![]() |
www.gotipoth.com |
২০২০ সালের শুরুতেই আমরা মানবজাতি অজানা ও নতুন ধরনের করোনাভাইরাসের কবলে পড়েছি। কোভিড-১৯ নামের এই ভাইরাসবাহী রোগের কারণে বিশ্ব-মহামারি আরো দীর্ঘ হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিশ্বের একটার পর একটা শহর বন্ধ হয়ে আছে। লকডাউনের এই কালে পুরো বিশ্ব কার্যত থেমে গেছে। দৈহিক বা সামাজিক দূরত্ব রেখে ঘরে ঘরে মানুষ স্বেচ্ছা বন্দিত্ব মেনে নিয়েছে। মানুষের এগিয়ে চলা থেমে থাকবার নয়। অন্তর্জাল মানুষকে সে সুযোগ দিয়েছে ফলে যোগাযোগ থেমে নেই।
যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম এখন ম্যাসেঞ্জার। ম্যাসেঞ্জারে হাই, হ্যালো চলতেই থাকে! কবি, কথাসাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী—কেউ বাদ পড়েন না। এসময়ে তাই শুধুমাত্র হাই, হ্যালো ছাড়িয়ে চ্যাটিং গড়াচ্ছে বিভিন্ন চিন্তামূলক আলাপে। সম্প্রতি কথাসাহিত্যিক মেহেদী উল্লাহ তাঁর ফেসবুক টাইমলাইনে এমনই চিন্তামূলক চ্যাটিং আয়োজন--'হাফ এন আওয়ার চ্যাটিং এবাউট কালচার' (Half an hour chatting about culture) প্রকাশ করছেন। বলে রাখা ভালো, আমাদের বিগতকালের লেখক-বুদ্ধিজীবীগণের সংস্কৃতি বিষয়ক বহুবিধ ও বহুমাত্রিক চিন্তা তাঁদের রচিত গ্রন্থগুলোতে প্রকাশ পেয়েছে। তাঁদের সময়ের চিন্তার সাথে বর্তমান সময়ের লেখক-বুদ্ধিজীবীর চিন্তার তূলনামূলক এই পাঠ এক অতি বড় সুযোগ। আমরা মেহেদী উল্লাহ’র এমন উদ্যোগকে খুব গুরুত্বপূর্ণ কাজ মনে করি। তাই এটির সংকলন ও প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছি। গতিপথ বাংলা ওয়েবজিনের আলাপ-সিরিজে প্রতি রবিবার মেহেদী উল্লাহ’র হাফ এন আওয়ার চ্যাটিং এবাউট কালচার এর একটি করে পর্ব প্রকাশিত হবে।
আলাপ সিরিজ : মেহেদী উল্লাহ’র হাফ এন আওয়ার চ্যাটিং এবাউট কালচার পর্ব-১
মেহেদী উল্লাহ’র টাইমলাইন: বুধবার, ১৩ মে ২০২০; রাত ১০ টা ৫০ মিনিট
আজ কথা হলো কবি, বুদ্ধিজীবী সাখাওয়াত টিপু (Shakhawat Tipu) ভাইর সাথে। আধঘণ্টায় সংস্কৃতি নিয়ে অনেক কথা হলো—
মেহেদী উল্লাহ : টিপু ভাই, ইউটিউবে ঢোকেন?
সাখাওয়াত টিপু : নাহ, কম খুব।
মেউ : আচ্ছা। কমের মধ্যে কী কী দেখেন?
সা টি : দার্শনিক, আর্টিস্টদের বক্তৃতা, ইন্টারভিউ এগুলো। মাঝে মাঝে গান, খুব রেয়ার। সিনেমা দেখি।
মেউ : যে দার্শনিকদের বক্তৃতা শোনেন, তারা বর্তমান পৃথিবীর সংকট নিয়ে কী বলতে চান? কী কী প্রশ্ন রাখেন? সংকট বলতে করোনা না। আমি বলতে চাচ্ছি, আরো সমস্যাসমূহ...
সা টি : কত বিষয়!
মেউ : যেমন?
সা টি : সংক্ষেপে বলা যাবে না।
মেউ : আচ্ছা। সংস্কৃতি নিয়ে কী বলেন? আপনার ভাবনার সঙ্গে মেলে?
সা টি : কোনো কোনো ক্ষেত্রে মিলে।
মেউ : কোন কোন ক্ষেত্রে, সংক্ষেপেই বলেন প্লিজ
সা টি : চিন্তার ইউনিটি আছে তো...
মেউ : ইউরোপীয় যে সাংস্কৃতিক তত্ত্বগুলো দিয়ে বাংলাদেশের সংস্কৃতিকে দেখা হচ্ছে, আপনি কি সেভাবেই দেখেন?
সা টি : নাহ। সবাই তো মানুষ
মেউ : কীভাবে দেখেন?
সা টি : মানুষ তো প্রকৃতির সন্তান। এটাই ইউনিভার্সল ফর্ম।
মেউ : হ্যাঁ, তাতে দেখতে অসুবিধাসমূহ কী? তাহলে তত্ত্বের সার্বজনীন অবস্থান নিয়ে আপনার দ্বিমত আছে?
সা টি : প্রথম জিনিসটা হচ্ছে, চিন্তার পদ্ধতি ধরা। মানে কোন প্রশ্ন, কোন সংকট মানুষ হিসেবে তাকে ভাবায়। দ্বিতীয় ব্যাপার হলো, যুক্তিগুলো কিভাবে সৃষ্টি হয়। তাতে কিভাবে উত্তর দেয়। এটা গুরুত্বপূর্ণ। মানুষ মাত্রই সীমাবদ্ধ প্রাণী। ফলে সব উত্তরের সঙ্গে একমত হতে হবে এমন কথা নেই। কিন্তু আইডিয়াটা কেমন সেটা দেখার আছে।
মেউ : আচ্ছা, ভাই। বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক রাজনীতি চিন্তায় কোন সংকটকে আপনি সামনে আনতে চাইবেন—যা কিনা মানুষকে দেশের প্রতি অবিশ্বস্ত করে তুলতে পারে? আসলেই কী নাগরিক ও রাষ্ট্রের অবিশ্বস্ততা বলতে কিছু হয়?
সা টি : রাষ্ট্রে বিশ্বাস বা অবিশ্বাসের জায়গা নাই। কারণ তার আইন তাকে বিশ্বস্ত করে রাখে। আইনের বাইরে ভেতরে যত এখতিয়ার। আইন মন্দ কি ভাল! জনগণের অধিকারের প্রতিফলন আছে কিনা! প্রশ্ন হচ্ছে, সরকার আর জনগণের তফাৎ। শাসন ব্যবস্থা পরিচালনার ক্ষেত্রে কতটুকু জনগণের সঙ্গে আছে সেটাই বিবেচ্য!
মেউ : এ অবিশ্বস্ততা নানামাত্রিক হতে পারে, যেমন, বিশ্ববিদ্যালয়ের যে ছাত্রটি ভাবছে সে শিক্ষার চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে গেছে, সে কি এখানে আসলেই সেই পর্যায়ে পৌঁছাতে পারছে? বা এই প্রক্রিয়া কী এক্সিস্ট করছে? নাকি ছলনার আশ্রয় আছে? এমন আরো হতে পারে, যে প্রক্রিয়ায় এখানে সেলিব্রেটি হচ্ছে, ব্যক্তিত্ব নির্মিত হচ্ছে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির দ্বারা—সেটা কি নাগরিকের জন্য যথাযোগ্য?
সা টি : এটা তো ব্যক্তি কিংবা সমাজের সমস্যা। রাষ্ট্রের সমস্যা না। যে সমাজ যেমন তার মূল্যবোধ তেমন। এমন কি তার সংস্কৃতিও তার বাইরে নয়। তবে এটা উৎপাদন সম্পর্কের মতো পরিবর্তনশীল।
মেউ : এজন্য কি বুদ্ধিজীবী হিসেবে আপনার আফসোস লাগে, না সমাধান খোঁজেন?
সা টি : আমার কোনো আফসোস নাই। বুদ্ধিজীবীর কাজ সমাধান দেওয়া নয়, চিন্তার আকার দেওয়াটা প্রধান কাজ। মানে জরুরি প্রশ্ন তোলা। সংকটকে চিহ্নিত করা। একজন বুদ্ধিজীবী শুধু চিন্তার বদল ঘটাতে পারে। কিন্তু সমাজ ও রাষ্ট্রের বদল ঘটায় জনগণ। বুদ্ধিজীবী জনগণের একজন মাত্র!
মেউ : বুদ্ধিজীবীর চিন্তা আর জনগনের চিন্তা—বাংলাদেশের ক্ষেত্রে কখনো মিলেছিল কি?
সা টি : সব সময় মিলবে এমন কথা নাই। তিনি সত্যের উপর দাঁড়িয়ে আছেন কিনা সেটা বড় জিজ্ঞাসা। মূলত জনগণের রাজনীতির উপর নির্ভর করে সকল ধরনের পরিবর্তন। জনগণ তার অধিকারের কি চায়, কিভাবে সেই পরিবর্তন ঘটাবে তার উপরই সর কিছু নির্ভর করে। মানে জনগণের নির্ভরতার জায়গা রাজনৈতিক দল।
মেউ : শেষ প্রশ্ন ভাই, একটা সংস্কৃতির চেহারা এমন হবে, এখন যেমন, সেই সংস্কৃতির জন্মের আগে কেউ ভাবতে পারে কি? আমাদের দেশে চর্চিত সংস্কৃতি সমূহের যমজ চেহারার দরকার আছে কি? মানে 'সাংস্কৃতিক ঐক্য' নামে যাকে ডাকা হয়?
সা টি : সংস্কৃতির ঐক্য থাকে ঐতিহ্যে। ঐতিহ্য হচ্ছে ধারাবাহিক কিংবা পরম্পরাগত। বড় প্রাকৃতিক বিপর্যয় ছাড়া, যা নাই তা দেখা যাবে না। মানে যা নাই তা সংস্কৃতি বলে বিবেচিত হয় না সাধারণত। বস্তুত মানুষ সংস্কৃতির ভেতরে বাঁচে। এটা দৃশ্যমান সংস্কৃতি বা অদৃশ্যমান সংস্কৃতি দুই হতে পারে।
শুরুর দিকে উত্তর সংক্ষেপে দিলাম কারণ রাস্তায় ছিলাম।
মেউ : এখন কোথায়? বাসায়?
সা টি : এখন বাসায়। ভালো থাকো।
মেউ : আপনিও। দেখা হবে ভাই। সাবধানে থাকবেন।
সা টি : তুমিও সাবধানে থাইকো।
মেউ : জি ভাই।
[চলবে]
অন্যপ্রান্তের লেখক:
![]() |
সাখাওয়াত টিপু ( জন্ম: ১৯৭১ সাল) |
লেখকের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি:
![]() |
মেহেদী উল্লাহ (জন্ম: ১৯৮৯ সাল) |
0 মন্তব্যসমূহ