bdtime

বঙ্গাব্দ ꘡

যে কবিকে নিয়ে একদিন লিখেছিলাম

কুলদা রায়ের গদ্য: জলের মধ্যে লেখাজোখা: পর্ব ৭

যে কবিকে নিয়ে একদিন লিখেছিলাম

তুষার গায়েনের মাধ্যমে প্রয়াত কবি খোন্দকার আশরাফ হোসেনের সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল। আমৃত্যু তাঁর সঙ্গে আমার যোগাযোগ ছিল। কিছু বুদ্ধিবৃত্তিক কাজ আমরা করেছিলাম। আরো কিছু করার পরিকল্পনা ছিল। তার আগেই তিনি চলে গেলেন।বাংলাদেশে এই একজন শিরদাঁড়াওয়ালা মানুষ ছিলেন যাঁকে নির্ভর করা যেতো। 

কবি খলিল মজিদ, কথাসাহিত্যিক সরকার আশরাফের সঙ্গেও আমার বন্ধুত্ব হয়েছিল সেই সময়ে। দা্উদ আল হাফিজের সঙ্গে বন্ধুত্ব হয়েছিল ১৯৮৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার কুটিকালের বন্ধু সেলিম ওমরাও খানের রুমে। এঁরা খুব উদার মানুষ। রাগটাগ কম। হনুগিরি নেই। গুরুগিরি দাবী করেন না।একটা মানবিক আদর্শ মেনে চলেন। এই জায়গায়টাই এঁদের সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব টিকে থাকার গোপন রহস্য। 

বছর তিনচার  আগে খলিল মজিদের সঙ্গে খোন্দকার আশরাফ হোসেনের একবিংশ লিটল ম্যাগাজিন পুনঃপ্রকাশ নিয়ে কথা হয়। পত্রিকাটি কাজল বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্পাদনায় আবার বের হচ্ছে। এই সূত্রে আবার দাউদ আল হাফিজের সঙ্গে আমার যোগাযোগ বেড়ে ওঠে। কিছু অনুবাদ সংক্রান্ত পরিকল্পনা হয়েছিল আমাদের দুজনের মধ্যে।  এর মধ্যে তিনি-- কবি দাউদ আল হাফিজ চলে গেলেন। আমার জানামতে তিনি ছিলেন আমাদের দেশের প্রকৃত কবিদের প্রাচীন বংশের সর্বশেষ শহীদ যিনি দারিদ্রতার মধ্যেও বিত্ত নয়--বেসাত নয়, প্রচার নয়--প্রতিষ্ঠা নয়---শুধু কবি হতে চেয়েছিলেন। আঙুল গুণে গুণে তার কবিতা সংখ্যা বলা যায়। কিন্তু আড়ালেই থেকেছেন তিনি। কবিজীবন পার করেছেন। এরকম সৎ কবি আর জন্মাবে কিনা এই পোড়া দেশে--আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে। তাঁকে প্রণতি জানাই দূর থেকে।

কবি তুষারের সঙ্গে আমার কোনো যোগাযোগ নেই দীর্ঘদিন। আমাকে আর মিত্র জ্ঞান করেন না বলেই মনে হয়। তাতে আমার কিছু যায় আসে না। কে শত্রু--আর কে মিত্র থাকলো কি গেল আমি কখনো কেয়ার করিনি। কেউ আমার কাছাকাছি আসতে পারেন নিজ থেকে--কেউ চলেও যেতে পারেন আমার কাছ থেকে। আমার কাছে থাকাকালে আমি তাঁর কাছ থেকে কোনো সুবিধাগ্রহণ করিনা। পারলে উপকার করারই চেষ্টা করি। কিন্তু কোনো ধরনের গুরুগিরিতে আমার মন বসে না। আমি নমোশুদ্র মানুষ। এতেই আমি খুশি। 

বছর কয়েক আগে এই লেখাটি লিখেছিলাম কবি তুষার গায়েনের জন্মদিনে। লেখাটির কিছু স্মৃতিমূল্য আছে। 

⧪⧪⧪⧪⧪⧪⧪⧪⧪⧪⧪⧪⧪⧪⧪⧪⧪⧪⧪⧪⧪

ছেলেবেলায় আমি একটি গাছকে ভালবেসেছিলাম। গাছটির নাম শুপারি। আমার জানালার পাশে ছিল। চোখের সামনে শুপারি গাছ তার শৈশব ছাড়িয়ে কিশোরী হয়ে উঠল। হাওয়ায় হাওয়ায় তার পাতারা দুলল। সবুজ চিক্কন ঝিরঝির পাতা। দেখে আমার  প্রাণ উড়ে যায়।

এ সময় আমি বরিশাল গিয়েছিলাম। ভোর রাতে লঞ্চ থেমে গেল কীর্ত্তনখোলার পাড়ে। একটু একটু হেঁটে বগুড়া রোডে এসে পড়েছি। মস্ত বাড়িটা। লাল রঙের। তখনো অন্ধকার কাটে নি। গেট খোলে নি। চারিদিকে শুপারি গাছের সারি। তার নিচে ঘুমিয়ে পড়েছি। এই বাড়িটা তুষারদের। দোতলার উপরে। ছাদে রোদ্দুর আর বিকেলে ছায়া। এর পাশেই পাকিয়ে ওঠে মায়া।

বরিশাল শহরটি খুব মায়াময়। এখানে হাওয়ায় কবিতার বীজ ওড়ে। এর মধ্যে তুষার কখন যেন সত্যি সত্যি কবি হয়ে উঠেছে। আমরা দুজন হেঁটে বেড়াই ব্রাউন কম্পাউন্ড হয়ে বেলস পার্কে। ওখান থেকে পোর্ট রোডে। কীর্ত্তনখোলার রূপ যেন খুলে খুলে পড়ে। খোলা জল আসে – খোলা জল চলে যায়। জমে ওঠে ইলিশের স্তুপ। আমরা দুজন এ সময় কথা বলি জল নিয়ে। হাওয়া নিয়ে। গাছ নিয়ে। ছায়া নিয়ে। তুষার বলে, একটি শব্দ। আমি বলি শব্দটির ভেতরে দেখতে পাচ্ছি কোন দৃশ্যটি। কোন সুরটি শুনতে পারছি। ও বলে, উঠোনে কে রূপবতী খেলা করে—ছড়ায়ে দিতেছে বুঝি ধান/ শালিখেরে; ঘাস থেকে ঘাসে-ঘাসে খুঁটে-খুঁটে খেতেছে সে তাই। আমি দেখতে পাই হলুদ পাখিটিকে--হলুদ নরম পা তার। পাখিটি খয়েরী। আহা, পাখিটি সেই শালিখ। শুপারি গাছের পাতায় বসে থাকে। কালো তার চোখ। শিষ দিয়ে ওঠে। বলে, চেয়ে দ্যাখো সুন্দরীরে : গোরচনা রূপ নিয়ে এসেছে কি রাঈ!

এই ভাবে পাবনায় আমাদের দুজনের অনেক সময় কেটে গেছে হেঁটে হেঁটে। ওখানে ছাদের উপরে বসে বসে, দুজনে এশার আযান শুনি। আমার মরমে পশিয়া যায়। বুঝতে পারি, ঈশ্বর আমাদের ডাকছেন। অন্ধকারের গুড়ো গুড়ো হয়ে উড়ছে। আর রাতে যখন তুষার পড়তে বসেছে, আমি জানালার পাশে—তখন হাহাকার জেগে উঠেছে। চমকে উঠি ত্রাসে। তুষার জানালাটি বন্ধ করে দিয়েছে। ওটা জেলখানা। বাঁশে ঝুলিয়ে মানুষ পেটানো হচ্ছে। কে এই মানুষটি? তুষার কখনো বলে নি। আমিও জানতে পারি নি। শুধু দেখেছি পাবনা শহরটি ধুলোময়। বাতাসে তুলো ওড়ে। কয়েকজন মানুষ গোল হয়ে বসে কবিতা পড়ে। আমি পড়ি না। আমি শুপারির প্রেমে পড়ি। পাবনা শহরের শুপারি গাছগুলো অনেক মেদহীন। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হাসে। খিল খিল। তুষারের সঙ্গে গাঙুড় শব্দটি নিয়ে পথ ঘুরে যাই।

এরপর তুষার উড়ে চলে গেছে দূর দেশে—আমাদের ইভান আর নাতাশাদের দেশে। আমি ব্রহ্মপুত্রের কাছে। চারিদিকে শালগাছ। হাওয়ায় হাওয়ায় পুষ্প রেণু। ফুল ফোটে। পথ ছেড়ে মাঠ দিয়ে হাঁটি। পুষ্প পায়ে দলা ঠিক নয়। এভাবে কয়েকটি বছর চলে গেলে একদিন তুষার টুপ করে এসে পড়ে। আবার শুপারিগাছের জন্য আমরা দুজনে ধানক্ষেতের পাশ দিয়ে হাঁটতে থাকি। ক্রিসেন থিমাম হা হা করে। আকাশ থেকে তুষার ঝরার মত শিল পড়ে। কয়েকটি ছেলে জড়ো করে সাদা সাদা শীলখণ্ড। তুষার এই দৃশ্যটি দেখতে দেখতে নাতাশার কথা শুরু করে। আমি অবাক হয়ে শুনি—তুষার নাতাশার কথা বলতে গিয়ে বলে যাচ্ছে—ওগো বাঘ মামা, তোমার বাল্লক এলো বনে। ইভান নয়। রহিম বাদশার কথা। তাকে কোলে করে রূপবান বনে বনে ঘুরছে। কে তাকে দুধ দেবে। এই দুঃখে একটি কোকিল মরে পড়ে গেল। ছেলেগুলো কোকিলটিকে শীলস্তুপের উপর রেখে দিল। তুষার আবার চলে গেল—বহুবন্ধ দূরের কিনারে-- রূশ দেশে। সেখানে শীত জমে থাকে গাছের বাকলে। শ্লেজ গাড়ি ঠেলে কয়েকটি লোমতোলা কুকুর।

আমরা আশায় আশায় থাকি—ভ্লাদিভির ইলিচ আমাদের তাজুলকে বলবেন, কমরেড, ওঠেন। আসেন, মানুষের হাতে স্বপ্নকে তুলে দেই। ততদিনে আমাদের মণিসিংহ অনেকটা বুড়িয়ে গেছেন। কানে হেয়ার এইড লাগিয়ে শোনার চেষ্টা করছেন—বিপ্লব কতটা এগুলো। বিপ্লব এলে আমার মা নতুন ধান ভানতে ঢেঁকির কাছে যাবে। আমাদের আদিল কাকু—রাস্তা থেকে পাছা ঘষটে ঘষটে চলা ছেড়ে দিয়ে বলবান মানুষের মত উঠে দাঁড়াবেন। চিৎকার করে বলবেন, বিপ্লব দীর্ঘজীবী হোক। তিমথিদের শুপারি গাছটি আবার ফেরত পাবে তিমথির বাবা। বিপ্লব, তুমি কবে আসবে!

এর মধ্যে বার্লিনে একটি দেওয়াল ভেঙে গেল। আর তোপখানা রোডের একটি পুরনো  বাড়ির মাঝখানে দেওয়াল উঠল। ফিওদর দস্তয়েভস্কি বিদায় জানালেন ননী ভৌমিককে। তার চোখে জল। ছেলেটি নেই। স্ত্রী থরথরে করে কাঁপছেন। আর কে লাঞ্ছিত বঞ্ছিতকে বাংলাদেশে পৌঁছে দেবে? নেল্লিকে? তারাশ বুলবাকে? এইসব দেখে শুনে লেনিন পাশ ফিরলেন। তার চোখে সভ্যতার গভীর ঘুম নেমে এসেছে। ভাঙা দেওয়ালটির টুকরোগুলো চারিদিকে ছিটকে ছিটকে পড়তে লাগল। অনেকের মাথা ফেটে গেল। কারো বুক। কারো গভীর ক্ষত হল পায়ে। লেনিন, ঘুমোচ্ছেন।

ঠিক এ সময় মাঘের মাকড়সার মত নখদন্তসহ এরশাদ এসে গেছে। তার পতনের শব্দে যতটা আলোড়ন হল -–তার মধ্যে দিয়ে গোপনে রক্তবীজ শেকড় ছড়াতে শুরু করেছে। আমাদের রুমীদের মা-- শহীদ জননী আঙুল তুলে দেখালেন বিষবৃক্ষের শেকড়টিকে। চারিদিকে যখন জনবজ্র ঘোষিত হচ্ছে, তখন, বিস্মিত চোখে দেখতে পাওয়া গেল—শেকড়ের মহিমা অপার। জননী মুখ কালো করে চলে গেলেন। আর আমি গ্রামে গ্রামে।

ততদিনে তুষারের ‘নীলভবহ্রদ’ বেরিয়ে গেছে। আমি আবার শুপারিগাছের নিচে চলে  গেছি। বরিশালে। সন্ধ্যানদীর পাড়ে। জলে জলে চলি। অপার জলের মমতা আঁকি।

বড় মমতায় একটি তালগাছের নিচে বসে চোখের সামনে বইটির পাতা খুলে ধরি। আমার চাষীবন্ধু হামিদ খান ডাব কেটে দেন। আমি তুষারের অক্ষরের ভেতরে শুনতে পাই বার্লিন প্রাচীরের ধ্বসে পড়ার শব্দ আর কোটি কোটি বিপন্ন মানুষের হাহাকার। খণ্ড খণ্ড ভূগোলের ভেতরে বাংলাদেশ হাঁপাতে হাঁপাতে চলেছে—তার কাঁধে বিষবৃক্ষের ছায়াটি শ্বাস ফেলছে আর তাই শিথিল বজ্র করছে পূনরুত্থানের নান্দীপাঠ।

মাঝে মাঝে হরকরা তুষারের ডাক দিয়ে যায়—একবিংশ অথবা নিসর্গ। বগুড়া থেকে বিপ্রতীপ। হঠাৎ করে তুষার চলে আসে বরিশালে। আমার ঘরের সামনে তখন ক্যালেণ্ডুলা ফুটেছে আর বাতাসে দুলছে কসমস। পিছনে লাউগাছে ফলেছে কচি কচি লাউ। কাপিলা গাছে জামাইকুলি সীম। আর বারান্দায় এক বাক্স মৌমাছি। আমার বড় মেয়েটি হাততালি দিয়ে বলে—বাবা, আকাশে তারা ফুটেছে। তুষারকে নিয়ে হাওয়ার ভেতরে যাই। ধানক্ষেতে রাতে চাঁদ ওঠে। জোয়ারের জল নেমে যায় আল ভেঙে। তার কুলকুল সুর শোনা যায়। বসে থাকি কুমীরমারির ঠোঁটায়। তুষার বসে বসে দেখে, সমুদ্র থেকে ছুটে আসছে কচা নদীর দিকে গর্ভবতী ইলিশের ঝাঁক। কচা নদী পাড়ি দিচ্ছে সন্ধ্যানদীর স্রোতে। এর পরে চলে যাবে সুগন্ধার দিকে। কালিগঙ্গার সবুজ ছায়া কখনো শেষ হয় না। দূরে কারা গায় রয়ানী গানের বোল। টগড়ার হাবিব দুয়ারী আর মানিক দুয়ারী শুপারি গাছের গোড়ায় পঁচা মাটি তুলে দিতে দিতে দেখছে -–ফুল আসতে শুরু করেছে। হলদে পায়ের শালিক পাখিটি দুলে দুলে শিষ দিচ্ছে। আর কুড়িয়ানার পেয়ারা বাগান থেকে ফিরে খোলা ট্রলারে চেপে বসেছি দুজন। ভরা নদী। ঢেউয়ের দোলায় দুলছে। মাঝি চেঁচিয়ে বলছে, নৈড়েন না, টুপ কৈরা ডুইবা যেতি পারে। দুপারে বেতি ঝোপ আর ছৈলার সারি। উপরে আকাশ। সূর্য অনেকক্ষণ আগে পাট থেকে আরও নিচে নেমে গেছে। মেঘ করে এলে বৃষ্টির ফোঁটা সহসা ঝরে পড়ে। অথবা দূর গাঁয়ে বৃষ্টি ঝরার শব্দে কালু গরুটিকে ফেরাতে এসেছে একটি মেয়ে। টিউবওয়েল থেকে গলগল করে বেরিয়ে আসছে একাত্তরের ৩০ লক্ষ বাঙালির হাড়, করোটি আর চক্ষুহীন বিস্মিত কোটর। এক ফাঁকে বনবিবি নিজেকে বাঁচিয়ে বাঁচিয়ে একটি রূপময় কাঁথা বুকে চেপে হেঁটে যাচ্ছে। অন্তহীন গতির ভেতরে তার যাত্রা। হাজার বছর ধরে অসংখ্য মানুষ স্বপ্নসুতোয় বুনে চলেছে এই কাঁথাটির রূপময় পরণকথা। তারা গাছ, মাটি, জল ও হাওয়ার গল্প জানে। জানে, তারা নিজেরাও এই মাটি, গাছ, জল অথবা হাওয়া-- অখণ্ড সত্তা। এইভাবে একদিন পেয়ে যাই তুষারের দ্বিতীয় কবিতার বইটি ‘বৃষ্টির অন্তর ত্রাস’।

‘ত্রাস’ শব্দটি নিয়ে বহুদিন ভেবেছি। খুঁজে দেখি ‘ত্রাস’ শব্দটি আমাদের বুকে গেঁথে গেছে একাত্তরে। তারপর পঁচাত্তরে। তারপর দুই হাজারে। শুনতে পাই ‘ত্রাস’ শব্দটি গোপনে গোপনে বাড়ে। বৃষ্টি পড়ে। পাতা নড়ে। বুক কেঁপে ওঠে। এই বুক কেঁপে উঠছে বলেই কি আমি আমার সুগন্ধা, তেতুলিয়া অথবা পানঘুচি নদীটিকে ছেড়ে এসেছি এই হাডসন নদীর পাড়ে? সামনে অথৈ জল। ঠিক কালো নয়। হাডসন নদীর শঙ্খচিল নিঃসংকোচে উড়ে আসে। হাত থেকে দানা খুটে খায়। ইঁদুর দৌড়ে বেড়ায় ব্যাটারী পার্কে। আর দূরে হা হা করে হাসতে থাকে স্ট্যাচু অব লিবার্টি। একটি মেয়ে বলে-- বলত, আমি কে?

--তুমি জল?

--কোন জল?

--বোতলে বন্দী জল। খোলা জল কোথায় পাব এখানে?

মেয়েটি এবার নিশ্চুপ হয়ে যায়। বেতের ফলের মত চোখ দুটি ম্লান। দু’একটি নষ্ট শসা। ভাঙা ডিম। মেয়েটি উড়ে যায় গভীর অন্ধকারের দিকে। শুপারিগাছের কাছে। তার চলে যাওয়ার শো শো শব্দ শোনা যায়। তুষার পাশ থেকে উঠে যায় আরও গভীরতর তুষারের কাছে। কানাডায়। আর আমি একা বসে থাকি, নিউ ইয়র্কে—রিগো  পার্কে। গোরচনা রূপ নিয়ে পরীটি নেই। শূন্য বেদী। আর হাহাকার।


‘‘মা বনবিবি, তোমার বাল্লক এল বনে

থাকে যেন মনে।

শত্রু দুশমন চাপা দিয়ে রাখ গোড়ের কোণে।

দোহাই মা বরকদের, দোহাই মা’ বরকদের।।’’ —বাউলিয়া মন্ত্র


-------------------------------------------------------------------

লেখক পরিচিতি:

কুলদা রায়: জন্ম ১৯৬৫ খৃস্টাব্দ

কুলদা রায় কথাসাহিত্যিক ও প্রাবন্ধিক। জন্ম বাংলাদেশের গোপালগঞ্জে। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (ময়মনসিংহ) থেকে পড়াশোনা করেছেন। থাকেন আমেরিকার নিউইয়র্কে। কথাসাহিত্যের ওয়েবম্যাগ গল্পপাঠের প্রধান সম্পাদক।

প্রকাশিত গল্পগ্রন্থ:মার্কেজের পুতুল ও অন্যান্য গল্প (২০২০); বৃষ্টি চিহ্নিত জল (২০১৫); কাঠপাতার ঘর (২০১৩); কাকমানুষের চকখড়ি (২০১০)। প্রবন্ধ গ্রন্থ: রবীন্দ্রনাথের জমিদারগিরি ও অন্যান্য বিতর্ক (২০১৫)।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ