখতে পারলে তারা কথায় ফিরে আসে, আলোচনায় ফিরে আসে। তারা একমত হয়-- হয় যে, এই নীচু পানিপূর্ণ প্লটগুলিতে ফুলের চাষ করে এলাকার সৌন্দর্য বাড়িয়ে ভাড়াটেদের আকৃষ্ট করতে সমর্থ হবে। তাদের সামনে উদাহরণ হয় কতো কতো দূরের জায়গা, জলের জায়গা, ফুলের জায়গা। পানির ভেতর সকল ফুল জীবিত না থাকতে পারলে তারা ভাবে সেই সকল ফুলের কথা, যেগুলো জলের গৌরব, জলের খাদ্য গ্রহণ করে রূপ ছড়ায়, অহংকার ছড়ায়। এই চিন্তায় তারা উদ্দীপ্ত হয়, অনুপ্রাণিত হয়, ভবিষ্যত হয়। তারা দেখে ফুল পৃথিবীর সবচেয়ে অহংকারী চুম্বক।
তারা অবশেষে নানা রঙ, নানা গন্ধ বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেয় পদ্মফুলের চাষ হবে এ জলাভূমিতে।

একজনের বিদ্যালয় জীবনের ব্যাকরণ মনে পড়ে। হয়তো তা সমাস। হয়তো তা সন্ধি। ব্যাকরণ মানুষের কতোদিনই বা খেয়াল থাকে। সে বলে পদ্মের আরেক নাম পংকজ। পংকে জন্মে যা। পংকজ নাম তারা গ্রহণ করে না। কারণ সে নামের ভেতর পংক আছে, কাদা আছে। সিদ্ধান্ত গৃহিত হয় তারা এ জলাভূমিতে পদ্ম ফুলের চাষ করবে এ মহল্লার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বাড়াবার জন্য। আর তারা ভাবে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বাড়লে, বাড়বে মানবিক সৌন্দর্য। তারা এ মহল্লাকে এ পদ্মফুলের চাষের মাধ্যমে করে তুলবে আকর্ষণীয় ও দৃষ্টিনন্দন।

শহর থেকে কিছু দূরে তখনও কিছু গ্রাম জীবিত থাকলে, সে সকল গ্রামে কিছু বিল জীবিত থাকলে, সে সকল বিলে কিছু পদ্মফুল ভাসমান থাকলে তারা সে সকল বিলে যায় পদ্মফুল সংগ্রহে। পদ্মফুলের কাছে ফড়িং, প্রজাপতি, বক, সাপ, ব্যাঙ থাকতে চাইলে তারা তাদের কাছেও যায় তাদেরকে তাদের মহল্লায় আনার জন্য। গ্রামের শ্রম আর শ্রমিক সঙ্গে এলে সেউজগাড়ির ঐ দশটা জলাভূমি রূপান্তরিত হয়ে যায় পদ্মফুলের বাগানে। পদ্মফুলের দশটা জলজ বাগান তাদের মহল্লাকে সৌন্দর্যে, গন্ধে, রূপে ভরিয়ে দিলে তারা এতো আনন্দ রাখবে কোথায়। তাদের স্ত্রীগণ, যারা বহুদিন মরুভূমির খেজুরের গল্প শুনেছিলো, উটের গলার ঘন্টার গল্প শুনেছিলো, গরম বালিতে মাছ ভেজে খাবার গল্প শুনেছিলো, তারা এবার সেসব বিদেশী গল্প ভুলে যায়। তারা বলে তাদের জলজ গল্প পৃথিবীর সেরা গল্প। তারা এখন গল্পকে ভাগ করে দুভাগে। মরুভূমির গল্প আর জলজ গল্প।
তারা জলজ গল্প বলতে শুরু করলে তাদের ছেলেরা- মেয়েরা জানায়,
- মা, দেখো আজ দশটা নতুন ফুল নতুন রং তৈরি করেছে।
- মা, আজ দশটা নতুন ফুল নতুন গন্ধ দিচ্ছে।
- মা, আজ দেখো, ফুলের পাশে নতুন বক এসেছে।
- মা, আজ ফুলের পাশে নতুন ফড়িং এসেছে।
- নতুন প্রজাপতি কি মনোরম শান্ত উড়াল তৈরি করেছে।

সেউজগাড়িবাসীরা চেয়েছিলো তাদের ভবনের অ্যাপার্টমেন্টগুলো ভাড়া হোক। আর তার জন্য কতো পথচলা, কতো বিবেচনা, কতো ফুল ফোটানো। ভাড়া দেবার জন্য এতো ফুল ফোটানো হলে তারা ভাবে পৃথিবীতে মানুষ নিজস্ব ভবন ভাড়া দেবার জন্য কতোভাবেই না ফুল ফোটায়। এবার তারা দেখে, তাদের মহল্লায় বাইরে থেকে লোক আসা শুরু করেছে। তারা খেয়াল করে, এ শহরের ও এ শহরের বাইরে থেকে শতশত লোক আসছে তাদের পদ্মফুলের বাগান দেখতে। তারা অ্যাপার্টমেন্টগুলো ভাড়া নিচ্ছে না কিন্তু সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সেউজগাড়ির পদ্মফুলের জলজ বাগানের সৌন্দর্য উপভোগ করছে।

তবে তাদের লাভ কোথায়, তাদের কেউ একজন বললো, আমরা পদ্মফুল বিনা টাকায় না দেখতে দিয়ে টাকা নিতে পারি। তারা তাদের পুরো সেউজগাড়ি মহল্লাটিকে দশ ফুট উঁচু দেয়াল ও দেয়ালের উপর কাঁটাতার দিয়ে ঘিরে দিয়ে চারপাশে চারটা প্রবেশ দ্বার রাখে। তারা ঠিক করে চার গেটে টিকেটের ব্যবস্থা থাকবে প্রবেশের জন্য, পদ্মফুল দর্শনের জন্য। টিকেট ব্যবস্থা চালু হলেও দর্শনার্থীদের সংখ্যা কমে না। সেউজগাড়ি ভবন মালিকেরা উচ্ছসিত হয় পদ্মফুল দেখানো টাকা পেয়ে। তারা খুব বিস্মিত যে পদ্মফুল বাগান ভাড়া দিয়েও এতো টাকা, এতো লাভ। তারা আগে বোঝেনি পদ্মফুল, যা কিনা পংকে বা কাদায় জন্মায়, তার সৌন্দর্যের প্রতি মানুষের এতো টান, এতো আগ্রহ। তাদের ভেতর একজন কবি ছিলো যে কি-না পদ্মফুল নিয়ে কবিতা রচনা করা শুরু করে। তার পদ্মফুল বিষয়ক কবিতার বই বের হলে দর্শনার্থীরা, সে কবিতার বই খুব কেনে। পদ্মফুল বিষয়ক খবর ছাপানোর জন্য সেউজগাড়ি থেকে বের হয় একটা দৈনিক পত্রিকা, যার নাম হয়, “দৈনিক পদ্মফুল”। এ পত্রিকায় প্রতিদিন পদ্মফুল বিষয়ক খবর ছাড়াও সেউজগাড়ির নানা বিষয় নিয়ে খবর ছাপা হয়।

ফুল তো দূরে যায়, ফুল সব সময় সুদূরের পিয়াসী হলে পদ্মফুলের গল্প, গন্ধ অচেনা দূরে যায়। অচেনা দূর থেকে লোকেরা পিকনিক করতে আসে, দেখতে আসে, গন্ধ নিতে আসে সেউজগাড়ির পদ্মফুলের। সেউজগাড়ি ভবন মালিকদের আয় আরো বেড়ে যায় পদ্মফুল দর্শনার্থীদের টিকেট থেকে প্রাপ্ত টাকায়। আয় আরো আরো বাড়ে এভাবে যে এসব দর্শনার্থীদের কেউ কেউ এতো দূর থেকে আসে যে তাদের কেউ কেউ সেউজগাড়িতে দু’এক রাত থেকে যেতে চায়। তারা তখন ঐ সকল অ্যাপার্টমেন্টগুলো, যেগুলো ভাড়া দিতে চেয়েছিলো ভাড়াটে পরিবারকে, এখন হোটেল রূম হিসাবে ভাড়া দেয় ঐ সকল দর্শনার্থীদেরকে। এরপর দিনের পর দিন দর্শনার্থীদের সংখ্যা বাড়লে তাদের ভবনের সকল অ্যাপার্টমেন্ট হোটেলকক্ষ হিসাবে ভাড়া হয়ে যায়। সেউজগাড়ির ভবনের মালিকেরা তাদের আনন্দ প্রকাশ করে “দৈনিক পদ্মফুল” পত্রিকার মাধ্যমে। সেখানে সফলতার এক বছর পূর্তিতে ক্রোড়পত্রও বের করে।
তারা ব্যাংকে যায়, বাজারে যায়। তারা দেখে তাদের ব্যাংক খুব চমৎকার পদ্মফুলের মতো। তাদের বাজার খুব চমৎকার পদ্মফুলের মতো। তারা শহরের অন্যান্য মহল্লার ভবন মালিকদের ভাড়া দেওয়া অ্যাপার্টমেন্টগুলোর আয়ের সঙ্গে নিজেদের আয় মিলিয়ে দেখে। কি আশ্চর্য! তাদের আয় অন্যান্য মহল্লার ভবন মালিকদের চেয়ে কয়েকগুন বেশি।

আবার মিটিং। দীর্ঘদিন পর মিটিং করে একে অন্যকে জানাচ্ছে যদি তারা নিজস্ব অ্যাপার্টমেন্টে সেউজগাড়িতে থাকে তবে তাদের আয় কম হবে। তাদের এখানে পরিবার নিয়ে বসবাস করা ক্ষতি। যেহেতু এখন সেউজগাড়ি সবচেয়ে ব্যস্ত ও জনপ্রিয় টুরিস্ট স্পট তাই তারা যদি তাদের বসবাসরত অ্যাপার্টমেন্টগুলো ছেড়ে অন্য কোথাও অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া নিয়ে থাকে আর এ অ্যাপার্টমেন্টগুলো হোটেল কক্ষ হিসাবে ভাড়া দেয় তবে তা লাভজনক। তবে কেনো তারা নিজেদের ক্ষতি করবে। আয়ের প্রতিটি মুদ্রা কেমন মধুর।

সেউজগাড়ির তারা, তাদের নিজেদের বসবাসরত অ্যাপার্টমেন্টগুলো হোটেল রুম হিসাবে ভাড়া দিয়ে শহরের অন্যান্য মহল্লায় কম টাকায় অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া নিয়ে বাস করতে শুরু করে। তারা সেউজগাড়ি ছেড়ে যাবার পর তাদের একজন জানায়, তার ষোলো বছরের একটি মেয়ে সেউজগাড়ি ছেড়ে তাদের সঙ্গে আসেনি। সেউজগাড়ির কোনো হোটেল কক্ষেই রয়ে গেছে সে। তার নাম ছিলো পদ্মাবতী। আর পানি পান করার সময় পদ্মাবতীর মা দেখে পানির গ্লাসের ভেতর হারানো পদ্মাবর্তীর ছায়া। কি করে পান করবে সে পানি!


লেখক পরিচিতি: কবীর রানা গল্পকার। জন্ম ১৯৬৮ সালে, কুষ্টিয়া। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন শেষে সরকারী কলেজে অধ্যাপনা করেন। সাহিত্যের ছোটকাগজ দিয়ে লেখালেখির শুরু। সম্প্রতি একটি উপন্যাসের খসড়া শেষ করেছেন। তাঁর প্রথম প্রকাশিত গল্প- জল আসে মানুষের দীঘিতে (চিহ্ন, ২০০৮)। প্রথম প্রকাশিত গল্পগ্রন্থ: জল আসে মানুষের দীঘিতে (২০১২)। প্রকাশিত অন্যান্য গল্পগ্রন্থ: মানচিত্রকর (২০১৪), আমাদের গ্রামে একটা পাখিচোর আছে (২০১৬), বিড়াল পোষা প্রতিবেশীনিরা (২০১৮), কোথায় কোথায় ঘুমিয়েছিলাম (২০২০)।       




একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

1 মন্তব্যসমূহ

  1. কবীর রানার গল্প পাঠ মা‌নে নতুন অ‌ভিজ্ঞতার ভেতর দি‌য়ে যাত্রা। রূপক এবং চিত্রক‌ল্পের সমবায়ী তর‌ঙ্গে তাঁর গল্প অগ্রসর হয় এক অনাস্বা‌দিত জগ‌তের দি‌কে।
    অ‌ভিনন্দন কবীর রানা‌।

    উত্তরমুছুন