bdtime

বঙ্গাব্দ ꘡

খালি কি ফুটেজ খাবেন, 'নিজের' সিনেমাটা বানাবেন না? --রুদ্র আরিফ

করোনা মহামারীর অস্থির সময়ে গত মে-জুন মাসে কথাসাহিত্যিক মেহেদী উল্লাহ তাঁর ফেসবুক টাইমলাইনে সমসময়ের কবি, কথাসাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবীগণের সাথে 'হাফ এন আওয়ার চ্যাটিং এবাউট কালচার' (Half an hour chatting about culture) শিরোনামে প্রায় প্রতিদিনই চিন্তামূলক আলাপসমূহ প্রকাশ করেছিলেন, যা সে সময়ে ব্যাপক সাড়া ফেলে। গতিপথ বাংলা ওয়েবজিনের আলাপ-সিরিজে প্রতি রবিবার মেহেদী উল্লাহ’র হাফ এন আওয়ার চ্যাটিং এবাউট কালচার এর একটি করে পর্ব প্রকাশিত হচ্ছে।

আলাপ সিরিজ : মেহেদী উল্লাহ’র হাফ এন আওয়ার চ্যাটিং এবাউট কালচার পর্ব-১৬


মেহেদী উল্লাহ’র টাইমলাইন: শুক্রবার, ২৯ মে ২০২০; রাত ০৯ টা ৪৮ মিনিট 

আজ থাকছেন কবি, অনুবাদক ও চলচ্চিত্র বিশেষজ্ঞ রুদ্র আরিফ (Rudra Arif)। সংস্কৃতি নিয়ে কথা হলো তাঁর সঙ্গে—

মেহেদী উল্লাহ : একজন সুস্থ মানুষের সপ্তাহে কয়টা ফিল্ম দেখা উচিত? নাকি সুস্থতার সাথে এর কোনো সম্পর্ক নাই? আছে ইচ্ছার সাথে আর ফিল্মের সাথে সম্পর্ক রাখব কিনা—তার ওপর?

রুদ্র আরিফ : সিনেমা বা ফিল্ম বলতে আমরা যা বুঝি, একজন সুস্থ মানুষ জীবনেও একটা সিনেমা না দেখলেও অসুবিধা নাই, মনে করি। যেমন, একটা কবিতা না পড়লে, একটা পেইন্টিং না দেখলেও...। ধরেন, আকাশটাই তো সিনেমার পর্দা, বাতাসটাই তো কবিতা হইতে পারে কারও কাছে।

মানে, শারীরিক বা মানসিক সুস্থতার সঙ্গে সিনেমা দেখা না-দেখার বাধ্যগত সম্পর্ক নাই মনে হয়। ওইটা ইচ্ছা বা অভ্যাসের ব্যাপার।

মেউ : তা পারে! কিন্তু সিনেমাটা শেষমেস ইন্ডাস্ট্রি, মেলা পয়সা আর মানুষের কারবার। একটা ইউনিটের এক-দেড়শ লোক হলের হাজার হাজার লোকের জন্য খাটে। আকাশ-বাতাস দেখতে, খাইতে তো পয়সা লাগে না। তবে দুই পর্যায়ের সাথেই মানুষের মানসিক স্বাস্থ্য জড়িত।

আপনি তো মনে হয় দেখা অভ্যাস করে ফেলছেন। সপ্তাহে কয়টা দেখেন!

রুদ্র আরিফ : সিনেমা যখন বা যেক্ষেত্রে ইন্ডাস্ট্রি, সেই প্রসঙ্গে আমার বোঝাপড়া নাই। সিনেমা যখন কবিতা পড়ার/লেখার মতো, চুমু খাওয়ার মতো একান্ত অনুভূতি বিনিময়ের মাধ্যম, সেইটা আমি চিনি৷ কবিতা লেখা/পড়া বা চুমু খাওয়া তো অনেকটা 'বেগ আসলে আবেগে' ঘটে যাওয়ার জিনিস। ফলে 'বেগ' যে কখন, কত ঘন-ঘন বা দীর্ঘ বিচ্ছেদ শেষে আসে... 😁

মেউ : হ্যাঁ, সিনেমা আর্ট এন্ড ইন্ডাস্ট্রির ব্যাপার, দুইই 'শিল্প'! সপ্তাহে কয়টা সিনেমা দেখেন এখন?

রুদ্র আরিফ : ওই যে, কোনোদিনই ওইভাবে দেখি নাই। দেখা যায়, টানা ২-৩-৪টা রাত সিনেমা দেখি, আবার ২-৩ মাসে একটাও না। তবে সিনেমা নিয়ে ঘাটাঘাটি মূলত নিয়মিতই চলে।

মেউ : আচ্ছা, কিন্তু আপনার সিনেমা নিয়ে কাজকর্ম দেখে আমার মনে হয়েছিল, সপ্তাহে নিয়ম করেই দেখেন বুঝি!

'সিনেমা ঘাটাঘাটি' আর 'সিনেমা দেখা'— এক সিনেমায় দুইটারই প্রয়োজন হয় কখন? যেমন ধরেন, কিম কি দ্যুকের 'আরিরাং', ওটায় দেখার ও বড় ধরনের ঘাটাঘাটির ব্যাপার আছে। এমন কোন কোন সিনেমায় হয়েছে?

রুদ্র আরিফ : সিনেমা নিয়ে ঘাটাঘাটি বলতে, যে লোকটা/লোকগুলো সিনেমা বানান (মূলত ফিল্মমেকার), তার ভাবনার ভেতর ঢুকে যাওয়ার চেষ্টায়, তার সঙ্গে সঙ্গে বোঝাপড়া করার আগ্রহ থেকে নানা বইপত্র, অনলাইনে তার ইন্টারভিউ, তাকে নিয়ে লেখা গদ্য... ইত্যাদি পড়া। আর বেশি টানলে, পড়তে পড়তে বাংলা করে ফেলা।

হইছে কি, এত এত টাস্কি খাওয়া কাজ কাজকারবার দুনিয়াভর্তি করে গেছেন ওস্তাদ ফিল্মমেকারেরা, ঘাটতে গেলেও খাবি খাওয়া লাগে। সেক্ষেত্রে যখন কোনো ওস্তাদরে ফিক্সড করি, তার সঙ্গেই বোঝাপড়া করব, তখন মূলত তারে নিয়েই পড়ে থাকি টানা অনেক মাস বা বছরও...

এই প্রক্রিয়ায় তার সিনেমা দুইভাবে দেখি৷ এক, স্বাভাবিক দর্শক হিসেবে। দুই, অস্বাভাবিক দর্শক হিসেবে, মানে 'সামনে পরীক্ষা..., পড়, পড়...!'

মেউ : দুই নম্বরটা কি বাধ্যবাধকতা থেকে?

রুদ্র আরিফ : এক ধরনের। কারণ, অপরপক্ষ, মানে ওস্তাদ ফিল্মমেকারটি তো রাগী টিচার! ঘাড়ত্যাড়া! ঠিকমতো কমিউনিকেট করতে না পারলে, দেখা গেল, কোনো রেসপন্সই করলেন না! তাইলে তার সঙ্গে বোঝাপড়া ঘটবে কেমনে? সেই জায়গা থেকে বাধ্যবাধকতা...

ঋত্বিকের মতো ক্ষ্যাপাটে, তারকোভস্কির মতো 'শান্ত'... ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্যে যেমনই হোন, ওস্তাদ ফিল্মমেকার মানেই কিন্তু ঘাড়ত্যাড়া, রাগি...

মেউ : তা ঠিক। আচ্ছা, ওস্তাদ ফিল্ম মেকার হইতে গেলে মত প্রকাশের স্বাধীনতা কি উপভোগ করা খুব দরকার৷ যেমন ধরেন, দক্ষিণ কোরিয়ায় ফিল্মে সেন্সরবোর্ড নেই জানি, বা ততটা কঠোর না। আপনি ফিল্মমেকারের ভাষা-বইতে কোরিয়ান ফিল্মমেকারদের সাক্ষাৎকার অনুবাদ করেছেন অলরেডি।

রুদ্র আরিফ : আবার উল্টা প্রেক্ষাপটেও সম্ভব, যেমন ইরানি সিনেমা ও আব্বাস কিয়ারোস্তামি। আসলে 'ওস্তাদ' তো কসরত করে 'হয়ে ওঠা' যায় না; এটা হয়েই যায়। ওই ব্যক্তিমানুষটির বোধের গভীরতায় সেটা থাকে, তা তিনি পোল্যান্ডেই থাকুন কিংবা সেনেগালে। তার ওই বোধের জায়গাটির প্রতিই আগ্রহ আমার। এক ধরনের বোঝাপড়ার চেষ্টা...

মেউ : আচ্ছা। আব্বাস কিয়ারোস্তামি নিয়েও আপনার কাজ আছে, 'কিয়ারোস্তামির সিনে-রাস্তা', ওই বাস্তবতায় পরে আসছি, প্লিজ।

আমাদের এখানেও সেন্সর জটিলতা আছে। মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর 'ডুব'এ কর্তন হয়েছে! শনিবার বিকেল আটকে আছে। এদেশে সেন্সরশীপ ব্যাপারটা কেমন, সবমিলিয়ে?

রুদ্র আরিফ : ওই যে বললাম, ইন্ডাস্ট্রির ব্যাপারস্যাপার আমি বুঝি না ঠিক 😞

তবে সেন্সরশিপ শিল্পীকে হরদম আক্রান্ত করলেও আটকাইয়া রাখতে পারে না!

মেউ : ফিকশনে বাস্তবকে খোঁজা হচ্ছিল—এই দায় এড়াতেই কি ডিরেক্টর শেষ পর্যন্ত বায়োপিক থেকে সরে গেলেন? আপনার কি মনে হয়? ডুব এর বেলায়।

রুদ্র আরিফ : মোস্তফা সরয়ার ফারুকী আমার সরাসরি শিক্ষক। ২০০৭ সাল পুরোটা এবং পরেও আমি তার 'এসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর'দের একজন ছিলাম। সরাসরি শিক্ষকদের ডানে দেখলে আমি ছোটবেলা থেকেই বামে হাটা দিই! তাই... তিনি ও তার কাজ নিয়ে আলাপ না করি?

মেউ : আচ্ছা। কিন্তু আমরা তো তাঁর কথা শুনতেও পারি! এখন পর্যন্ত তাঁর কথা ভালোমত শুনেছেন কে বা তাঁর সিনেমার দর্শন বিষয়ে তাঁকে বলিয়ে নিয়ে এমন বিশেষ সাক্ষাৎকার কি আছে যেটা পড়ে আপনার মনে হয়েছে, তাঁকে রিড করা যাচ্ছে! যেহেতু আপনি পৃথিবী বিখ্যাত ফিল্মমেকারদের সঙ্গে আমাদের সাক্ষাৎ-এর ব্যবস্থা করেছেন ইতোপূর্বে অনুবাদের মধ্য দিয়ে?

রুদ্র আরিফ : না। আমার চোখে পড়েনি।

মেউ : আমারও চোখে পড়ে নি।

ফিল্মমেকারকে কী ধরনের প্রশ্ন করতে হয়, তার সঙ্গে আপনি পরিচিত। কোরিয়ান ও আফ্রিকান ফিল্মমেকার, কিয়ারোস্তমি, হিচ-কক, কুরোসাওয়াসহ অনেককেই যেসব প্রশ্ন করা হয়েছে, সেসব প্রশ্নে তাঁদের দর্শন, কাজ, ফিল্মের ভাষা, শিল্প ইত্যাদি উঠে এসেছে। আপনি আপনার পছন্দের একজন ফিল্মমেকারকে আরো কী প্রশ্নসমূহ করতে চান যা সেসব প্রশ্নে নেই?

রুদ্র আরিফ : ওই যে, তারে আরেকটু বুঝতে চাই৷ তারে আলাপ জমাইতে দিতে চাই৷ তারে নিজের মতো করে খুলতে দিতে চাই। নিজেরে একবার খুলে ফেললে তিনি যে উত্তর বা বয়ান হাজির করবেন, সেইটা কোনো প্রশ্ন করে বের করা সম্ভব না।

ফলে, প্রশ্ন করার বদলে আলাপ উস্কে দেওয়ার পক্ষে আমি।

মেউ : আমাদের এখনকার কোন কোন ফিল্মমেকারের কাছে আপনার প্রশ্ন আছে বলে আপনি মনে করেন বা আলাপ উস্কে দিতে চাওয়ার মত কৌতূহল জমে গেছে?

রুদ্র আরিফ : আতিক ভাইয়ের প্রতি আগ্রহ ছিল। তার সঙ্গে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আলাপ করছি, রেকর্ডিংও হইছে সুদীর্ঘ আলাপের। সেসবও প্রায় এক দশক আগের কথা। আতিক ভাই আবার সিনেমা বানাচ্ছেন। সিনেমা শেষ হইলে আশা করি আলাপ হবে।

মেউ : আচ্ছা৷ অবশ্যই আলাপ হওয়া উচিত। বিশ্ব-সিনেমার বেশ কয়েকজন ফিল্মমেকারের জীবনী, সাক্ষাৎকার, ডায়রি ইত্যাদি ধরনের কাজের সঙ্গে বাংলা ভাষাভাষিদের পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন আপনি। এর পেছনে কি বিশেষ কোনো উদ্দেশ্য ছিল?

রুদ্র আরিফ : উদ্দেশ্য একটাই। তাদের সঙ্গে বোঝাপড়া করা। যেহেতু ফিল্মমেক করার ভূত মাথায় নিয়া হাজার হাজার দিন এই শহরের অলিগলিতে হাঁটছি। বিশেষত বন্ধু বিজয় আহমেদের সঙ্গে দিনের পর দিন এই নিয়ে বকবকাইছি, একের পর এক স্ক্রিপ্ট রেডি করছি, জগতের ওস্তাদ ফিল্মমেকারদের কাছ থেকে পাঠ নেওয়ার, বোঝাপড়া করার ব্যক্তিগত আকাঙ্ক্ষা থেকেই তাদের ডায়েরি, সাক্ষাৎকার, আত্মজীবনী ইত্যাদি পড়েছি/পড়ছি। পড়তে পড়তে বাংলা করে ফেলেছি। আর তা করেছি ও করছি মূলত নিজের জন্য, মর্জিমতো। 'বাংলা ভাষাভাষিদের পরিচয় করিয়ে' দেওয়ার 'মহৎ' কোনো উদ্দেশ্যে নয়। 'ফিল্মফ্রি' জার্নালটাও একই কারণে করা।

মেউ : হ্যাঁ, ফিল্মফ্রি (https://www.filmfree.org/) ফিল্ম নিয়ে ভালো কন্টেন্ট সরবরাহ করে যাচ্ছে, দেশে ফিল্ম নিয়ে এমন আয়োজন আমার চোখে পড়েনি, আমি নিয়মিত পাঠক।

আচ্ছা। কবি বিজয় আহমেদকে ধন্যবাদ। কয়েকটি কাজে তাঁর সাথে আপনাকেও দেখা গেছে।

কোরিয়ান, আফ্রিকান, লাতিন-আমেরিকান ইত্যাদিসহ আরো শক্তিশালী যেসব অঞ্চল আছে ফিল্মের, সংক্ষেপে যদি একটি করে মূলপ্রবণতা বলতেন?

রুদ্র আরিফ : 'ফিল্মমেকারের ভাষা'র আইডিয়া মূলত ওরই।

কোরিয়ানরা, যেমনটা আগেই বললেন, অবাধ স্বাধীনতার সুযোগ নিচ্ছে৷ আফ্রিকা তো যথারীতি, ফিল্মমেকিং যেহেতু ব্যয়সাপেক্ষ ব্যাপার, ফলে মাস্টার ফিল্মমেকার হাতে গোনা। সেনেগালে কিছু দারুণ ওস্তাদ আছেন/ছিলেন, যেমন, দিয়োপ মেমবেতি৷ লাতিন আমেরিকা তো দারুণ! লাতিন সাহিত্যের মতোই, সিনেমাও!

লাতিনে অতিবাস্তবতা থেকে পরাবাস্তবতা, জাদুবাস্তবতা... সবই আছে। ওই তল্লাটে অনেক ওস্তাদ!

মেউ : আচ্ছা। আপনি বললেন ফিল্ম মেক করার ইচ্ছা ছিল। ফিল্ম মেক করা আর ফিল্ম নিয়ে প্রচুর জানাশোনা দুইটা কতটা একে অপরকে সাহায্য করে?

রুদ্র আরিফ : ফিল্মমেক যেহেতু আমি করি নাই, এখনো, তাই এর জবাব কেমনে দিই! তবে ব্যক্তিগতভাবে আমার মনে হয়েছে, এই প্রস্তুতিটা আমার দরকার...।

নিশ্চয়ই আপনারও জগতের নানা প্রান্তের গল্প পড়তে ইচ্ছে করে। পড়েনও। আর নিজে লিখতে বসলে সেগুলো মাথায় রাখেন না; নিজেরটাই লিখে ফেলেন। ব্যাপারটা এ রকমই...

নিজের দেখার দুনিয়া বড় করতে নিশ্চয়ই সাহায্য করে; তবে এই পাঠ নেওয়া আবশ্যকও নয়। নিরক্ষর মানুষও তো দারুণ গল্প বুনতে জানে; আকাশে তাকিয়ে কোনোদিন সিনেমা না দেখা মানুষও তো দারুণ চিত্রকল্প খুঁজে পায়।

মেউ : বাংলাদেশের চলচ্চিত্রকে একটি প্রশ্ন করবেন, প্লিজ, যা এখানকার চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টদের ভাবাবে, চলচ্চিত্রের সংকট নিয়ে?

রুদ্র আরিফ : খালি কি ফুটেজ খাবেন, 'নিজের' সিনেমাটা বানাবেন না? 😉

মেউ : বাহ। সিনেমার স্বপ্ন কবিতার চরণে নিবেদন করেন কিনা, অবচেতনে, চিত্রকল্পগুলো, দৃশ্যগুলো, যা ফ্রেমের বদলে কালিতে হয়ে যাচ্ছে?

রুদ্র আরিফ : 'কবিতা বস্তুত অনুভূতির ঝাপসা ফটোকপি'-- ঝাপসা ফটোকপি, এমনটা ভাবি আমি। কবিতা স্বতঃস্ফূর্তভাবে 'লিখিত' হয়ে যায়। আর আমার কবিতা আমার অনুভূতিরই ফটোকপি যেহেতু, ফলে আমার যাপন, আমার ভাবনা-জগতের ছাপ অবচেতনে পড়াই স্বাভাবিক। যেহেতু সিনেমার সঙ্গে এক ধরনের 'নিয়মিত' যাপন রয়েছে...

মেউ : আমাদের সিনেমা হল কমে গেছে, ভালো সিনেমার সংখ্যাও কমে গেছে, এফডিসির সিনেমা দেখলে আমার মনে হয়, বাংলাদেশের মানুষের জীবন ও সংস্কৃতির চেয়ে যে জীবন ও সংস্কৃতি নির্মাতারা বোঝেন এবং দেখানো সহজ হবে ঝটপট সেটাই তারা দেখাচ্ছেন। সেখানে অতি উত্তেজনা আর আবেগের প্রলম্বিত উঁচাগলার সংলাপ, শিশুরা বড়দের মতো করে কথা বলে, আর বড়রা শিশুর মতো সরল! এখন বাস্তবতা হচ্ছে মানুষের হাতে হাতে ফোন আছে, সেটাকে স্ক্রিন হিসেবে কাজে লাগিয়ে কীভাবে আমরা যথা-জীবনের ফিল্ম তৈরি করতে পারি?

রুদ্র আরিফ : ফরাসি ওস্তাদ জ্যঁ ককতো বলতেন, সিনেমা বানানোর যন্ত্র যখন কলম হয়ে ওঠবে, তখন সিনেমারে শিল্প করে তোলা যাবে। কথাটা অবিকল এটা না হলেও, এ রকমই বোঝাইছিলেন। মানে, ইচ্ছেমতো/স্বাধীনভাবে সিনেমা বানানো যাবে। প্রযুক্তির বিকাশে অই পরিস্থিতি চলে এসেছে। ধরেন, ফাল্গুনী রায় তার 'নষ্ট আত্মার টেলিভিশন' দামি কাগজ-কলমে লিখেছিলেন কি না, তাতে কিচ্ছু যায়-আসে না। ওই কবিতার বই দামি কাগজে ছাপা হলো, নাকি নিউজপ্রিন্টে, নাকি আপনি পিডিএফ ফাইল পড়লেন-- ওইটা ঘটনা না। ঘটনা হইলো, ফাল্গুনী রায়ের কবিতা। আপনার স্রেফ লিখে ফেলতে হবে বা সিনেমাটা বানিয়ে ফেলতে হবে, হোক ফিল্মে, হোক সেলফোনে...

ইমেজ নিজেই কথা বলবে, সেটা যে প্রযুক্তিতেই বানানো হোক।

মেউ : অনেক ধন্যবাদ ভাই, মধ্যরাতে সময় দেওয়ার জন্য। একদিন আমরা সরাসরি শুধু বাংলা চলচ্চিত্র নিয়ে কথা বলব, যেটার উৎপাদক বাংলাদেশ। ভালো থাকবেন, সাবধানে থাকবেন।

রুদ্র আরিফ : হ। করোনা কাটলে দেখা হবে 🙂

টা টা ✌


ᕫᕬᕫᕬᕫᕬᕫᕬᕫᕬᕫᕬᕫᕬᕫᕬᕫᕬᕫᕬᕫᕬᕫᕬ
অন্যপ্রান্তে: রুদ্র আরিফ কবি, অনুবাদক, সিনে-কর্মি ও সম্পাদক। জন্ম ১৯৮৪ সালে চাঁদপুর জেলায়। প্রকাশিত কবিতাবই: ওপেন এয়ার কনসার্টের কবিতা (২০০৯), র‌্যাম্পমডেলের বাথটাবে অন্ধ কচ্ছপ (২০১২), হাড়ের গ্যারেজ (২০১৫)। উল্লেখযোগ্য অনুবাদ গ্রন্থ: তারকোভস্কির ডায়েরি (২০১২), সিনেঅলা (২০১৪), কিয়ারোস্তামির সিনে-রাস্তা (২০১৭) প্রভৃতি। সম্পাদিত লিটলম্যাগ: গুহাচিত্র (২০০২); হার্ডব্রেক (২০০৩) ও জেব্রা (২০০৪)। ফিল্ম বিষয়ক ওয়েব জার্নাল ‘ফিল্মফ্রি’র সম্পাদক।  
ᕫᕬᕫᕬᕫᕬᕫᕬᕫᕬᕫᕬᕫᕬᕫᕬᕫᕬᕫᕬᕫᕬᕫᕬ

লেখক পরিচিতি:

মেহেদী উল্লাহ বাংলাদেশের কথাসাহিত্যিক। জন্মস্থান নোয়াখালীর সুবর্ণচর, বেড়ে ওঠা চাঁদপুরের কচুয়ায়। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা শেষে বর্তমানে জাতীয় কবি কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে ফোকলোর বিভাগে শিক্ষকতা করছেন। তিরোধানের মুসাবিদা (২০১৪) তাঁর প্রথম গল্পগ্রন্থ। তিরোধানের মুসাবিদা গ্রন্থের পান্ডুলিপির জন্য তিনি জেমকন তরুণ কথাসাহিত্য পুরস্কার-২০১৩ অর্জন করেন। প্রকাশিত অন্যান্য গল্পগ্রন্থ: রিসতা (২০১৫), ফারিয়া মুরগীর বাচ্চা গলা টিপে টিপে মারে (২০১৬), জ্বাজ্জলিমান জুদা (২০১৭), অনুমেয় উষ্ণ অনুরাগ (২০১৯)। প্রথম প্রকাশিত উপন্যাস: গোসলের পুকুরসমূহ (২০১৮)। প্রবন্ধ গ্রন্থসমূহ: ফোকলোরের প্রথম পাঠ (২০১৫), ফোকলোর তত্ত্বপ্রয়োগচরিত (২০২০), লোকছড়া: আখ্যানতত্ত্বের আলোকে (২০২০), নজরুল বিষয়ক সংকলন চর্চার ধরন (২০২০)।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ