কবির প্রথম কবিতা বই ‘বাদুড়ঝোলা গাছ’ এর পাণ্ডুলিপি থেকে কয়েকটি কবিতা প্রকাশ করা হ’ল।
আয়না
একমাত্র বিজ্ঞান হচ্ছে আয়না
যার সম্মুখ আছে পেছন নাই
যে ফুলের গাছ রসের যোগান দেয়
সেই ফুলের ঘ্রাণ বায়ুতে বাহির হয়
বাতাস আমার প্রিয় স্পর্শে আসে
নদী কিংবা ঢেউয়ের সাথে বাতাসের সম্পর্ক
চিরকাল আমাদের গায়ে পরিবর্তন দেখতে পাওয়া যায়
চিরকাল আমরা ক্ষিপ্ত পাগল থাকি
না পাওয়ার অভ্যাস কখনো পিছু ছাড়ে না।
পাহাড়ে ধাক্কা লেগে মেঘ ঝরনা হয়ে পড়ে
এই সপ্তম দৃশ্যের কাছে আমার সমস্ত চোখ বন্দি
হাহাকার না পাওয়া ধ্বনি উপত্যকায় ছড়িয়ে পড়ে
আমি বেদুইনের মতো ঘুরি যাযাবর
নিজস্ব তাঁবু ব্যতীত আচ্ছাদন নাই
তবুও আয়না জ্ঞান ভালোবাসি
দয়াল বন্ধু আমাকে দেখার আয়না দাও, দেখি।
----------------------------------------------------------
শুয়োর পেটা লাঠি
শুয়োর একপাল জন্তু-জানোয়ারের মধ্যে ঘৃণার্হ
এ পশুকে অনেকেই পোষ মানায়।
একপাল শুয়োর মাঠ চরাচ্ছে রাখাল উদোম গায়ে;
মাথায় লুঙ্গির পাগড়ি, কোমরে লেংটি পরা, হাতে লাঠি
হাঁকাচ্ছে বুলি--এ এই, হট্ হট্ ওই--ওই অ--অ ভয়ে ভট্ ভট্
শুয়োর--ঘোৎ-ঘোৎ, কোৎ-কোৎ চুক চুক কিচিরমিচির
পুঁচ-পুঁচ করে খায়, হাঁটে। তিনটি দৌড়ায় অন্যের কচু ক্ষেতে
আবার ধুপ ধুপ ধোলাই পড়ে শুয়োরের পিঠে আর গালি দেয়
শুয়োরকে বাচ্চা তেরে মাইকে ... হাম
কিসলিয়ে উসকা বাগিচামে গিয়া, উসকা ক্ষতি করে গা তু
শালা ভাগ।
কাদাওয়ালা জমিতে চোসে চুক চুক, গোঁদ গোঁদ
আবার লাঠি চলে ধমা-ধম, ধুপ-ধুপ
চার পায়ে শুয়োর দৌড়ায় মাথা হেঁট পিল-পিল
রাখাল দৌড়ায় খিল-খিল আনন্দ ধরে না, ফিক ফিক হাসে
ফের মারে লাঠি মাথায় লাগে শুয়োরটার, পড়ে যায়
রাখাল কাছে গিয়ে বলে, কেয়া হুয়া তেরা ওঠ। আহা ৎচ্ ৎচ্ ।
----------------------------------------------------------
পাগল স্রষ্টা
বহুদিন পর আবার শহরে পাগল দেখলাম দুই হাত উপরে তুলে স্রষ্টাকে ইঙ্গিত করছে
পৃথিবীতে নেমে আসবার জন্য--কিন্তু স্রষ্টা ব্যস্ত
তার ভাঙা-গড়ার কাজে, তাই আসতে পারলেন না।
পাগলের বার বার অনুরোধে স্রষ্টা বিরক্ত হলেন
তবু তার আপন কাজে মন বসালেন
পাগল কিন্তু ছাড়লো না, তাঁর দিকে তাকিয়েই থাকলো
তর্জনী উঁচিয়ে ইঙ্গিত করলো
একবার দুইবার বহুবার
ফলাফল বার বার একই রকম।
এইবার পাগল উলঙ্গ হয়ে প্রতিরূপ দেখাতে লাগলেন
স্রষ্টার অরূপ রূপের আঁচ।
আমরা ফিরছি পথ ফিরতি লোকের মতো ঘরে।
----------------------------------------------------------
বাদুড়ঝোলা গাছ
আমাদের আছে বাগান ঘেরা বাড়ি
বাগানের আছে প্রাচীর বেষ্টনি
আমাদের আছে নামাজ পুজার ঘর আমদের আছে সপ্তমি অষ্টমি
আমদের গাঁয়ে চৌদ্দসাধু'র গান
পালায় পালায় ভরিয়ে দিতেছে প্রাণ
দাঁড়িয়ে যেবা দেখছে বসে লোক ধেয়ানে সে গিলছে সম্ভোগ
হাল হকিকত একটি যমজ ভাই
তার তুলনায় এই দুনিয়ায় আরতো কিছু নাই!
আমাদের আছে দোতরা বাঁশির সুর
রাত্রি বেলায় রাখাল যেথা হেঁটে আসে বহুদূর
আমাদের আছে বাড়ির পাশের বাড়ি
আমাদের আছে বাদুড়ঝোলা গাছ
আমাদের আছে বক ও পুকুর দুই
আমাদের হইলি বন্ধু স্বজন তুই।
বাগানের আছে প্রাচীর বেষ্টনি
আমাদের আছে নামাজ পুজার ঘর আমদের আছে সপ্তমি অষ্টমি
আমদের গাঁয়ে চৌদ্দসাধু'র গান
পালায় পালায় ভরিয়ে দিতেছে প্রাণ
দাঁড়িয়ে যেবা দেখছে বসে লোক ধেয়ানে সে গিলছে সম্ভোগ
হাল হকিকত একটি যমজ ভাই
তার তুলনায় এই দুনিয়ায় আরতো কিছু নাই!
আমাদের আছে দোতরা বাঁশির সুর
রাত্রি বেলায় রাখাল যেথা হেঁটে আসে বহুদূর
আমাদের আছে বাড়ির পাশের বাড়ি
আমাদের আছে বাদুড়ঝোলা গাছ
আমাদের আছে বক ও পুকুর দুই
আমাদের হইলি বন্ধু স্বজন তুই।
----------------------------------------------------------
আদি অন্ত
নিজের বউ অন্যের চোখে আকৃষ্ট হওয়া ভালো
তাতে কিছুটা গর্ব হয় বুকটা ভরা ভরা লাগে
আমি যখন ক্রিম দেই মুখে আয়নায় নিজের বউ-কে দেখি
তাতে ভরে ওঠে মন
আমার বউ খুব সুন্দর
সুন্দরকে আমাদের আদিগন্ত ভালো লাগে।
কিন্তু সুন্দর আমাদের পিছু ছাড়েনা।
তাতে কিছুটা গর্ব হয় বুকটা ভরা ভরা লাগে
আমি যখন ক্রিম দেই মুখে আয়নায় নিজের বউ-কে দেখি
তাতে ভরে ওঠে মন
আমার বউ খুব সুন্দর
সুন্দরকে আমাদের আদিগন্ত ভালো লাগে।
কিন্তু সুন্দর আমাদের পিছু ছাড়েনা।
আমি বর্গা চাষীদের কথা জানি
তারা ফসল ফলায়, অন্যেরা তা তুলে নিয়ে যায়।
তারা গ্রাম ভালোবাসে
যে-কোনো দরিদ্রতার দর্শনে ক্ষুধা বাড়ে
যতই চাষাবাদ ব্যক্ত করো অধিকন্তু থাকেনা বড়াই।
তারা ফসল ফলায়, অন্যেরা তা তুলে নিয়ে যায়।
তারা গ্রাম ভালোবাসে
যে-কোনো দরিদ্রতার দর্শনে ক্ষুধা বাড়ে
যতই চাষাবাদ ব্যক্ত করো অধিকন্তু থাকেনা বড়াই।
মাঠের ভেতরে যারা লুকিয়ে রেখেছে ডিম
সেই সব ডিমে আছে কুসুমের প্রাণ
তবু পৃথিবীতে আমি কোনো নকল করবো না রে।
ঘাসের বংশ বৃদ্ধিতে আমার তেমন কোনো হাত নাই
জেনে আমি উলুবনে মুক্তা ছড়াই আর হরিণ লাফালাফি করে
সদাচার গলগন্ড হয়ে দেখা দেয়
করার আমার কিচ্ছু থাকেনা বাকি
এপাক ওপাক ঘুরপাক খাই
আর গোবাহাবা থাকি।
সেই সব ডিমে আছে কুসুমের প্রাণ
তবু পৃথিবীতে আমি কোনো নকল করবো না রে।
ঘাসের বংশ বৃদ্ধিতে আমার তেমন কোনো হাত নাই
জেনে আমি উলুবনে মুক্তা ছড়াই আর হরিণ লাফালাফি করে
সদাচার গলগন্ড হয়ে দেখা দেয়
করার আমার কিচ্ছু থাকেনা বাকি
এপাক ওপাক ঘুরপাক খাই
আর গোবাহাবা থাকি।
----------------------------------------------------------
আবাস
সে কোন প্রাচীন মৌজায় থাকি আমি
তিস্তা নদীর ধারে
সেথায় খলবল ঢেউ ওঠে
স্রোতে ভেসে যায় নৌকা ও বাঁশঝাড়।
প্রাচীন মৌজায় থাকি আমি
পুরনো অতীত কেবলি সম্মুখে আসে।
পুরাতন' এই শব্দটি আমায় বহুবার ভাবিয়েছে
তবুও তার প্রতি আমার অনেক টান।
আমার কলিগ টিয়া পোষে
তার কন্যাকে একটি কিনে দেয়
কিন্তু টিয়া তো একদিন খাচার বাইরে এসে
ওড়াউড়ি করতে করতে উড়াল দিলো
বাঁশ বেত শাল বাগানের উপর দিয়ে।
আমি হাটি অসুখে পাকা রাস্তায় খালি পায়ে
গাছের গুড়িতে বসে আছে অদ্ভুত রঙিন এক পাখি
পাখিটা আমি উক্ত বন্ধু কন্যাকে দান করতে চাইলাম।
----------------------------------------------------------
ঘাঘট
আজ নদীতে আষাঢ় মাস বহমান
ক্ষীণকায়া ; এক বস্ত্রে এসেছে সে এক বস্ত্রে যায়
চলো যাই- ও নদীতে, গতিবেগ দেখি ;
প্রণালী প্রখর স্রোত মৌসুম নির্ভর।
চলো যাই- ও নদীতে, গতিবেগ দেখি ;
প্রণালী প্রখর স্রোত মৌসুম নির্ভর।
অনুকথা গোপনে গোপনে বাড়ে ;
ঐতিহ্য সন্ধানে আজ নিযুক্ত কর্কশ কাক ;
সুচতুর গবেষক এই সব ফাঁক
কলম কালিতে ঢেকে রাখে
ঐতিহ্য সন্ধানে আজ নিযুক্ত কর্কশ কাক ;
সুচতুর গবেষক এই সব ফাঁক
কলম কালিতে ঢেকে রাখে
মৎস রান্না করি কিন্তু যন্ত্র কই?
ধীরে ধীরে শুরু হলো খনন প্রক্রিয়া
উঠে আসছে
শীর্ণ নদী
কাশবন
আর
সানাই
সুর।
উঠে আসছে
শীর্ণ নদী
কাশবন
আর
সানাই
সুর।
----------------------------------------------------------
![]() |
কবি মাহমুদ নাসিরের প্রথম কাব্যগ্রন্থ: প্রকাশকাল ২০২০ |
0 মন্তব্যসমূহ