bdtime

বঙ্গাব্দ ꘡

মাহমুদুল হকের কথাসাহিত্য: গল্পের শরীরে জীবনের অন্তর্স্রোত


বিদ্যুত খোশনবীশ ||

মাহমুদুল হক ছিলেন, জানা ছিলনা তাকে। তিনি নেই এখন, জানা হয়েছে অনেক খানিই। জেনেছি তাঁর গল্পে, তাঁর ভাষায়, তাঁর সৃষ্টিতে। প্রায় পঁচিশ বছর অশ্র“ত ছিল তাঁর কন্ঠস্বর। ’৮২-র পর হঠাৎ করেই থেমে গিয়েছিলেন তিনি। এই দীর্ঘ সময়ে তাঁর হাতে নির্মিত হয়নি নতুন কোন চরিত্র কিংবা কাহিনী। হয়তো অভিমান ছিল তাঁর। বেছে নিয়েছিলেন অন্তরালের জীবন। কিন্তু মোটের উপর মাত্র এক দশক সময়ের মধ্যে কথা সাহিত্যের উর্বর ভূমি কর্ষণ করে যে ফসল তিনি ফলিয়েছেন তা অনবদ্য। অভিজ্ঞ কৃষক, তাই সুবর্ণ ফসলে ভরে নিয়েছিলেন নিজ ঘর। কথাসাহিত্যের জগতে হয়ে উঠেছিলেন অনিবার্য। এ অনিবার্যতায় এক বিন্দুও চির ধরাতে পারেনি তাঁর অন্তরালবর্তী জীবন।
‘লেখকের জন্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো সেই শূন্য স্থান যা লেখার মুহূর্তে তাকে ঘিরে থাকবে। সেই স্থানে এসে জরো হবে শব্দ, চেতনা আর অনুপ্রেরণা। ঐ শব্দগুলোই হবে লেখকের সৃষ্ট চরিত্রের উচ্চারণ।’ ২০০৭ এ সাহিত্যে নোবেল জয়ী ডরিস লেসিং এর কথা এগুলো। মাহমুদুল হকের গল্প পড়ে আমার মনে হয়েছে, ঐ শূন্য স্থানকে দৃঢ়ভাবেই আঁকড়ে ধরেছিলেন তিনি। প্রমাণ পেয়েছি তাঁর ভাষায়, তাঁর গল্পে । প্রচন্ড জীবন্ত ওগুলো। প্রজ্ঞার বিচ্ছুরণ, শব্দের গাথুনি, চরিত্র নির্বাচন ও চিত্রায়ণই বলে দেয় কতটা উচ্চাঙ্গের লেখক ছিলেন তিনি। প্রথম উপন্যাস ‘অনুর পাঠশালা’ (যেখানে খঞ্জনা পাখী’র পরিবর্তীত নাম) লিখবার আগে মাহমুদুল হক লেখালেখির প্রস্তুতি নিয়েছিলেন দীর্ঘ সময় ধরে। অসংখ্য গল্প লিখেছিলেন সেই পর্বে । তবে সবগুলোর জাহেরি রূপ এখন নেই, কিংবা থাকলেও তা অযতেœ ক্ষীয়মান। তারপরও মাত্র দুটি গল্প গ্রন্থে যে কয়েকটি গল্প আশ্রয় পেয়েছে তার গভীরতা নির্ণয় করা দুরহই বটে। একেকটি গল্প একেকটি কৃষ্ণবিবর। আকার-আঙ্গিক যতই ছোট হোক না কেন তার ভেতর লুকিয়ে আছে বহুজীবনের বর্ণিল মহাকাব্য।
 মাহমুদুল হকের উপন্যাস সাতটি হলেও মাত্র দুটি গল্প গ্রন্থ তাঁর। ‘প্রতিদিন একটি রুমাল’ অগ্রজ আর ‘মাহমুদুল হকের নির্বাচিত গল্প’ অনুজ। সময় এবং সময়ের ব্যবধানও বিস্ময়কর। ষাটের দশকের শক্তিমান কথাশিল্পীর গ্রন্থ প্রাকাশ পায় ’৯৪ আর ’৯৯ সালে! বিরলপ্রজ লেখক তিনি– তাছাড়া আর কিইবা বলা যেতে পারে এক্ষেত্রে। সাহিত্যযশপ্রার্থীরা যেখানে সস্তা কথার ফাঁদ পেতে জনপ্রিয়তা শিকার করেন সেখানে মাহমুদুল হকের রূপময় নিস্ক্রিয়তায় মুগ্ধ হতে হয়। কিন্তু এই নিস্ক্রিয়তা, এই পলায়নপরতা শুধু কি সময়ের প্রভাবে, শুধুই অভিমানে, নাকি মনোলোকের কোন নিগূঢ় অনুশীলনে– ভাবনার অবকাশ আছে বৈকি!
১৯৯৪ সালে প্রকাশিত মাহমুদুল হকের প্রথম  গল্প গ্রন্থ ‘প্রতিদিন একটি রুমাল’-এ স্থান পেয়েছে ১১টি গল্প: হৈরব ও ভৈরব, জোনাকি, অচল সিকি, বুলু ও চড়–ই, বুড়ো ওবাদের জমা-খরচ, একজন জামশেদ, সপুরা ও পরাগল, ছেড়া তাঁর, হলধর নিকারীর একদিন, অচিনপুর ও প্রতিদিন একটি রুমাল। দ্বিতীয় গ্রন্থে সংকলিত হয়েছে কালো মাফলার, গরু-ছাগলের গল্প, বেওয়ারীশ লাশ এবং প্রথম গ্রন্থের চারটি সহ মোট সাতটি গল্প। প্রেম, যৌন চেতনা, ক্ষোভ, বিদ্রোহ, ব্যক্তির অস্তিত্ব ভাবনা, ক্ষয়ে যাওয়া সমাজ ও তার অন্তর্প্রকৃতি, হতাশা,  রাজনীতি ও রাজনৈতিক পটবিবর্তন, মুক্তিযুদ্ধ, প্রতারণা, স্মৃতিময়তা এ সবই শৈল্পীক অবয়বে স্থান করে নিয়েছে তাঁর গল্পে। তাঁর গল্পে শব্দের পরতে পরতে গড়ে উঠেছে সমাজের মধ্যবিত্ত ও নিম্নবর্গের ক্ষয়িষ্ণু জীবন-সৌধ। ফলে গল্পগুলো শুধুমাত্র মেকি গল্পের গন্ডিতে আবদ্ধ না থেকে হয়ে উঠেছে দৃষ্টির আড়ালে নিরন্তর বয়ে চলা জীবনের খরস্রোত।
প্রতিদিন একটি রুমাল’র প্রথম গল্প ‘হৈরব ও ভৈরব’ এর কাহিনী আবর্তিত হয়েছে একটি দারিদ্রক্লীষ্ট ঢোলক পরিবারের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না ও অস্তিত্বের সংকটকে কেন্দ্র করে। হঠাৎ ফুলেফেপে উঠা গ্রাম্য ধনীক শ্রেণীর হাতে ঢোল বাদক হৈরবের মত দরিদ্র মানুষেরা কিভাবে দিনে দিনে পরাস্ত হতে থাকে তার-ই এক নির্ভেজাল চিত্র ফুটে উঠেছে এই গল্পে। বাঙ্গালী সমাজ তো বটেই পৃথিবীর প্রতিটি সমাজ ব্যবস্থায় বয়সী ও নয়া প্রজন্মের মধ্যে যে অপাপবিদ্ধ দ্বন্দ্ব ও ফারাক ক্রিয়াশীল তাও খুঁজে পাওয়া যায় এই গল্পে। হৈরবের ছোট ছেলে ভৈরব। দারিদ্রের মধ্যেই তার জন্ম, দারিদ্রেই বসবাস। বয়সে তরুণ সে। দেখেনি পালাপার্বনের মিছিল, ঢোলবাদকদের সোনালী অতীত, আর সংসারের সচ্ছলতা। প্রায়ই বাবার সাথে মতদ্বৈধতা দেখা দেয় তার, মেনে নিতে পারে না সংসারের অনেক কিছুই। পরিবর্তীত সময়ে বাপ-দাদার পেশাকেও লালন করতে পারে না সে। বুড়ো হৈরবের আফসোস, তার মত ঝানু ঢাকী হতে পারলো না তার ছেলে। ভৈরব জানেনা  ‘কয়কীর্তনের ঢাকীদের কি দাপটটাই না ছিল এক সময়, পালপার্বণের আগে সারা দেশ থেকে বায়না করতে আসতো মানুষজন। বনেদী বাবুদের বাড়ি না হলে তারা বায়না ফিরিয়ে দিয়েছে কতবার…।’  ঢোলক পরিবারের সেই সুন্দর, উচ্ছ্বল দিনগুলোর ছবি রঙ ফিরে পায় হৈরবের কন্ঠে: ‘উঠানে গান্দাফুল আছিলো, দোপাটি আছিলো, রক্তজবা আছিলো, কৃষ্ণকলি আছিলো, স্থলপদ্ম আছিলো, গন্ধরাজ আছিলো, কিনা আছিলো, বাবুরা আছিলো, পালপার্বণ আছিলো, ঢাকীগ ভাত আছিলো, গায়ে শাল আছিলো; অহনে পিন্দনের তেনাও নাইÑÑ’।
সভ্যতার সূচনালগ্ন থেকেই ক্ষুধার বিরুদ্ধে লড়াই করছে মানুষ। ক্ষুধাই তাকে শিখিয়েছে রক্তপাত, নিষ্ঠুরতা।  ক্ষুধার খরতাপেই শুকিয়ে যায় অন্তরের সবটুকু নির্যাস। পরাজীত হয় প্রেম-ভালোবাসা, ছিন্ন হয় পারিবারিক বন্ধন, রুদ্ধ হয় সামনে চলা। ক্ষুধা নামক পাকস্থলীর এই নুন্যতম চাহিদা মিটাতে না পারলে উবে যায় মানবিক মূল্যবোধও। হৈরবের কন্ঠে এই নিষ্ঠুর বাস্তবতাই প্রকাশ করেছেন মাহমুদুল হক: ‘মন অন্নময়, কি বুঝছস, অন্ন নাই তো মনই নাই; শ্যাষম্যাষ হ্যা অন্নেই ধরছে টান, তো মন পামু কইÑÑ’। সমাজ বদলায়, প্রতিনিয়তই বদলায়। বদলে যায় দেশ, বদলে যায় বাপদাদার পেশা। বিজলী বাতির আলোয় যেমন ভূত থাকেনা তেমনি শিল্পায়নের ধাক্কায় থাকেনা কদমের বন, পালপার্বন, ঝাড়লন্ঠন আর মৃদঙ্গের শব্দ। এই উলোট-পালট, এই রঙ বদলের খেলা কিছুই মাথায় ধরেনা হৈরবের। সে বুঝে উঠতে পারে না ‘মানুষ আগাগোড়া সবটা কিভাবে বদলে যায়’। অথচ এই অদল-বদলের আগুনেই কপাল পুরে হৈরবের; তার মত আরো অনেক পরিবারের। ঢাকী পরিবারগুলোর সেই দুঃখ-দুর্দশার অকৃত্রিম ছবি প্রচন্ডভাবে মূর্ত হয়ে উঠেছে মাহমুদুল হকের শব্দ আর রূপকের ব্যবহারে:
‘ভৈরব আর চোখে বাবাকে দেখে। ঝাঁ ঝাঁ ফাগুনে রোদ তার কপালের ঘামে চিড়িক মারে।’ কিংবা ‘ভৈরবের হাতের শানানো দায়ের চেয়েও ধারালো আর ঝকঝকে রোদ্দুর। কি ঝাঁঝ, কি ধার, একেবারে বালিশান দেওয়া; এক-আধ চিলতে গাছগাছালির যে ছায়া, তা-ও একেবারে খোলায় ভাজা, ফোস্কা পড়া। চোখে ঘোর লাগে হৈরবের।’
এই ক্ষুধাই হৈরবকে টেনে নিয়ে যায় গ্রাম্য ধনিক শ্রেণীর প্রতিভূ গনি মিয়ার কাছে। চাল-চুলো ঠিক রাখতে হাত পাততে হয় তাকে। গনি মিয়াও তাই চায়। দেনার ভারে হৈরবরা যত চুপসে যাবে ততোই ফুলেফেপে উঠবে তারা। শাসক হবার ¯পৃহা তো মানুষের আদিম প্রবণতা। কিন্তু দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে কখনো সচেতনভাবে আবার কখনো অবচেতন মনেই বিদ্রোহী হয়ে উঠে নিপিড়ীত মানুষ, চায় প্রত্যাঘাত করতে। কিন্তু বিপ্লব, বিদ্রোহ তো আসে  তারুণ্যের হাত ধরে। গল্পের শেষ প্রান্তে মাহমুদুল হক তা-ই দেখিয়েছেন। হৈরব নয়, দ্রোহ দানা বাধে ভৈরবের অন্তর্লোকে। গনি মিয়া যখন নিজের মনের খায়েশ মেটাতে ভৈরবকে ঢাকে বারি দিতে বলে তখনই ফুসে উঠে সে দ্রোহের আগুন। ভৈরবের মনে হয় ‘কেনা গোলাম সে’। প্রচন্ড আক্রোশে দুরমুশের মত লাফিয়ে লাফিয়ে সে চিৎকার করে উঠে: “দশখুশি, বাবু দশখুশি! ঢাকে কেমনে কথা কইতাছে হুইনা দ্যাহেন।… ভৈরবের চোখ থেকে আগুন ঠিকরে বের হয়, ‘ফিরান দিয়া বহেন, ফিরান দিয়া বহেন, দশখুশি বাজাই দ্যাহেন কেমনে, মাইনশের চামড়ার ছানিতে দ্যাহেন কেমুন বাজে…।”
গনি মিয়া প্রাণ ভয়ে পালায়। ইতিহাস বলে, গনিমিয়াদের পালাতেই হয়। পালায় ভৈরবও! চেনা জীবনকে ছুড়ে ফেলে দিতে চায় সে। তবে ভয়ে নয়, এক অদ্ভুত শিহরণে নতুন জীবনের অন্বেশায়। যে জীবনে গনি মিয়াদের হাতের পুতুল হতে হবে না, তাদের কাছে হাত পাততে হবে না।
‘ল, তর কাচা ল’ কলুবাড়ির বাঁশঝাড়ের দিকে সজোরে সেটাকে ছুড়ে দিয়ে ভৈরব বলে, ‘ধর, তর ছিট তরে ফিরাইয়া দিলাম’ তারপর সে শুরু করে দৌড়; মাথার ভেতর বিদ্যুতচমকে এক একবার ঝলসে ওঠে কয়কীর্তন গ্রাম, ঝলসে ওঠে ঋষিদাসদের জাফরিকাটা মুখ আর বর্শার ফলা, মশালের আলো।

এই যে জীবনের প্রতি টান, নতুন সূর্যোদয় দেখবার প্রেষণা তা মানুষের স্বভাবজাত। শেষ বিচারে প্রতিটি মানুষই ভীষণ অস্তিত্ববাদী। অভিযাত্রি মানুষ তার অস্তিত্ব খুঁজে ফেরে নিরেট পৃথিবীর প্রতিটি কোণে। সংসারধর্মের এই অনুচ্চারিত অথচ অনিবার্য সূত্র উপেক্ষিত হয়নি মাহমুদুল হকের গল্পে। বরং এই চেতনার সাবলীল পারস্পার্য খুঁজে পাওয় যায় তাঁর অন্যান্য গল্পেও। মূলচরিত্রের পাশাপাশি লেখক পার্শ্বরিত্রগুলোতেও ছড়িয়ে দিয়েছেন বেঁচে থাকার প্রচন্ড ¯পৃহার দ্যুতি। কিন্তু মানুষ বেঁচে থাকতে চায় কেন? সে কি মৃত্যুকে ভয় পায়? মৃত্যুভয় থেকে আত্মরক্ষার জন্যই কি তার বেঁচে থাকার আকাঙ্খা এতো তীব্র? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর আমরা যদি মাহমুদুল হকের গল্পেই খুঁজে পেতে চাই তবে একক কোন উত্তর পাওয়া যাবেনা। এর কারণ হয়তো একই বোধের আলোকে সমাজে মানবসত্তার বিকাশ ঘটেনা। মৃত্যুই মানুষের নিয়তি, পাঠে স্পষ্ট হয় মাহমুদুল হকের চরিত্রগুলো এ সত্যের সাথে অপরিচিত নয়। কিন্তু তারপরও ‘সপুরা ও পরাগল’ গল্পে সপুরার কন্ঠে তিনি বলতে চান, ‘কি আজব, প্রাণবায়ু বেরুতে না বেরুতে এ পোড়ার দেহ কত সহজে শিয়াল কুকুরের ভোগ্য হয়ে যায়; মন খারাপ হয়ে যায় সপুরার। এসবই বাতুল চিন্তা, আবার এ কথাও মনে হয়, মৃত্যুভয় না থাকলে তারই বা রোজগার হতো কিভাবে।’ মৃত্যুভয়েই সপুরা, মায়মুনা ও পরাগলরা আত্মসমর্পন করে নোংরা ও ঘৃণ্য বাস্তবতার কাছে। মালগনি মিয়ার ভিক্ষুক তৈরির কারখানায় সপুরা নতুন। এজন্যই তার মধ্যে কাজ করে কিছু অমূল্য চিন্তা, ভয়, বিজাতীয় ঘৃণা। কুলি আর স্ট্যান্ডের ড্রাইভারগুলো যখন মাতাল হয়ে ঠোঁটে চিটচিটে হাসি নিয়ে তার পেছনে ঘুর ঘুর করে তখন ‘নিজেকে সামলানোর এক দামাল ইচ্ছা তার শিরদাঁড়াকে সিধা করে তোলে’।  পক্ষান্তরে পরাগল ‘লোভী ও ধূর্ত’ আর মায়মুনা মালগনি মিয়ার মতো আরো অনেকের ভোগের পণ্য। সমাজের তলানী  হয়ে হলেও বেঁচে থাকতে চায় ওরা। তাই সপুরার মত ওদের কোন ভাষা নেই, ওরা মূক। কিন্তু যে পথ মারিয়ে মায়মুনারা বেঁচে আছে ভাষাহীন, সে পথও প্রচন্ড টানে সপুরাকে। লোভ জাগে তার মধ্যেও, শুধুমাত্র বেঁচে থাকার আশায় জীবিকার তাগিদে: ‘নষ্ট উরুটা টেনে টেনে এক পায়ে হামাগুড়ি দিয়ে মালগনির ঘরের দিকে যেতে থাকে সে’।
স্বার্থপরতার মধ্য দিয়েই মানুষকে বেঁচে থাকতে হয়, নিজের অস্তিত্বের প্রয়োজনেই আপোষ করতে হয় সময়ের সাথে। সময়ই মানুষের অস্তিত্বের নির্ণায়ক। অস্তিত্বের স্বার্থেই অনিচ্ছা সত্তেও মানুষ ঘষেমেজে তুলে ফেলে ন্যায়-অন্যায়ের ভেদরেখা। ‘বুড়ো ওবাদের জমা-খরচ’ গল্পে লক্ষ্য করা যায় এই সত্যেরই এক অপূর্ব চিত্রায়ণ। বৃটিশ আমল থেকেই সুবচনী গ্রামের মানুষেরা বেঁচে আছে চৌর্যবৃত্তি অবলম্বন করে। সে কথা মোটেও অজানা নয় বুড়ো ওবাদের কাছে। তাই কোন এক উৎসবকে কেন্দ্র করে ‘মার্কামারা চোরার দল’ যখন খানাপিনার আয়োজন করছিল তখন চাল-চুলোহীন বুড়ো ওবাদও ভাবছিল ‘কিভাবে পাত পাতা যায়’ সেখানে। কিন্তু দুপুরের মধ্যেই বদলে যায় পুরো দৃশ্যপট। একদল লোক উত্তেজিত করে তোলে সাত গাঁয়ের মানুষকে। শুরু হয় হত্যাযজ্ঞ। চৌর্যবৃত্তির অপরাধে একে একে জবাই করা হয় আড়াইশ নর-নারীকে, বাদ যায়না নিরপরাধ শিশুরাও। বুড়ো ওবাদও সামিল হয় এই অমানবিক নরমেধযজ্ঞে: ‘গুণে গুণে আড়াইশ পর্যন্ত যখন জবাই করা হয় সে তখনো সাতগাঁয়ের মানুষের দলে’। তার ‘ধারণা ছিলো ফুটোকপালে জেনে অত্যুৎসাহীদের কেউ না কেউ তার হাতে নগদ কিছু গুঁজে দেবে’। কিন্তু ‘শেষ পর্যন্ত ব্যাপারটা তার আর ভালো লাগেনি; সে হতাশ হয়েছিল’। সে জানতো এভাবে রক্তপাতের মধ্যে দিয়ে সমাজকে বিশুদ্ধ করা যায় না। তাই এমন নির্মম একটা কাজে অংশ নেবার পরও তার মধ্যে জেগে উঠে মানবিক চৈতন্য, সে উপলব্ধি করে পাপী হয়ে কেউ জন্মায় না। যে শিশুগুলোকে হত্যা করা হলো তাদের কোন অপরাধ ছিলো না। বাবা-মায়ের পাপে ওদের কেন বিচার হবে! তার আশঙ্কা হয়, ‘এ যাত্রায় মানুষের ভাগ্যে যে দুর্ভোগ আছে তার কোন নজির নেই’। এই বোধ থেকেই প্রায়শ্চিত্ত করার ইচ্ছা তার মধ্যে জেগে উঠে। প্রায় তিন দিন পর লোক চক্ষুর অন্তরালে তিনটি শিশুর পচা-গলা লাশ দাফন করে সে। কিন্তু এখানেও সেই স্বার্থপরতাই মূর্ত হয়ে উঠে যখন সে বলে:
‘সোনারা, তোমাগো বাপ-মায়ে মাটি পায় নাই, তোমরা পাইলা। দুনিয়াতে তোমাগোর কুনো গুনা নাই, তোমাগোর মনে কোন দাগ লাগে নাই, আল্লায় তোমাগোর কথা শুনবো, আল্লায় য্যান আমারে বেস্ত দেয়, সোনারা তোমরা কয়োÑÑ’
শুধু ব্যক্তিস্বার্থই নয়, এই গল্পে সমাজের অন্ধকার দিকেও আলোর প্রক্ষেপন ঘটিয়েছেন লেখক মাহমুদুল হক। প্রজ্ঞা আর ভাষার নির্ভেজাল প্রয়োগে তিনি বলতে চেয়েছেন, পচে যাওয়া সমাজ আমাদের। আমাদের মূল্যবোধ উদ্বাস্তু, চিন্তার পঙ্কিলতা রুদ্ধ করতে চায় আমাদের পথ চলা। ঈশ্বরের শাব্দিক উপস্থিতিই এ সমাজে মূখ্য, তাঁর অস্তিত্ব নয়। আমরা যেন বিশ্বাস করতে শুরু করেছি উন্মাদনা আর বিভৎসতাই আমাদের টিকে থাকার শক্তি।
‘হতকুচ্ছিত, মরার দশা হয়েছে পোড়া গঙ্গার, হতকুচ্ছিত! লগির মাথায় কামড়ি খেয়ে থাকে এঁটেল কাদা। খোঁচা খেয়ে মাঝে মাঝে ভুড়ভুড় ঘুলিয়ে ওঠে তলদেশ, পচানির ঝাঁঝ নাকে ঝাপ্টা মারে।’
কিন্তু মানবতার গলায় ছুরি চালিয়ে অন্যায়ের মূলোৎপাটন করা যায় না। এটা আত্মপ্রবঞ্চনার সামিল। এর কোন শুভ ফল নেই; এ প্রবণতা নিজেই অশুভ। লেখক ইঙ্গিত দিয়েছেন, সুবচনীর চোরদের নির্বংশ করবার পরও গ্রামগুলোতে বয়ে যায়নি শান্তির মৃদুমন্দ বায়ূ। বরং এক সকরুণ অস্থিরতা আর অপার্থিব বিষণœতার মেঘ আচ্ছন্ন করে তাদের ত্রিমাত্রিক বাস্তবতাকে। নির্মমতার প্রতিদান দিতে প্রকৃতিও যেন হয়ে উঠে প্রচন্ড প্রতিশোধস্পৃহ। মানবিক বোধ সম্পন্ন বুড়ো ওবাদের দৃষ্টিতে বাঁধা পরে এই অদ্ভুত দৃশ্য। অমঙ্গলের সাথে সাথে মঙ্গলও যেন বিতাড়িত হয়েছে তাদের ভাগ্যাকাশ থেকে।
‘আজ তিনদিন থেকে গাছের পাতায় পলক পড়ে না; দুপুরের হা-হা শূন্যতায় কেবল তপ্ত হাওয়ার হলকা তীব্র ঘূর্ণিবেগে পাক খায়। প্রতিটি গ্রামই এক একটি নাড়াক্ষেত, দাউদাউ ক’রে জ্বলছে আগুন; বিপুল ক্ষুধায় গনগনে রৌদ্র নিঃশব্দে গিলে ফেলছে লেলিহান শিখা, দিনগুলোর আদল কতকটা এই রকম। …চোর-ডাকাতের গ্রাম উজাড় হবার পর থেকে বাতাস পর্যন্ত বয় না। গ্রামগুলি দম আটকে মরছে। সারাদিন কেবল মাথার উপর শকুন উড়ে। কেয়ামতের অপেক্ষায় রুদ্ধশ্বাসে সকল প্রকৃতি নির্বিকার থমকে আছে।’
তবে এই গল্পে যে ‘দুব্লাপাতলা’ যুবকের প্ররোচনায় সাতগাঁয়ের মানুষ দলবব্ধ হয়ে রক্তের হলিখেলায় মেতে উঠলো  তার কোন স্পষ্ট পরিচয় কিংবা ইতিহাস খুঁজে পাওয়া যায় না। সে কি শুধুই সাধারণ গ্রামবাসী, সাধারণ ক্ষোভ থেকেই কি তার ঐ উস্কানি, নাকি তার পেছনে আছে স্বার্থান্বেষী, সুযোগ-সন্ধানী গোষ্ঠীর পরোক্ষ প্ররোচনা তা আরো স্পষ্ট হবার সুযোগ ছিল বলেই আমার মনে হয়। কারণ, এ ধরনের দীর্ঘস্থায়ী, নারকীয় হত্যাযজ্ঞ কোন আকস্মিক উন্মাদনায় সংঘটিত হতে পারেনা। তাছাড়া চোরদের ‘রক্তে হাত ধুইয়া শোকর আদায় করণ’ এর মত ক্রুর চিন্তা ঐ যুবকের মনে অন্য কোনদিন না জেগে একটি নির্দিষ্ট উৎসবের দিনে কেন জেগে উঠলো তাও পরিস্কার নয়। এ বিষয়গুলো আরো স্পষ্ট করলে গল্পটি অধিকতর লক্ষ্যভেদী হতো।
মাহমুদুল হকের গল্পগুলোর রসায়নে এক অনিন্দ্য পারস্পর্য লক্ষ্য করা যায়। মূলত এ কারণেই চরিত্র ও কাহিনীর ভিন্নতা অটুট রেখেই তাঁর গল্পগুলো হয়ে উঠেছে মানব জীবনের ধারাবাহিক নকশা। সমাজের নিচু শ্রেণীর উপস্থিতি দৃশ্যত প্রাধান্য লাভ করলেও এ নকশা মৌলিক কাঠামোতেই অঙ্কিত। ‘হলধর নিকারীর একদিন’ গল্পটিও এই নকশা চিত্রেরই একটি অংশ। যেখানে অস্তিত্ব সংকটের পাশাপাশি কাহিনীর গতিপ্রবাহ বহুলাংশেই নিয়ন্ত্রিত হয়েছে সমাজের অধোঃস্তরের মানুষের সাধারণ যৌন-প্রবৃত্তি দ্বারা। তবে তা অশ্লিলতাকে প্রশ্রয় না দিয়েই সমাজের নিচুতলার মানুষদের জীবনের একটি প্রহরকে বাস্তব করে তুলেছে।
গল্পের প্রধান চরিত্র মৎস-ব্যবসায়ী হলধর একই সাথে ত্রিমুখী বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। নিজ সংসারে সে রুক্ষ ও বদমেজাজী, কাঙ্খিত নারীর সামনে কামাতুর পুরুষ এবং জেলেদের কাছে আস্থাভাজন নেতা। তবে এ-সবকিছুর আড়ালে প্রচন্ড স্বার্থসচেতন ও হিসেবী মানুষ সে। লেখকের দক্ষতায় এ বৈশিষ্টগুলো তার অস্তিত্বে সমান্তরাল ও  সমবিস্তৃত। গল্পের শুরুতেই বাবা চৈতন্য দাসের সাথে তার যে কথোপকথন তা যেন ‘ঠিক কথা নয়, কথার নামে ছোবল মারে হলধর, বিষদাঁতের জ্বালায় সর্বক্ষণ যে গায়ে খই ছিটানো গোখরা হয়ে থাকে’। ‘হৈরব ও ভৈরব’ গল্পে দুই প্রজন্মের মধ্যে যে ব্যবধান আমরা লক্ষ্য করেছি তার সমরূপ উপস্থিতি এই গল্পেও আচ করা যায়। এতে স্পষ্ট হয় লেখক মাহমুদুল হকের নিজস্ব চিন্তার জগতে এ বিষয়টি যথেষ্ট গুরুত্বের সাথেই অনুরণিত হয়েছে।
‘চৈতন্যদাস ভেতর ভেতর ফোঁসে, জলস্থলের কি এমন দেখেছে হলধর, কেবল ঘাড়ে-গর্দানে পুরু হলেই হয় না, একটা তিনপাতা বয়েসের আহাম্মক ছ্যামড়া; হলধর নদীও দেখেনি, নদীর তোর দেখে নি, স্রোতের ধার দেখে নি, জলের রাগ দেখে নি, ঝড়-তুফানের কি সে জানে। যৌবনকালের দাবড়ানি দিয়ে তো আর সবকিছু মাপা যায় না।’
বিয়ের আগে স্ত্রী মেনকার রূপে মুগ্ধ ছিল হলধর, ডাকতো ‘মেনকা সুন্দরি’ বলে। কিন্তু বউ যেখানে প্রতিদিনের, সেখানে চোখের মায়া তো বটেই শরীরের টানও ঢিলে হয়ে আসে। তাই মেনকা যখন তিন সন্তানের জননী তখন হলধরের চোখে সে আর সুন্দরী থাকেনা, হয়ে যায় ‘বাসিমড়ামাত্র’। মেনকার শরীরে তেমন কোন আবেদন খুঁজে পায়না হলধর, তাই ‘প্রচন্ড ক্ষোভ তার’। এই ক্ষোভ এতোটাই তীব্র যে ‘মেনকার পুতুলের মতো মুখটি তার থেতলে দিতে ইচ্ছে করে’। শুধু তাই নয়, এই অতৃপ্তি থেকেই একধরনের বিদ্বেষী সন্দেহ জেগে উঠে হলধরের মনে। তার ধারণা, আর্মিক্যাম্প থেকে তিনদিন পর মেনকা পালিয়ে আসেনি বরং ভোগের পর তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। তাছাড়া খুড়তুতো ভাই কেশবের সাথে মেনকার এককালের সম্পর্কও নতুন করে আঁচড়কাটে হলধরের বিশ্বাসের দেয়ালে: ‘এই কেশব যে তাকে একটু আধটু না-চেখে এমনিই ছেড়ে দিয়েছে এখন আর তা বিশ্বাস হয় না হলধরের’। এ অবিশ্বাস হলধরের একার নয়, নিকারী শ্রেণির প্রাচীর ডিঙ্গিয়ে তা সর্বব্যাপী।  মানবিয় যৌন প্রবৃত্তির এ এক নিগূঢ় রহস্য। এ রহস্যই হলধরকে টেনে নিয়ে যায় গঙ্গা ও ভগির কাছে। তাদের অনাবিস্কৃত শরীরের প্রতি অদম্য আকর্ষন তার। কিন্তু গঙ্গাও যেন মেনকার মতই– নিস্পৃহ, অচঞ্চল। হলধর কী চায় তা বুঝতে চেষ্টা করেনা, ‘কাছে আসে ঠিকই, কিন্তু ধরা দিতে পারে না’। হলধরের ধারণা, গঙ্গা হয়তো জানেই না কখন কিভাবে ধরা দিতে হয়। তাই গঙ্গাকে পাবার ‘তার সব স্পৃহা মরে গেছে’। গঙ্গা এখন আর তাকে টানে না, নেশাগ্রস্তের মতো সে ভগির বলকানো শরীর দেখে। খালের জলে বৃষ্টির নৃত্যের মত এক আদিম উন্মাদনাও নেচে উঠে তার শরীর-মনে। ভগিকে চাইলেই পাওয়া যাবে, কিন্তু তারপরও সন্দেহ উঁকি মারে হলধরের মনে: ‘মেনকার মতো ভগির শরীরেও ওপড়ানো গাছের গন্ধ নেই তো?’
মাহমুদুল হকের এই গল্পেও অস্তিত্ব সংকট এসেছে প্রত্যাশিতভাবেই। তবে তা প্রতিকারহীন নয়। নিজের অস্তিত্ব সংকট কাটাতে হলধর আশ্রয় নেয় অর্থের, আশ্রয় নেয় কৌশলের। ঘাটের সর্দারি টিকিয়ে রাখতে কেশবকে হত্যা করার জন্যে সর্বহারাদের নিয়োগ করে সে। সেও হয়ে যায় তাদের দলভূক্ত। কোন কোন মানুষ লোভ ও নিষ্ঠুরতাকে লালন করে চাতুর্যতার সাথে, হলধর তাদেরই একজন। ঘাটের সর্দার থেকে সেও হয়ে উঠতে চায় ‘দাদন মুনশি’র মত ‘শেকড়-বাকড়’ ওয়ালা মানুষ। তাই সুযোগ পেয়ে দাদন মুনশির মজুত করে রাখা জালের কথা সর্বহারাদের কাছে ফাস করে দেয় সে। কেশবের মতই ভাগ্য হবে দাদন মুনশির, এ আশায়। উদ্দীপনায় তার চোখে নতুন চরের মতো জেগে উঠে সাত ঘাটের মহাজন হবার স্বপ্ন।
‘প্রবল উদ্দীপনায় বৃষ্টির তোড়ের মতো তার ভেতর কোলাহল করে: একদিন তারও শত শত মহাজনী নৌকোর বহর গড়ে উঠবে, বিবন্দির গুঞ্জর ব্যাপারীর পাশাপাশি সেও তখন বুক ফুলিয়ে চলবে, আবেগ ও বুদ্ধির দর কষাকষিতে বারবার চমকে উঠে হলধর।’
তবে গল্পে সর্বহারাদের আকস্মিক আবির্ভাব ও হলধরের সাথে দেনদরবারের ঘটনায় কিছুটা হোচট খেতে পারেন অপ্রস্তুত পাঠক। কারণ, প্রেম ও যৌনাকাঙ্খার যৌথ মেজাজে কাহিনি যখন পরিনতির দিকে যাচ্ছিল তখন রাজনৈতিক অনুঘটক হিসেবে সর্বহারাদের উপস্থিতি অপ্রত্যাশিতই বটে।
প্রেম ও যৌনাকাঙ্খার অমার্জিত রূপ শুধু নিকারী শ্রেণীর জীবনেই গন্ডিবদ্ধ নয়, মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্তের অন্তর্পুরেও দৃশ্যগত। বহুযুগ পরিক্রমায় তা যেন হয়ে উঠেছে পুরুষ-চরিত্র। ‘একজন জামশেদ’ গল্পে জামশেদ ও তার বড় ভাই আরশাদের যৌনপ্রবৃত্তির যে বহিঃপ্রকাশ লক্ষ্য করা যায় তা মূল বিচারে হলধরের চাইতে খুব একটা সংস্কৃত নয়। আরশাদ রাশভারি মানুষ হলেও স্ত্রীর স্থুল শরীরকে প্রচন্ড ঘৃণা করেন। ‘জামশেদের বদ্ধ ধারণা বড়ভাই নিজের স্ত্রীর ব্যাপারে মোটামোটি সহনশীল হলেও ঐ চর্বির ধাপগুলোকে হিংস্রভাবে ঘৃণা করেন। ঘৃণা করেন বলেই স্ত্রীর অনুপস্থিতিতে মাঝে মাঝে রান্নাঘরে রোকেয়ার মাকে চেপে ধরেন’। অপরদিকে, জামশেদ বেকার যুবক। বেকারত্বের গ্লানি প্রতি মুহূর্তেই ‘তেতো’ সংসারে তার অস্তিত্বকে প্রশ্নের সম্মুক্ষিণ করে। পুরনো ঘড়িতে দম দেয়ার মতোই অন্যের আনুকুল্যে নিজের জীবনকে টেনে নিয়ে যেতে হয় তাকে। বড় ভাই আরশাদের সংসারে আশ্রয় পেলেও আশ্রিত জীবনের উৎপাতে অতিষ্ট সে। ফলে হতাশা ও অভিমানে মনোবিকৃতির একটা ছাপ তার মধ্যে স্পষ্ট। মৃত্যু চিন্তা তার কাছে ‘ভারি সুন্দর’ বলে মনে হয়। চিন্তার বিশৃঙ্খলতায় আত্মহত্যার দৃশ্যও কল্পনা করে সে। তার এই কল্পিত পরিনতির জন্য সে নির্দিধায় দায়ি করতে চায় বড় ভাই আরশাদকে। হতাশা ও একঘেয়ে জীবন মানুষকে করে তোলে অপরাধ প্রবন। জামশেদের মধ্যেও সেই উপসর্গ মূর্ত হয়ে উঠে ভাবির মামাতো বোন তুহিনাকে ধর্ষনাকাঙ্খার মধ্য দিয়ে। তুহিনাকে বহুবার সে ‘খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে’ দেখেছে, ‘একটু দুলালী দুলালী ভাব আছে তার ভেতর’। অথচ যে ঝুনুকে সে ভালোবাসে তাকে এই ভাবে দেখবার কথা কখনো তার মনে আসেনি। হলধরের কাছে মেনকা যেমন ছিল আবেদনহীন, প্রাত্যহিক; সম্পর্কের ভিন্নতা সত্বেও জামশেদের কাছে ঝুনুও ঠিক তাই। অতৃপ্তি বোধ ব্যক্তির মনস্তত্বে ক্ষণিকের জন্য হলেও যে বিকৃত রুচির জন্ম দেয় ‘একজন জামশেদ’ গল্প তাই স্মরণ করিয়ে দেয়। তবে জামশেদের এমন পঙ্কিল চিন্তায় কোন অস্বাভাবিকতা লক্ষ্য করি না। তার অন্তর্জগতে যে কুৎসিত প্রবণতা বা আকাঙ্খার অনুপ্রবেশ ঘটেছে প্রকৃতপক্ষে তা হতাশা, ক্ষোভ ও আবেগের প্রচন্ডতায়। নৈতিকতার মানদন্ডে জামশেদের প্রবৃত্তি গ্রহণযোগ্য না হলেও তা বাস্তবতার প্রতিচ্ছবি।
মুক্তিযুদ্ধ আমাদের জাতিসত্ত্বার স্রষ্টা; আমাদের প্রধানতম গৌরব, আমাদের মৌল পরিচয়। মুক্তিযুদ্ধ আমাদের ইতিহাস, ইতিহাসের নিয়ন্তা। ইতিহাস সৃজন করে সাহিত্য, সাহিত্য লালন করে ইতিহাস। ’৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের পর আমাদের সাহিত্যে এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। মুক্তিসংগ্রামকে কেন্দ্র করে রচিত হয়েছে অসংখ্য কবিতা, গল্প, নাটক, উপন্যাস। কালের রায়ে কালজয়ী হয়েছে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সাহিত্যকর্মও। কিন্তু ওগুলোর প্রায় সবই ময়দানের আবেগ, উচ্ছ্বাস ও বীরত্বকে প্রাধান্যে রেখে রচিত। মাহমুদুল হক যুদ্ধে জাননি, তিনি একজন অমুক্তিযোদ্ধা। হয়তো এ কারণেই মুক্তিযুদ্ধকে তিনি দেখেছেন অনেকখানি ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে। বলবো, এক উচ্চতর মঞ্চ থেকে, যেখানে আরোহন সহজসাধ্য নয়। মুক্তিসংগ্রামকালীন অভিজ্ঞতার প্রেক্ষিতে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ‘বাংলাদেশ মানে তো একটা নতুন গাছ লাগানো অথচ তোমরা ভেঙ্গে ফেলছ গাছই, ন্যাড়ামোড়া করে ফেলছ।’ (দৈনিক ডেস্টিনি, ঈদ সংখ্যা ২০০৮) মাহমুদুল হকের দৃষ্টিভঙ্গির এই ভিন্নতা স্পষ্টতই প্রভাবিত করেছে তার কথাসাহিত্যকে। প্রথাগত সাহিত্যের পাশাপাশি তিনি রচনা করেছেন ভিন্ন স্বাদের কিছু গল্প। মুক্তিযুদ্ধকে পাশে দাঁড় করিয়ে রেখেও তিনি যেন তার পরিচয় দেননি কিংবা দিতে চাননি; পরিচয় দিয়েছেন শুধু মুক্তিযোদ্ধারÑÑ তার চিন্তার, প্রত্যাশার ও প্রাপ্তির।
‘কালো মাফলার’ গল্পে ঠিক তা-ই ঘটেছে। সরকারী চাকুরীজীবি পিতার তিন সন্তান মনোয়ার, টুলটুল ও মঞ্জু। টুলটুল অতিমসাহসী মুক্তিযোদ্ধা। তার জন্যই গোটা পরিবারটিকে দিন কাটাতে হয় অজানা আতঙ্ক ও ভয়ে। এরই মধ্যে বেশ কয়েকবার বাড়ি বদলও করতে হয়েছে তাদের, বোন মঞ্জুকে রেখে আসতে হয়েছে নিরাপদ আশ্রয়ে। টুলটুল যুদ্ধে গিয়েছে কারণ মাতৃভূমির স্বাধীনতা তার কাম্য। সে নিশ্চিত দেশ একদিন স্বাধীন হবেই, ‘তবে অনেক সময় লাগবে, আরও অনেক রক্ত দিতে হবে, আরও অনেক ক্ষতির জন্যে তৈরী থাকতে হবে’। তাই মৃত্যু ভয়ে সে সঙ্কিত নয়। তার ভাষায় ‘কুকুর- বেড়ালের মত মরে তো আর কোন লাভ নেই, মরলে মানুষের মতোই মরা উচিত।’
টুলটুলের এই বিশ্বাস, মৃত্যুকে তুচ্ছ জ্ঞান করবার সাহস গল্পের প্রসঙ্গ ও চরিত্র বাস্তবতায় স্বাভাবিক ও সাধারণ। এই বিশ্বাস ও সাহসের ডানা মেলে একাত্তরে লক্ষ লক্ষ বীর বাঙালী উড়াল দিয়েছিল স্বাধীনতা নামক দূর গন্তব্যে। কিন্তু সবার ক্ষেত্রেই কি সত্য একথা? একাত্তরে সবাই কি ‘টুলটুল’ হতে পেরেছিল? উত্তর, না। আকাঙ্খা থাকলেও দেশ স্বাধীন হবে কিনা তা নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে খুব একটা স্পষ্ট ধারণা ছিল না। কিংবা টুলটুলের মত দ্বিধাহীন চিত্তে প্রতিটি বাঙালী ঝাপিয়ে পড়েনি মুক্তিযুদ্ধে। ‘অনেকে মনে করত, এটা একটা খামখেয়ালি। ছোট ছোট ছেলেরা লাফাচ্ছে, মিছিল করছে, তাতেই কি দেশ স্বাধিন হয়ে যাবে? এ ধরনের দোলাচলে যারা ছিল তাদেরও সর্বোপরি স্বাধিনতার আকাঙ্খা ছিল। তারাও তো পরিস্থির শিকার হয়েছে। (মাহমুদুল হকের সাক্ষাৎকার, দৈনিক ডেস্টিনি ঈদসংখ্যা, ২০০৮)
মাহমুদুল হকের কথায় এবং গল্পে, বিশেষ করে ‘কালো মাফলার’ -এ এমন অনেক সত্যেরই সন্ধান পাওয়া যায়। সত্যকে জীবনের কাছাকাছি রেখে নিঃসংকোচে প্রাকাশ করবার জন্যই বোধকরি মনোয়ার চরিত্রটি তিনি সৃষ্টি করেছেন। সংসারের বড় ছেলে মনোয়ার দুর্বলচিত্তের মানুষ, নির্ঝঞ্ঝাট জীবনই তার পছন্দ। ছোট ভাই টুলটুল যুদ্ধে গেলেও ‘ভয় তাকে শেকলবেড়ি পরিয়ে রেখেছে’। যুদ্ধে যাওয়া তো দূরের কথা  পাকসেনা ও রাজাকারদের দাপটে মুক্তিবাহিনীর সামর্থ নিয়েও সে সন্দিহান।
‘কি করছে এখন গেরিলারা। না কি যাত্রাবাড়ির ব্রীজের ওপার পর্যন্তই তাদের কেরামতি! … মুক্তিবাহিনী বিরাট একটা কিছু করছে না কেন, না কি তেমন ক্ষমতা তাদের নেই! ধুঁকে ধুঁকে কুকুর-বেড়ালের মত মরতে হবে সবাইকে, শেষপর্যন্ত তো এমনও হতে পারে!’
যে কোন সময় অঘটন ঘটবার আশঙ্কায় বিছানায় শুয়ে থেকেও হাপিয়ে উঠে মনোয়ার। তার কাছে রাত মানেই আতঙ্ক ও অবিশ্বাস। তার মনে হয়, ‘হাত-পা বেঁধে আমোদ প্রিয় সৈন্যরা যেন বুড়িগঙ্গায় ফেলেদিয়েছে তাকে, ক্রমশ তলিয়ে যাচ্ছে, একটা বিরাট পিচ্ছিল বাইন তার গলা দিয়ে ঢুকবার জন্যে ক্রমাগত তড়পাচ্ছে’। তবে এই অস্পষ্টতা ও দোদুল্যমনতার মধ্যেও সে আকাঙ্খাহীন নয়। তারও আকাঙ্খা দেশ মাতৃকার স্বাধীনতা। তার এই নিস্ক্রিয় আশাঙ্খার প্রকাশ লক্ষ্য করা যায় কিছু অলীক কল্পনার মধ্য দিয়ে।
‘ আচ্ছা, সত্যিই যদি এমন হয়, আলো-বাতাস, নদ-নদী, পাহাড়-পর্বত, গাছপালা, পোকা-মাকড় সবকিছুই যদি মুক্তিবাহিনীর হয়ে কাজ করে, তখন? যে কোনোদিন তো মহামড়কও শুরু হয়ে যেতে পারে; দেখতে-না দেখতে গোটা সৈন্যবাহিনী সাপাচাঁট, তখন? টাইফয়েড, ডিসেনট্রি, আরেব্বাপ, নেপোলিয়নের মতো বাহাদুরের বাচ্চারও তেরোটা বাজিয়ে তবে ছেড়েছিল?
ভেল্কিবাজি চাই, রাতারাতি সবকিছু বদলে যাক, গাছের ফুল ডালের পাখি, নদীর মাছ, সাপ ব্যাঙ ছুঁচো ইঁদুর সবাই একযোগে একটা কিছু করে ফেলুক, রাতারাতি স্বাধীন হয়ে যাক দেশটা। রক্তবৃষ্টি হোক, মাংস-বৃষ্টি হোক, কালো রোদ ঝরুক,সবকিছু হয়ে যাক বিষাক্ত, রাতারাতি স্বাধীন হয়ে যাক দেশ।’
বিভ্রান্তির মায়াজাল ছিন্ন করে যুদ্ধকালীন সমাজ বাস্তবতা নিয়ে প্রচলিত ধারণার অস্তিত্বে আঘাত করা সবার সাহসে কুলোয়না। মাহমুদুল হক সেই সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন, নতুনতর প্রজন্মের কাছে নির্ভেজাল চিত্র হাজির করেছেন। তার সাহসিকতা আরও গাঢ় হয়ে উঠে যখন গল্পের শেষে পাঠক ইঙ্গিত পান চোর সন্দেহে গণপিটুনিতে নিহত ‘ছোঁড়া’ আসলে টুলটুল।
‘একচোর ছোঁড়া মরে পড়ে আছে, তাই দেখতে পাড়াশুদ্ধ লোক একেবারে হুমরি খেয়ে পড়ছে! ….পাড়ার লোকজন নিজেরাই ধরে পিটিয়ে মেরে ফেলেছে। গলির মুখে রেশনশপের পাশের ড্রেনে পড়ে আছে এখনো। রাতে পাঁচিল ডিঙোবার সময় ধরা পড়েছিল, বলাবলি করছে অনেকে। চুরি করার মতলব না থাকিলে পাঁচিল ডিঙোতে যাবেই বা কেন!’
টুলটুল এসেছিল মনোয়ারের কাছে দুটো গ্রেনেড রেখে যেতে। কিন্তু রাজাকার কিংবা পাক হানাদারের বুলেটে নয় একজন মুক্তিযোদ্ধার মৃত্যু হলো গণপিটুনিতে, তাও আবার চোর সন্দেহে! ইঙ্গিত সত্য হলে এ কাহিনী বিস্ময়কর, চমকপ্রদ।
একাত্তরে পাকিস্তানে সমর্থক না হয়েও কেউ কেউ যে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের প্রতি ছিল নিরাসক্ত ও ভাবলেশহীন সে সত্যও উঠে এসেছে এই গল্পে। মুক্তিযোদ্ধা টুলটুলের বাবা এই সত্যের জ্বলন্ত উদাহরণ। বাড়ি সার্চ করতে এলে রাজাকারদের তিনি বলেন ‘আমি নিজে সরকারী চাকরি করি, দায়িত্ব যে কত বড় জিনিস তা হাড়ে হাড়ে বুঝি, আমাদের সকলের উচিত সাধ্যমতো আপনাদের সব কাজে সাহায্য করা, এটাও একটা কর্তব্য।’
মনোয়ারের কথার জবাবেও তিনি বলেন, ‘রাজাকার হলেই রাস্কেল হয় না, ভালো-মন্দ সকলের ভেতরই আছে।’
মাহমুদুল হকের গল্পে যুদ্ধকালীন সমাজচিত্রের আড়ালকৃত অংশ যেমন উন্মোচিত হয়েছে তেমনি যুদ্ধোত্তর বাংলাদেশের সামাজিক মুল্যবোধ ও রাজনৈতিক আর্দশের ভগ্নদশাও হয়েছে আবিস্কৃত। ‘প্রতিদিন একটি রুমাল’ গল্পে মুক্তিযোদ্ধা আলতাফ সদ্য স্বাধীন দেশে মুখোমুখি হয় অস্তিত্ব সংকট ও বহুমুখী আর্থ-সামাজিক অসংগতির। প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির সংগতি সাধন ও অস্তিত্ব সংকট মোকাবেলায় সে হয়ে উঠে বেপরোয়া ও আগ্রাসী। দূর্নীতিগ্রস্ত বন্ধুর দাম্পত্য সম্পর্কে চির ধরানো, ওভারটেক করা গাড়িকে রাস্তার পাশে নেমে যেতে বাধ্য করা, ভোগের পর মেয়েদের খেলনার মত ছুড়ে ফেলে দেওয়া, এ সবই সে অবলীলায় করে যায় নিজের অস্তিত্বের প্রয়োজনে। এমন কি রিকসারোহী সুন্দরী যুবতী তার ইঙ্গিতে সাড়া না দেওয়ায় গাড়ির ধাক্কায় রিকসাকে দুমড়ে-মুচড়ে দিতেও সে দ্বিধা করে না। এর কৈফিয়ত হিসেবে বন্ধু সবুজকে সে বলেÑÑ ‘দোষ-গুন যাই বলিসনা কেন আমার ধরনটাই এখন এই। আমার যা প্রয়োজন আমি তা জোর করে আদায় করে নেই, কারো মুখ চেয়ে বসে থাকি না হা-পিত্যেশ করে। যেখানে তা সম্ভব নয় সেখানে গায়ের জোর খাটাই, প্রয়োজন হলে উড়িয়ে দেই, নিজের অস্তিত্বের জন্যে এইসব করতে হয় আমাকে। বুঝতে পারছি খুব খারাপ লাগছে তোর, আমি দুঃখিত! মন থেকে মুছে ফেলার চেষ্টা কর, ভুলে যা সবকিছু, দেখবি সবকিছু আবার কেমন ফর্সা হয়ে গেছে। দুনিয়াটাই এভাবে চলছে বন্ধু! ভুলে যাবার ক্ষমতা পর্বতপ্রমাণ হওয়া চাই!’

ভুল ও অঙ্গতির বিরুদ্ধে ক্ষোভের জ্বালাময়ী বহিঃপ্রকাশও দেখা যায় ‘ছেড়া তাঁর’ গল্পের নজরুল চরিত্রে। বায়ান্নের বিশে ফের্রুয়ারি ভোর বেলায় পোষ্টার লাগাতে গিয়ে সে পঙ্গু হয়েছিল সাধারণ মানুষের প্রহারে, পুলিশের টর্চারে নয়। ‘পুলিশের ব্যাপারে আমি সর্তক ছিলাম, সাধারন মানুষের হাতে প’ড়ে এমন মার খাবো কল্পনাও করিনি।’  তাই স্বাধীন বাংলাদেশে রাস্তায় বিলবোর্ডে শিক্ষা মন্ত্রণালয় বানান ভুল দেখে আবেগ ও ক্ষোভ দমাতে না পেরে ইট ছুঁড়ে লাইট বক্স ভেঙ্গে ফেলে সে।
‘শোভার ভেতরে এমন কীট, রাখো শালা, শোভা দেখাচ্ছিÑÑ। ভুল দেখলে আমার মাথায় রক্ত চড়ে যায়। মনে হয় বোমা মেরে মেরে এক একটা ভুল ঠিক এই ভাবে উড়িয়ে দেইÑÑ।’
নিভৃতে হলেও মাহমুদুল হকের প্রায় প্রতিটি গল্পে ব্যক্তি চৈতন্যের ভেতর থেকে অঙ্কুরিত হয় ক্ষোভ, প্রতিবাদ ও বিদ্রোহ। সেই সাথে অন্ত্যজ ও মধ্যবিত্তের সুখ-দুঃখ, হাসি-কন্নায় ভরা জীবন ও জীবনের দশান্তর পাঠকের সাথে দুরত্ব ঘুচিয়ে হয়ে উঠে নিকট-দৃশ্য। যা লেখকের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা ও দার্শনিকতার সুচারু প্রতিস্থাপনের অভিজ্ঞান। ফলে, আমাদের চেতনা ফসকে হারিয়ে যাওয়া জীবনের কিছু কিছু ক্ষুদ্র মুহূর্ত ও অনুসঙ্গ দৃশ্যগত হয় নতুন আলোয়। পাঠকের হৃদয়ে উদ্ভাসিত হয় বেদনাসিক্ত ও জীবন ঘনিষ্ঠ অনুভূতি। এই গদ্যটিও সেই অনুভূতিজাত। তাই পাঠক একে অভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে গ্রহণ করলে আমার জন্যে তা হবে স্বস্তিদায়ক।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ