bdtime

বঙ্গাব্দ ꘡

উত্তর-আধুনিক উপন্যাস ও বর্ণনাকারীর ঐতিহ্য ꘡ সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম


উপন্যাসে বর্ণনাকারীর ভূমিকাটি অবধারিতভাবে কেন্দ্রীয় । এই বর্ণনাকারী সর্বজ্ঞ এবং অন্তর্যামী হতে পারে, উত্তমপুরুষ হতে পারে; কিন্তু কাহিনির চলিষ্ণুতা নিশ্চিত করে তার আখ্যান। ঔপন্যাসিক নিজে অধিকার করে নিতে পারেন অন্তর্যামীর স্থানটি; অথবা সর্বজ্ঞ বর্ণনাকারীর যেটুকু ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ অর্থাৎ আখ্যানের ঘটনাবহির্ভূত reflective অংশটুকু, ঔপন্যাসিক নিজের কর্তৃত্বে রেখে দিতে পারেন। তবে হয়তাে এমন চোরাগােপ্তা উপায়ে যে, পাঠক সন্দেহ করবে না ঔপন্যাসিক সশরীরে কোথাও আছেন বরং আখ্যানের বৈচিত্র্যে এবং ব্যাপ্তিতে তার এমন ধারণা হতে পারে যেন ঘটনার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত কিছু অতিরিক্ত বিষয় ওই ঘটনার প্রয়ােজনেই তাকে দেখতে হচ্ছে, অনুভব করতে হচ্ছে, অনুধাবন করতে হচ্ছে। বাস্তববাদী উপন্যাসে, যা আঠারাে শতকে ইংরেজি উপন্যাসের সূচনালগ্নেই নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে নেয়, সর্বজ্ঞ বর্ণনাকারীকে একদিকে কাহিনির ধারাবর্ণনা দিতে দেখা যায়, অন্যদিকে লেখকের নানা ভাবনাচিন্তা, এমনকি মতবাদকেও নিজের আখ্যানে স্থান দিয়ে একটি জমজমাট গল্পের অবতারণা করতে দেখা  যায়। বর্ণনাকারী বাস্তবের মাপজোক, তার মাত্রা ও অনুপাত কোনাে বৈকল্য ছাড়াই তুলে আনেন : সামাজিক সত্যগুলিকে নিরাভরণ প্রকাশ করেন এবং চরিত্রগুলিকে জীবনঘনিষ্ঠ ও বাস্তবানুগ করে উপস্থাপন করেন। তাতে পাঠকের এই আশ্বাস জন্মে যে, যে কাহিনি তার সামনে উন্মােচিত হচ্ছে, তা সত্য না হলেও সত্যের অনুরূপ হয়ে উঠছে, এবং যে চরিত্রদের সে দেখতে পাচ্ছে, তারা অপরিচিত নয় এবং যে সত্য তার সামনে ধরা দিচ্ছে, তা অভিজ্ঞতার অতিরিক্ত কিছু নয়। সর্বজ্ঞ বর্ণনাকারী তার ফিকশনকে বৈধতা দেন পাঠকের সামনে একটি বিকল্প কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে, অর্থাৎ পাঠক যা অনুভব করে, যাকে সত্য অথবা সম্ভাব্য বলে ভাবে – অথচ যা কোনাে একক ব্যক্তি একত্রে অথবা সামূহিকভাবে নিজের অভিজ্ঞতায় ধারণ করতে অপারগ, অর্থাৎ যা বহু মানুষের অভিজ্ঞতায় স্থাপিত, তা যখন একজন। বর্ণনাকারীর আখ্যানে কেন্দ্রিকতা পায়, সেই কেন্দ্রীয় উপস্থিতিকে সে তখন বৈধ কর্তৃত্ব বলে মেনে নেয়। উপন্যাসের শুরুতে এই যে সর্বজ্ঞ বর্ণনাকারীর উত্থান, তার সঙ্গে কাহিনি বা গল্প কাঠামাের প্রয়ােজন ছাড়াও আরাে দুটো বিষয় জড়িত। প্রথমত, সর্বজ্ঞ বর্ণনাকারী ওই কর্তৃত্বের আভাস দেন, যা জীবনে মানুষ কামনা করে অথচ যার দেখা পাওয়া যায় না, মিশেল ফুকো যাকে বলেছেন সাধারণের ক্ষমতা-মুগ্ধতা। সেই মুগ্ধতার একটি প্রকাশ এখানে দেখা যায়, যা ভিন্ন ভিন্ন অথবা খণ্ডিত জিনিসগুলিকে একত্র করবে, একটা আকৃতি দিয়ে একটা কেন্দ্রিকতা দেবে। সর্বজ্ঞ বর্ণনাকারীর বয়ানে সেই কর্তৃত্বের প্রকাশ দেখা যায় যা ঈশ্বরতুল্য : এবং কে না জানে মানুষ অন্তর্যামীর উৎপ্রেক্ষাকে কতটা গুরুত্বপূর্ণ ভাবে জীবনে – এতটা যে, অন্তর্যামীকে কখনাে মানুষকে খুঁজে নিতে হয় না, মানুষই তাকে বরাবর খুঁজে নিয়েছে। ফ্রয়েড বলেন, মানুষের সকল গােপন কামনা ও কামনার পেছনে থাকে একটি উদগ্র আকাক্ষা - কেউ যাতে তা দেখতে পায়, তার আকাঙ্ক্ষা। অন্তর্যামীর চোখের জন্য তােলা থাকে মানুষের কামনা-বাসনার অন্তঃপুর । দ্বিতীয়ত, সর্বজ্ঞ বর্ণনাকারী একটি বাস্তবসম্মত চিত্র দিতে পারে মানুষের ঘটনাবহুল জীবনের। কোনটা রাখা হবে, কোনটা ফেলা যাবে : বস্তুর ডিমেনশন, তার অনুপাত এসব প্রশ্নাতীতভাবে নিষ্পন্ন করতে পারেন ওই বর্ণনাকারী। আমরা লক্ষ করি, একটি অবাস্তব পদ্ধতিকে আঁকড়ে ধরে বাস্তববাদী উপন্যাস অগ্রসর হয়েছে। সর্বজ্ঞ বর্ণনাকারী আসলেই যে অবাস্তব একটি প্রতিপাদ্য, তার ঈশ্বরসদৃশ ক্ষমতা যে নিতান্ত আরােপিত/কল্পিত, এটি বুঝতে কারাে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। অথচ, ওই অবাস্তব উপায়টির মধ্য দিয়েই বাস্তববাদী উপন্যাস সৃষ্টি করেছে অভিজ্ঞতা স্বীকৃত ঘটনা, চরিত্র, বিষয়-আশয় ।
উত্তমপুরুষ বর্ণনা সে তুলনায় একটু সীমিত-- উত্তমপুরুষের চারণক্ষেত্র ব্যক্তির নিজস্ব গণ্ডিতে। উত্তমপুরুষের পক্ষে দ্বিতীয় কোনাে চরিত্রের মনােজগতে প্রবেশ সম্ভব নয়, অথচ একক কোনাে চরিত্রের একান্ত জগতে দৃষ্টি আবদ্ধ রাখলে শুধু ওই চরিত্রই পরিপূর্ণভাবে বিকশিত হয়, বৈধতা পায়, কিন্তু অন্য কোনাে চরিত্র সেরকম নানাবিধ মাত্রায় বিকশিত হতে পারে না, অর্থাৎ হওয়ার সম্ভাবনাটি সামান্য। কিন্তু কার্যত দেখা যায়, উত্তমপুরুষ বর্ণনাতেও ভিন্ন চরিত্রের উপস্থাপনা একটি হেত্বাভাসকে ভিত্তি করে হতে থাকে। হেত্বাভাসটি, সর্বজ্ঞ বর্ণনাকারী উপন্যাসের হেত্বাভাসের মতােই, জটিল। যদি বর্ণনাকারী উত্তমপুরুষ হয় তবে তার আখ্যান শুধু তার নিজের মনােজগতের নানা অলিগলির সন্ধান দিতে পারে, অন্যের মানসে তার প্রবেশাধিকার থাকার কথা নয়। অথচ এরকম উপন্যাসের একটি অতিব্যবহৃত পদ্ধতি হচ্ছে অন্য চরিত্রের মনােলােকে নানা উপায়ে প্রবেশ করে, তার রূপটি উন্মােচিত করা। হয়তাে দ্বিতীয় চরিত্রটি, কিছু সময়ের জন্য, উত্তমপুরুষে পরিণত হয়, হয়তাে উত্তমপুরুষ অনুমানভিত্তিক বর্ণনা দিতে যাবে দ্বিতীয় চরিত্রের : কিন্তু প্রায়শ দেখা যায়, উত্তমপুরুষ বর্ণনাকারী, নিজের অজান্তে, দ্বিতীয় চরিত্রের ভেতরে ঢুকে যাচ্ছে; এবং শুধু অনুমানভিত্তিক নয়, একেবারে প্রকৃত বর্ণনা দিয়ে যাচ্ছে তার একান্ত চিন্তাভাবনার। এই হেত্বাভাসকে বলা হয় Extension Fallacy অর্থাৎ প্রথমজন দ্বিতীয়জনের ভেতরে প্রলম্বিত হচ্ছে, প্রবিষ্ট হচ্ছে, যদিও এটি ঘটলে প্রথমজনের অস্তিত্ব নিয়ে আমাদের সন্দেহ হয়, মনে হয়, হয়তাে সর্বজ্ঞ বর্ণনাকারীরই কোনাে খণ্ডিত রূপ সে। সর্বজ্ঞ বর্ণনাকারী অবশ্য অনেক সময় অনেকগুলি চরিত্রকে আলাদা আলাদা উত্তমপুরুষের বর্ণনায় নিয়ে আসতে পারেন। অথবা এ কাজটি সরাসরি ঔপন্যাসিক করতে পারেন। যেভাবেই হােক, শুদ্ধ উত্তমপুরুষের বর্ণনা বিরল । উত্তমপুরুষের সঙ্গে মিশে গেলে ঔপন্যাসিক এক অশুদ্ধতার, অর্থাৎ উপর্যুক্ত হেত্বাভাসের শিকার হন। সর্বজ্ঞ বর্ণনাকারীর রেওয়াজটি সে জন্য কাটিয়ে ওঠা মুশকিল, যদিও এ পদ্ধতিটি তুলনামূলকভাবে বেশি সুবিধাজনক।

যেভাবেই কাহিনি বর্ণিত হােক উপন্যাসে-ছােটগল্পে, অনেকগুলি অসংগতি/হেত্বাভাস/বিরােধ তাতে উৎপাদিত হয় অনিবার্যভাবে। মােটা দাগে, তাদের আমরা শনাক্ত করতে পারি নিচের শ্রেণিবিভাগে :

  • ক.  প্রধান অসংগতিটি আসে সর্বজ্ঞ বর্ণনাকারী থেকে। কে ওই বর্ণনাকারী? তিনি কি ঈশ্বর? যদি প্রতিটি চরিত্রের মনের খবর তার জানা থাকে, তাহলে তার বর্ণনারই বা কী প্রয়ােজন -- পরিণতি তাে তার জানা।
  • খ. যদি লেখক হন সেই বর্ণনাকারী -- কারণ লেখক এক্ষেত্রে স্রষ্টা, এবং অন্তর্যামী – তাহলে একটি নিতান্ত সংকীর্ণ অনুবিশ্বেই উপন্যাসটি স্থাপিত হয়, কারণ সেখানে অন্তর্যামী একজন সামাজিক মানুষ। যদি তাই হয়, তাহলে উপন্যাসটি বাস্তবানুগ হয় কীভাবে? মানুষ কি অন্তর্যামীর স্থান নিতে পারে? 
  • গ. উত্তমপুরুষ বর্ণনায় এই বিরােধটির কোনাে সুরাহা হয় না। যদি আখ্যান একজন মানুষেরই হবে সেখানে ভিন্ন মানুষের একান্ত চিন্তাভাবনাগুলি কীভাবে দেখানাে যায়? যদি ভিন্ন মানুষের অন্তর্লোক উদ্ভাসিতই হয়, তাহলে উত্তমপুরুষ বর্ণনাকারী তাে পরিণত হন নিম-সর্বজ্ঞ বর্ণনাকারীতে। আর যদি ভিন্ন মানুষের প্রসঙ্গ শুধু referent হিসেবে আসে তাহলে কাহিনি শিগগিরই থমকে দাড়ায়, যদি না প্রচণ্ড তীব্রতা নিয়ে ওই কাহিনিকে বর্ণনা করতে পারেন ঔপন্যাসিক তাঁর নির্বাচিত ‘আমি’র বয়ানে।। 
  • ঘ. যেহেতু উপন্যাসের কাহিনি বর্ণনায় গ্রহণ-বর্জনের একটি ব্যাপার আছে, বিন্যাসের একটি প্রয়ােজন আছে, সেহেতু কোনাে উপন্যাসই আসলে বাস্তবানুগ বা বাস্তববাদী বলে নিজেকে দাবি করতে পারে না। উপন্যাসে বড়জোর বাস্তবের একটি বিভ্রম সৃষ্টি করা যায়, কিন্তু সেটি অতিশয় নিয়ন্ত্রিত বাস্তব।
  • ঙ. উপন্যাসে ওই বিষয়টি অবহেলা করা হয়েছে, অন্তত বাস্তববাদী উপন্যাসে, এবং চেতনাপ্রবাহের উপন্যাসের উদ্ভবের আগে, যে, মানুষের অন্তর্লোকে সময়ের অনুভবটি কিছুতেই ঘড়ির কাঁটাকে নির্ভর করে হয় না : সেখানে সময় নিতান্তই আপেক্ষিক, স্থিতিস্থাপক। যেখানে এরকম একটি মৌলিক বিষয়ে অবহেলা পরিলক্ষিত হয়, সেখানে বাস্তবানুগ কথাটি বিশ্বস্ততা হারায়।
  • চ. সর্বোপরি, উপন্যাসের ভাষা যদি নিজস্ব সাংকেতিক সম্ভাবনা-- যাকে উমবার্তো ইকো বলেন semantic possibilities – তৈরি করতে চায়, যা প্রতিটি উপন্যাসে একটি অঘােষিত উদ্দেশ্যরূপে থেকেই যায়, তাহলে বর্ণনাকারীর সীমাবদ্ধ ফ্রেমে ভাষাকে আটকে দিলে তার সম্ভাবনা অনেকটাই তিরােহিত হয়। বর্ণনাকারীর নির্দিষ্ট আখ্যানটি যে সংকেত সম্ভাবনা সৃষ্টি করবে, তাতে একটি গন্তব্যেই তাকে ধাবিত করা যাবে : একাধিক গন্তব্যের জন্য একাধিক ভাষা-তল প্রয়ােজন, একাধিক কণ্ঠস্বর প্রয়ােজন। অথচ উপন্যাসকে এই সীমাবদ্ধতা মেনে নিয়েই সংকেত-বিশ্ব নির্মাণের চেষ্টা চালিয়ে যেতে হয়েছে।


চেতনাপ্রবাহের উপন্যাস ছিল এইসব অসংগতি বিরােধের বিপরীতে কিছু নতুন সম্ভাবনা নির্মাণের প্রচেষ্টা। এই ধারার উপন্যাস, যার সফল প্রবর্তক হিসেবে আমরা তিনজন ঔপন্যাসিকের নাম সর্বাগ্রে উল্লেখ করতে চাই -- জেমস জয়েস, ভার্জিনিয়া উলফ ও ডরােথি রিচার্ডসন, বর্ণনাকারীর খুব একটা উনিশ-বিশ করতে পারেনি। সর্বজ্ঞ ও উত্তমপুরুষ বর্ণনাকারীরাই রয়ে গেছে আখ্যান বর্ণনার দায়িত্বে, যদিও যে নির্দিষ্ট ছকে বাস্তববাদী উপন্যাস তাদের হাজির করত, তাতে ব্যাপক অদল-বদল হয়েছে। সবজান্তা/সর্বগামী/সর্বদর্শীর একটি আত্মবিশ্বাস থাকে, যা প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত একটি কাহিনিকে একটি ছকে ফেলে উপস্থাপিত করতে তাকে অনুপ্রাণিত করে। ছকটি এই প্রকার : শুরুতেই শেষ দেখা যাচ্ছে বলে ধারণা করে নিলে বর্ণনাকারীর একটি ক্ষমতা জন্মায় অথবা ওই ক্ষমতাটি নিয়েই সে আবির্ভূত হয়, কাজেই মানুষের ঘটনাগুলিকে ওই শেষের লক্ষ্যে পরিচালিত করার জন্য শুরু-মধ্য-শেষের সরলরেখায় কাহিনি বিন্যস্ত হয়; কাহিনির ভেতরের বিভিন্ন উপাদানের আন্তঃসম্পর্ক, সময়ক্রম, আপেক্ষিক গুরুত্ব এবং অনুপাত সুনির্দিষ্ট থাকে। এই ছকটি অগ্রসরমানতাকে নিশ্চিত করে, কিন্তু তা জীবনের প্রধান একটি উপকরণ-- আগে থেকে অনুমান করতে না পারাটা অথাৎ unpredictability-কে অস্বীকার করে, তা স্থিতিস্থাপক করা মছে। চেতনাপ্রবাহের উপন্যাস বর্ণনার ধারাবাহিকতাকে অবহেলা করেছে , সু-সংযুক্ত ঘটনাসমষ্টিকে খণ্ডিত করে ইচ্ছেমতাে সাজিয়েছে, এবং বর্ণনাকারী থেকে চরিত্রকে অনেকটা স্বাধীনতা দিয়েছে (এর কারণটি একটু পরেই ব্যাখ্যা করা হবে এবং আখ্যান বর্ণনা ও আখ্যান, এমনকি প্রতি-আখ্যান নির্মাণের মধ্যকার প্রভেদটির এভাবে নিষ্পত্তি হবে)। কিন্তু চেতনাপ্রবাহের উপন্যাসের বড় অবস্থানটি ছিল কাহিনিকে সরলরৈখিক বিস্তার থেকে মুক্তি দেওয়াতে। আমরা যদি সময়কে সরলরৈখিক অর্থাৎ ক্রমানুগ বলে মনে করি তাহলে ঘড়ির সময়কেই আমরা  প্রধান বলে বিবেচনা করব; মানুষের মনের ভেতর সময়ের যে একটি ভিন্ন অনুভব, ভিন্ন প্রকাশ আছে, তাকেই অস্বীকার করব। কিন্তু মনস্তাত্তিক সময়কে অস্বীকার করবে কে? দেখা যাচ্ছে প্রচলিত উপন্যাসে সর্বজ্ঞ বর্ণনাকারী একদিকে অন্তর্যামীর দায়িত্ব পালন করছেন, অর্থাৎ মনের আনাচে-কানাচে আলো ফেলে বের করে নিয়ে আসছেন চরিত্রের লুকোনাে চিন্তা, গােপন বাসনা এবং নির্জন অনুভবের খতিয়ান, অথচ তার ভেতরে সময় যে ভিন্ন মাত্রায় উন্মোচিত সে খবর পুরােপুরি চেপে যাচ্ছেন। এই বিরােধ থেকে উপন্যাসকে মুক্তি দিলেন জয়েস ও তাঁর সহযাত্রীরা। তাঁরা মনকে দেখলেন একটি চলমান নদীর মতাে, যার জলে – যেমন হেরাক্লিটাস বলেছিলেন – কেউ দুবার পা ফেলে না। ওই নদী যেমন চলমান, তেমনি unpredictable একটি মুহূর্ত, মানুষের ওই নদীসদৃশ চেতনালােকে এক মুহূর্ত ব্যাপ্তি পায় এক যুগের, একটি যুগ সংকুচিত হয়ে এসে দাঁড়ায় একটি মুহূর্তে। এভাবে সময়কে একটি পুরােপুরি ‘স্বাধীন অনিবার্যতা’ দিলেন ওইসব ঔপন্যাসিক, দিলেন স্থিতিস্থাপকতা, অনেকগুলি মাত্রা। এবং এভাবেই তাঁরা চরিত্রকে কিছুটা নিষ্কৃতি দিলেন বর্ণনাকারীর শক্তিশালী নিয়ন্ত্রণ থেকে। কারণ, দেখা গেল, মনস্তাত্ত্বিক সময়ের অনির্দিষ্ট প্রবাহে চরিত্র যখন ভেসে যায়, সে নিজেই জানে না তার ভেতর পরমুহূর্তে জন্ম নেবে কী ভাব, কী অনুভূতি। তার চিন্তার সূত্রটি এতটা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে ঘড়ির সময়ের বন্ধন থেকে, যে তার দিনকালের খণ্ডমুহূর্তের কোনাে হিসাব তার দেওয়ার থাকে না, কোনাে আপেক্ষিক গুরুত্ব থাকে না ঘটনাগুলির; কোনাে আন্তঃসম্পর্কও কাজ করে না দুটি ঘটনার বা ব্যক্তির মধ্যে। দেখা যায়, এক সম্পূর্ণ নতুন বিন্যাসে ফেলছি আমরা ঘটনাকে, চরিত্রকে, চরিত্রের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া, চিন্তাচেতনাকে।

চেতনাপ্রবাহের উপন্যাসের সফল প্রয়ােগ যাঁরা করেছেন -- বাংলা উপন্যাসে সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহকে আমি ওই দলে অন্তর্ভুক্ত করতে চাই – তাঁরা আখ্যান বর্ণনা ও আখ্যান নির্মাণের মধ্যে একটি প্রভেদও নির্ণয় করে গেছেন। সুনির্মিত, প্রচলিত উপন্যাসে আখ্যান বর্ণনাটি ছিল প্রধান কাজ। আখ্যান বা narration ছিল বর্ণনাকারীকেন্দ্রিক : প্রায়শই যে ঔপন্যাসিকের মুখপাত্র হিসেবে কাজ করত। সেখানে স্থান পেত সমাজচিন্তা, বৈশ্বিক ভাবনা, দর্শন এবং ইতিহাস, ব্যক্তির নানা সমস্যা, তার বিচ্ছিন্নতা, তার প্রেম অথবা বেদনা । কিন্তু আখ্যানটি বর্ণিত হতাে, বর্ণনাকে সাহায্য করত ঔপন্যাসিকের দৃষ্টিভঙ্গি। তার একটি প্রচ্ছন্ন নিয়ন্ত্রণ, বাস্তবতার অন্যান্য অনুষঙ্গের সঙ্গে যুক্ত হয়ে, নির্মাণ করত একটি ক্রমানুগ  আখ্যান, যা বিশ্বাসযােগ্য। কিন্তু ওই আখ্যানটি চরিত্রের নিজস্ব কোনাে ভিন্ন আখ্যানে সংস্থাপিত হতে পারত না।অর্থাৎ প্রধান আখ্যানটি ছিল নির্দিষ্ট, পর্যাপ্ত। কিন্তু চেতনাপ্রবাহের উপন্যাসে দেখা গেল ব্যক্তির যত গভীরে--তার অবচেতনের সবচেয়ে দুর্গম অঞ্চলটিতেও -- যখন প্রবেশ করার চেষ্টা হচ্ছে তত অনিবার্য হয়ে উঠেছে ব্যক্তির নিজস্ব আখ্যানটি।কথাটি একটু বুঝিয়ে বলা প্রয়ােজন। ধরা যাক, একটি উপন্যাসে, যেমন কাঁদো নদী কাঁদোতে একটি নদীর গল্প, অথবা একটি জনজীবনের কিছু খণ্ড ঘটনার বর্ণনা দেওয়া হচ্ছে, যার মধ্য দিয়ে একটি আখ্যান তৈরি হচ্ছে মানুষের জীবনের। নদীকে যদি জীবনের উৎপ্রেক্ষা রূপে দেখি, তাহলে সেখানে প্রধান আখ্যানটি, যেটি বর্ণিত হচ্ছে, সেটি ওই জীবনের, ওই জনপদের কিছু সংঘাতের, বিপদের এমনকি পরাবাস্তব অভিঘাতের। কিন্তু সর্বজ্ঞ বর্ণনাকারী যত চরিত্রদের ভেতরে দৃষ্টি দিতে থাকেন, আমরা দেখি অনেকগুলি অতিরিক্ত আখ্যান (অবশ্য একসময় এরা অতিরিক্ত থাকে না, মূল আখ্যানের সম্পূরক/পরিপূরক রূপে আত্মপ্রকাশ করে) জন্ম নিচ্ছে। মােস্তফার গল্পটি যেন নিজস্ব একটি অনিবার্যতায় বড় হতে থাকে। আমরা আবিষ্কার করি, তার নাম যে মােস্তফা, তার মায়ের নাম যে আমিনা -- এ যােগাযােগটি কাকতালীয় নয়; কোথাও একটি সংযােগ যেন আছে (এবং এ সংযােগ সূত্রটি আরাে দীর্ঘ হয়) যা ভিন্ন একটি মাত্রায় কাহিনিকে বিন্যস্ত করে। ওয়ালীউল্লাহ কি লিখছিলেন কোনাে আখ্যান যাতে ধর্মীয় ঐতিহ্য উঁকি দেয়, অথবা কোনাে সংবেদী বা religious allegory? তাঁর মােস্তফা প্রকৃতপক্ষে কে? এসব প্রশ্নের উত্তর প্রধান আখ্যানটি দেয় না; সেটি এসব বিষয়ে নীরব থাকে। কিন্তু আমরা জানি, এদের গূঢ় অর্থ আছে। একসময় ওহ অর্থের সন্নিকটবর্তী হতে থাকি আমরা। কিন্তু কীভাবে? ওই বিকল্প/অতিরিক্ত/সম্পূরক আখ্যান বর্ণনার মধ্য দিয়ে। কিন্তু যেহেতু ওই আখ্যানটি বর্ণিত হয় না প্রধান আখ্যানটির মতাে, বরং নির্মিত হয় তার রূপক বা প্রতীক/উৎপ্রেক্ষা অথবা সংকেতময়তার মধ্য দিয়ে, বলা যায়, বিকল্প আখ্যানটি তৈরি হয় প্রধান আখ্যানের বিপরীতে।

ওই আখ্যান নির্মাণের বিষয় থেকে আসে প্রতি-আখ্যান নির্মাণের সম্ভাবনাটি। উত্তর-উপনিবেশী সাহিত্যতত্ত্বে ওই প্রতি-আখ্যান বা counter-discourse কথাটি গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। প্রতি-আখ্যানের অর্থ হচ্ছে প্রধান আখ্যানের মূল উপজীব্য বা তার বিরুদ্ধে একটি বিপরীত আ্যখান নির্মাণ করা। রােকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের সুলতানার স্বপ্ন  নামে যে ইংরেজি উপন্যাসিকাটি আছে, তাতে একটি কাল্পনিক দেশে একজন ভারতীয় নারীর মুক্তির স্বাদ গ্রহণ, তার স্বপ্নের মধ্য দিয়ে, হচ্ছে প্রধান বিষয়বস্তু।এটিই মুখ্য--অর্থাৎ নারীভূমি'তে সুলতানার ভ্রমণের বর্ণনা। কিন্তু ওই প্রধান আখ্যান বর্ণনার বিপরীতে অন্তত একটি প্রতি-আখ্যান তৈরি হয়, সেটি হচ্ছে পরাধীনতার বিরুদ্ধে সার্বিক একটি প্রতিবাদ, এবং সেখানে বিটিশের বিরুদ্ধে ভারতীয়দের স্বাধীনতাসংগ্রামের বিষয়টিও অন্তর্ভুক্ত হয়। প্রতি-আখ্যান প্রধানত তৈরি হয় ওই প্রতিবাদের মধ্য দিয়ে। অবশ্য প্রতিবাদ সামাজিক না হয়ে অন্যরকমও হতে পারে। আলবেয়ার ক্যামুর দি আউটসাইডার  উপন্যাসে প্রতি-আখ্যানটি অনস্তিত্বের বিরুদ্ধে অস্তিত্বের ঘােষণার মধ্য দিয়ে নির্মিত হয়, অথচ ওই প্রতিবাদটি নিতান্ত নমিতভাবে অস্তিত্ববাদী বিভ্রম এবং পরাবাস্তবী কুহকের মধ্য দিয়ে নিমগ্নতার স্পর্শে মুকুলিত হয়। তবে বর্ণনাকারীর সবচেয়ে বেশি রূপান্তর ঘটেছে উত্তর-আধুনিক উপন্যাসে, মেটাফিকশনে। উত্তর-আধুনিক উপন্যাস যে কোনাে ভঙ্গি গ্রহণকেই সন্দেহ করে, যে-কোনাে আরােপিত গাম্ভীর্য, seriousness-কেই তাচ্ছিল্য করে। বর্ণনাকারীর ভঙ্গিটি যেহেতু একটি ‘গৃহীত’ ভঙ্গি – এটি বর্ণনার বা গল্প কাঠামাের প্রয়ােজনেই গৃহীত হয়ে থাকে, তাকে পূতপবিত্র বলে মেনে নিতে অস্বীকার করে উত্তর-আধুনিক উপন্যাস। কিন্তু উপন্যাসের আদি সীমাবদ্ধতা – বলা যায় এর একটি প্রধান উৎপাদন শর্ত হচ্ছে বর্ণনাকারীর ব্যবহার। কাজেই একে কীভাবে অবহেলা করা যায়? উত্তর-আধুনিক উপন্যাস বর্ণনাকারীকে গ্রহণ করল বটে, কিন্তু তার একটি প্রিয় পদ্ধতি ব্যবহার করে তাকে নতুন মাত্রা দিল । প্রিয় পদ্ধতিটির নাম subversion বা অন্তর্ঘাত। উত্তর-আধুনিক উপন্যাস শেষ পর্যন্ত আমাদের এরকম একটি ধারণা দেয় যে সবই আপেক্ষিক : সবই নির্ভর করে ব্যক্তির ওপর, সূত্রবদ্ধ নয় কিছুই এবং গৃহীত কোনাে ভঙ্গি আরােপিত কোনাে চিন্তা বিপক্ষে যায় ব্যক্তির মৌল স্বাধীনতার । এই বিশ্বাসগুলি যেখানে অর্জিত হতে দেওয়া হয় না, অথবা অর্জনের পথে থাকে প্রচুর বাধা, যেমন প্রচলিত আখ্যান চিন্তায়, সেখানে অন্তর্ঘাত হচ্ছে মোক্ষম অস্ত্র। এবং অন্তর্ঘাত উত্তর-আধুনিক উপন্যাসের আত্মতৃপ্তি, আত্মদর এবং আত্মকেন্দ্রিকতার একটি প্রকাশ, এর কৌতুকপ্রিয়তার ও লঘুতা অন্বেষণের একটি নিমিত্ত। উত্তর-আধুনিক উপন্যাসে সর্বজ্ঞ বর্ণনাকারী থাকেন বটে, কিন্তু তাকে প্রায়শই অনেকের মধ্যে ব্যাপ্ত করে দেওয়া হয়। একের জায়গায় আসে অনেক, অনেকের কণ্ঠ। দেখা যায়, একজন বর্ণনাকারীকে সরিয়ে দিয়ে বহুবাচনিক একটি উপস্থিতি অধিকার করে নিল আখ্যান : অথবা তৃতীয় কোনাে পুরুষের জন্য তুলে দেওয়া হলাে আখ্যান। তার ওপর, ক্রমাগত বর্ণনাকারীকে অনিশ্চয়তা এবং অস্থিরতার মধ্যে ফেলে এমন একটা অবস্থার সৃষ্টি করা হলাে, যাতে বর্ণনাকারীর বিশ্বাসযােগ্যতা, তার ফুকো বর্ণিত ‘ক্ষমতা', তার অন্তর্যামিতা, তার ঈশ্বরসদৃশ কেন্দ্রিকতা তিরােহিত হলাে। ওইভাবে যখন আখ্যানের কেন্দ্রিকতা বিনষ্ট হয়, কেন্দ্রিক কক্ষপথ থেকে আখ্যানচ্যুত হয় তার বর্ণনাকারী, আমাদের প্রত্যেকের এক একটি নিজস্ব আখ্যান নির্মাণের তাগিদ দেখা দেয়। টলেমির বৈশ্বিক দর্শন থেকে যেরকম পৃথক এবং বিরুদ্ধ ছিল কোপার্নিকাস ও গ্যালিলিওর বৈশ্বিক চিন্তা, তথা কেন্দ্রিকতার তত্ত্ব, উত্তর-আধুনিক উপন্যাসের আখ্যান বর্ণনাও ততটা বৈপ্লবিক, ততটা পৃথক।

বর্ণনাকারীর আরােপিত অবস্থানটি যখন টলে যায়, তাকে উঠে দাঁড়াতে হয়, আর দশজনের সঙ্গে মিশে যেতে হয়, তখন তার আখ্যানটিকে গ্রহণ করতে আমাদের বাধা থাকে না। কারণ সে আখ্যান আমাদের নিজেদের আখ্যানে পরিণত হয়। উত্তর-আধুনিক উপন্যাস আত্মবিশ্লেষী এবং আত্মসমালােচক বলে ‘গৃহীত’ ও ‘অর্পিত’ বিষয়গুলি এভাবেই অন্তর্ঘাতে সম্পন্ন হয়।
উত্তর-আধুনিক উপন্যাস-ছােটগল্প বর্ণনাকারীর ভূমিকাকে আরাে স্থিতিস্থাপক, আরাে জটিল করেছে বিভিন্ন সাহিত্য শ্রেণি বা genre-এর একটি সংশ্লেষণ তৈরি করে। বাস্তববাদী সাহিত্য genre-ভিত্তিক। সেখানে একটি বিয়ােগান্তক কাহিনি হাস্যরসকে জায়গা দেবে না, ইতিহাস-গল্পে ঢােকানাে যাবে না পরাবাস্তবকে, রােমান্স রচনায় গােয়েন্দা উপাখ্যান পাওয়া যাবে না। কিন্তু উত্তরাধুনিক উপন্যাসে এই বিভাজন নেই। মার্কিন ঔপন্যাসিক টমাস পিঞ্চনের দ্য ক্রাইং অফ লট ৪৯-এ genre আছে কম করে হলেও পাঁচটি (অ্যাডভেঞ্চার গল্প, কুরিয়ার সার্ভিসের ইতিহাস, শিল্পায়নের সমাজতত্ত্ব ইত্যাদি)। টান টান গল্প-- অথবা গল্পসকল, কিন্তু বর্ণনাকারীর রূপ ক্ষণে ক্ষণে বদলায়। বদলায়, কারণ একেক গল্পে তার একেক চেহারা, সে চেহারা কখনো দৃশ্যমান, কখনাে অদৃশ্য। তাছাড়া, উত্তরাধুনিক সাহিত্যে কৌতুক, আত্মবীক্ষণ, জোড়াতালির প্রতি দুর্বলতা, বহুবাচনিকতা – এসব থাকায় বর্ণনাকারীও হয়ে দাঁড়ান অনুমান-অসম্ভব, unpredictable. এজন্য এই সময়ে এসে ফিকশন লেখাটা যেমন হয়ে দাড়িয়েছে একটা চ্যালেঞ্জের বিষয়, যাতে অবশ্য উপভােগ করার বিষয়টি গুরুত্ব পায়, সেই ফিকশন পড়াটাও।

(ফেব্রুয়ারি, ১৯৯৪); ‘লেখাজোখার কারখানাতে’ থেকে  সংকলিত

লেখক পরিচিতি:
সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম (জন্ম ১৮ জানু,১৯৫১)
সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বাংলাদেশের অন্যতম প্রাবন্ধিক, সমালোচক, কথাসাহিত্যিক, অনুবাদক ও অধ্যাপক। জন্মস্থান সিলেট এবং ঢাকা ও কানাডার কুইন্স বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি সাহিত্যে পড়াশোনা শেষে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেছেন। বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় সমাজ, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও শিল্প বিষয়ে অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ লিখেছেন।সত্তরের দশক থেকেই তিনি নিয়মিত লিখতে শুরু করেন। বিশ্বসাহিত্য বিষয়ে লেখা পাক্ষিক কলাম ‘অলস দিনের হাওয়া’ আশির দশকে বিপুল পাঠকপ্রিয়তা পায়। সত্তরের দশকে গল্প লিখতে শুরু করেই বিরতি নেন। দীর্ঘ বিরতির পর নব্বই দশকে এসে আবারও গল্প লিখতে শুরু করেন। ‘প্রেম ও প্রার্থনা (২০০৫)’ তাঁর উল্লেখযোগ্য গল্পগ্রন্থ। উল্লেখযোগ্য উপন্যাস: আধখানা মানুষ (২০০৬)। নন্দনতত্ত্ব (১৯৮৬) তাঁর উল্লেখযোগ্য প্রবন্ধগ্রন্থ।  ১৯৯৬ সালে তিনি বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার অর্জন করেন। সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য ‍তিনি  বাংলাদেশ সরকারের একুশে পদক পেয়েছেন।




একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ