bdtime

বঙ্গাব্দ ꘡

উনাদের (কলকাতা) দাদাগিরি আমল শেষ হবার পথে--উম্মে ফারহানা


যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম এখন ম্যাসেঞ্জার। ম্যাসেঞ্জারে হাই, হ্যালো চলতে থাকে! কবি, কথাসাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী—কেউ বাদ পড়েন না। হাই, হ্যালো ছাড়িয়ে চ্যাটিং গড়াচ্ছে বিভিন্ন চিন্তামূলক আলাপে। সম্প্রতি কথাসাহিত্যিক মেহেদী উল্লাহ তাঁর ফেসবুক টাইমলাইনে এমনই চিন্তামূলক চ্যাটিং আয়োজন--'হাফ এন আওয়ার চ্যাটিং এবাউট কালচার' (Half an hour chatting about culture) প্রকাশ করছেন। বলে রাখা ভালো, আমাদের বিগতকালের লেখক-বুদ্ধিজীবীগণের সংস্কৃতি বিষয়ক বহুবিধ ও বহুমাত্রিক চিন্তা তাঁদের রচিত গ্রন্থগুলোতে প্রকাশ পেয়েছে। তাঁদের সময়ের চিন্তার সাথে বর্তমান সময়ের লেখক-বুদ্ধিজীবীর চিন্তার তূলনামূলক এই পাঠ এক অতি বড় সুযোগ। আমরা মেহেদী উল্লাহ’র এমন উদ্যোগকে খুব গুরুত্বপূর্ণ কাজ মনে করি। তাই এটির সংকলন ও প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছি। গতিপথ বাংলা ওয়েবজিনের আলাপ-সিরিজে প্রতি রবিবার মেহেদী উল্লাহ’র হাফ এন আওয়ার চ্যাটিং এবাউট কালচার এর একটি করে পর্ব প্রকাশিত হচ্ছে।

আলাপ সিরিজ : মেহেদী উল্লাহ’র হাফ এন আওয়ার চ্যাটিং এবাউট কালচার পর্ব-৮

মেহেদী উল্লাহ’র টাইমলাইন: বৃহস্পতিবার, ২১ মে ২০২০; রাত ০৯ টা ১১ মিনিট

আজ থাকছেন কথাসাহিত্যিক Umme Farhana আপু। সংস্কৃতি নিয়ে কথা হলো তাঁর সঙ্গে—

মেহেদী উল্লাহ : আপনার জন্ম, বেড়ে ওঠা সবই ময়মনসিংহে। ব্রহ্মপুত্রকে স্থানীয়রা কি বলে, নদ না নদী?

উম্মে ফারহানা : নদীই বলে, নদীর জেন্ডার নিয়ে খুব বেশি ভাবিত মনে হয় না কেউ। লেখার সময় ফর্মাল জায়গায় নদ লেখা হয়।

মেউ : বলে নদী, লেখে নদ—এমন কেন ঘটছে?

উম্মে ফারহানা : বলে বলতে, রোজকার কথাবার্তায় বলে। যেমন - কই যাও? নদীর পাড় যাই। কিন্তু লেখার সময় কেউ লিখলে আরেকজন হয়তো ভুল ধরিয়ে দিল। আরে ব্রহ্মপুত্রের কথা হচ্ছে, এটা তো নদী না নদ। কিংবা বাচ্চারা ধাঁধা ধরে না, একটা মোরগ দেওয়ালের উপর ডিম পাড়ল, কোন দিকে ডিমটা পড়বে? (আসলে তো মোরগ ডিম পাড়ে না), তেমন ধরনের একে অন্যকে বোকা বানানোর জন্যে ধাঁধাও বানানো হতো। তারমানে সবাই জানে এটা নদ। কিন্তু কথ্য ভাষায় বলে না।
সম্ভবত নদ বলতে গেলে খুব কৃত্রিম শোনায়, সেজন্য। 'অনুষ্ঠান কোথায়? ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ে সাহেব পার্কে' ঠিক ভাল লাগছে না।
আমার ধারণা স্থানীয়দের প্রমিত ভাষা বলার প্রতি অনীহা রয়েছে, এজন্যই ব্যাকরণের প্রতি এই অনীহা। কিংবা উদাসীনতা।

মেউ : ছোটবেলায় এই নদী দিয়ে কোথাও গেছেন? দূরে, অন্য শহরে?

উম্মে ফারহানা : হ্যাঁ, তখন ব্রিজ ছিল না। ফেরি দিয়ে পার হয়ে ঈশ্বরগঞ্জ গেছি মামার বিয়েতে। সেটা একই জেলার মধ্যে হলেও দূরে মনে হতো। ফেরি চলতো তখন। বাস ট্রাক প্রাইভেট গাড়ি সবকিছু ফেরির উপর উঠে যেতো। আর ছোট নৌকায় করে যাতায়াত করা যেতো, কাচারিঘাট থেকে উঠে শম্ভূগঞ্জ গেলে, কিংবা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে বা মড়াখলায় নেমে গেলে- এমন আর কি।
এখনো কিন্তু ছোট নৌকায় পারাপার হয় যখন নদীতে পানি থাকে।
এই যে, নদী বলে ফেললাম 🙂এই যে পানি নাই, দুর্গাপূজার প্রতিমা বিসর্জন করা যাচ্ছে না- এটা খুব সাম্প্রতিক ঘটনা।
আমরা স্কুলে পড়ি সময় প্রচুর পানি থাকতো। সেপ্টেম্বর মাসে,১৯৯৮ সালে আমাদের এক ক্লাসমেট সুইসাইড করেছিল ব্রিজ থেকে লাফিয়ে। তার লাশ পাওয়া গেছে জামালপুর, ভাসিয়ে নিয়ে গেছে অতদূর। তুমি তো পানির দেশের মানুষ, নদী পুকুর, এসব তোমাকে টানে নিশ্চয়ই খুব। লেখক কবিদের মধ্যে এটা দেখেছি আমি। তোমার যেমন প্রথম উপন্যাসের নাম 'গোসলের পুকুরসমূহ'।

মেউ : হ্যাঁ, পানি পছন্দ। পানিওলা, আর কম পানিওলা ব্রহ্মপুত্রের পার্থক্য কী কী দেখা যাচ্ছে?

উম্মে ফারহানা : পানি কমে যাবার পর চর পড়ে গেছে মাঝখানে, দুই পাশ দিয়েও। অবৈধভাবে ভূমি দখলের প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।
পানি কম থাকাতে জলবায়ু পরিবর্তন হয়েছে । আগে এখানে এত শীত পড়ত না, গরমও না। ছোটবেলা আমরা একটা সোয়েটার পরে স্কুলে যেতাম। মাফলার কানটুপি হাতমোজা দরকার হতো না। আর শহরের ল্যান্ডস্কেপ পাল্টে গেছে। রেলির মোড় থেকে কাচারি যাবার পথে দেখবে, আগে বানানো বাড়িগুলো নদীর দিকে ফেরানো ছিল। যেমন একটা বাড়ি এখনো আছে, নাম পূর্বাশা। কিংবা সোনালি ব্যাংকের ভবনটা। এখন নদীর ধার দিয়ে বানানো হচ্ছে ঘরবাড়ি, রাস্তার দিকে মুখ করে।

মেউ : ব্রহ্মপুত্রের পারে আপনিসহ একবার সাতকালারের চা খাইছিলাম, মনে আছে?

উম্মে ফারহানা : বিপিন পার্কের ওইখানে না?

মেউ: হ্যাঁ। দেশের বিভিন্ন ঘাটে বা নদীর পারে সাতকালারের চা বেচতে দেখা যায়। সাধারণ চায়ের সাথে এর স্বাদে কি পার্থক্য? এর সাথে কি পানির কোনো সম্পর্ক আছে? নদীর কারবার যেমন পানি নিয়ে, তেমনি চায়েরও নানা রঙের পানি—

উম্মে ফারহানা : সাতকালারের চা আমি খাইনি, বিপিন পার্কের পাশে বিভিন্ন ধরনের চায়ের ব্যাপারটা ইদানিং দেখছি। আগে তো কড়া দুধ চা ছাড়া কোন চা দোকানে পাওয়াই যেতো না।
এই এলাকার মানুষ লিকার চাকে বলে লাল চা। মনে করে লাল চা খাওয়া একটা গরীব ব্যাপার। বরিশালের লোকজন যেমন ভাবে শুটকি খাওয়া মানে গরীবির লক্ষণ, যেহেতু প্রচুর তাজা মাছ পাওয়া যায়। এখানে দুধ চা না দিয়ে রং চা পরিবেশন করলে সেটা বেশ দুর্নামের ব্যাপার ছিল কিছুদিন আগেও। এখন তো সবাই স্বাস্থ্য সচেতন হয়েছে, গ্রিন টিও খায় অনেকে। আর পারটিকুলারলি ময়মনসিংহ এলাকার লোকের চা বিলাসের কথা যদি বলো, আমার মনে হয় এখানে অলসতার একটা ভূমিকা আছে। শহরে অনেক জায়গায় দেখবে শুধু চায়ের দোকান আছে,
আর কিচ্ছু পাওয়া যায় না, বনরুটি না, বিস্কুট না, সিগারেট পর্যন্ত না। শুধু চা বিক্রি করে তার ব্যবসা চলে, কারণ এখানে লোকজন খুবই অলস, সারাদিন আড্ডা দেয় আর চা খায়।
নদীর পাড়েই দেখবে, একটা দল দুপুরে বসেছে, বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে, এদের ওঠাউঠি নেই। আড্ডা দিচ্ছে তো দিচ্ছে। আমরা যেমন ট্রান্সপোর্ট গিয়ে শুধুই বসে থাকতাম। এরা নদীর পাড়ে এমন ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকে।
মনে হয় নদীর ঘাটগুলোতে বিভিন্ন ধরনের লোক সমাগম হয় বলে নানা পদের চা বিক্রি হবার সম্ভাবনা বাড়ে।
কিংবা চা বিক্রেতারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার সাহস পান।

মেউ : কিন্তু সে হিসাবে চায়ের ভান্ডে অত ভ্যারিয়েশন আসে নাই? নাকি?

উম্মে ফারহানা : না, তেমন আসে নাই। রাস্তার দোকানে রং চা পাওয়া যাচ্ছে এটুকু পরিবর্তনই অনেক বেশি মনে হচ্ছে আমার কাছে।

মেউ : কিন্তু যেহেতু প্রচুর চা খায়, সে হিসাবে চায়ের পাত্র কি বড় কিছুটা? না সাধারণ? নাকি বার বার চা খায় বলে কাপ ছোট?

উম্মে ফারহানা : চায়ের কাপ তো দোকানেরগুলো বাসার তুলনায় ছোটই, মানে মাঝারি। কলকাতার সঙ্গে তুলনা করলে অবশ্য বড় মনে হবে।

মেউ : কলকাতায় ছোট কেন?

উম্মে ফারহানা : কলকাতার লোকজন হিসাবী বলে মনে হয়। শুধু মাটির ভাঁড়ে দুধ চা খেয়েছিলাম দুই এক জায়গায়, সেটা বাদে অন্য সব চায়ের স্বাদ এবং পরিমাণ দুটোই কম ছিল। অথবা হতে পারে আরো অনেক বেভারেজ পাওয়া যায় বলে লোকজন চায়ে অতটা আসক্ত নয়। কেউ হয়তো গরমের দিনে এক গ্লাস লাস্যি খেয়ে নেবে চায়ের বদলে। ওদের ওখানে তো ভীষণ গরম পড়ে। ময়মনসিংহের নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়ায় বড় হওয়াদের জন্য সেটা আরো অসহনীয়।
বেকার ছেলেরা ১, ২ চা কিংবা ৩, ৪ চা খায় সেটা দেখেছ?

মেউ : সেটা কেমন?

উম্মে ফারহানা : মানে তিন বন্ধু চা খাবে, দোকানীকে বলল ২,৩ চা দাও। মানে ২ কাপ চা ৩টা কাপে খাবে। পাত্র খুব বেশি ছোট হলে তো এভাবে খাওয়া যেতো না।

মেউ : শহরের নানী/দাদি, মা/চাচিরা কি মৈমনসিংহ-গীতিকার কথা বলে এখন? নাকি ওইটা মিডলক্লাসের ড্রয়িংরুমের আলোচনা না?

উম্মে ফারহানা : মৈমনসিংহ-গীতিকার অনেক আলাপ রোজকার কথাবার্তায় বলে। যেমন, দেওয়ানা মদিনা বিশেষণ হিসাবে হয়তো বলল, কিংবা ভয়ংকর চেহারার কাউকে বলল হুমরা বাইদ্যার লাহান। খুব বেশি প্রচলিত যে তাও না।

মেউ : আচ্ছা, এইটা পূর্ববঙ্গের ইতিহাস, সংস্কৃতির সম্পদ—এই হিসেবে গর্ব করে? আর এমন আফসোস কি করে, দীনেশচন্দ্র সেন না হয়ে তাদের কোনো আত্মীয় কেন এটা সংগ্রহ ও সম্পাদনার দায়িত্ব নিলেন না?

উম্মে ফারহানা : আমি এই ধরনের আলাপ সেভাবে শুনিনি। ময়মনসিংহ এলাকার মানুষ হিসেবে আমাদের ভাষা নিয়ে, কিছু আচরণ নিয়ে অনেক বুলিয়িং শুনতে হয় তো, তাই এই সাংস্কৃতিক সম্পদের উদাহরণ টানতে যেতাম অনেক সময়। তখন আবার শুনতে হয়েছে এটা আমাদের সবার সম্পদ, এক ময়মনসিংহের হবে কেন? আর দীনেশচন্দ্রকে নিয়ে আফসোস চোখে পড়েনি। শুধু ময়মনসিংহ নয়, দেশের অন্যান্য অনেক জায়গায়ও অনেকেই পশ্চিমবাংলাকে শিল্প সাহিত্যের কেন্দ্র বলে ভাবেন।
সাংস্কৃতিক চর্চার স্ট্যান্ডার্ড ধরেন। ময়মনসিংহ এলাকার লেখক, তসলিমা নাসরিনকেই ধরো, বাড়িতে কথা বলতেন যাইবাম খাইবাম,শিক্ষিত পরিবারের হয়েও। কিন্তু লিখেছেন পাকা প্রমিত ভাষায়। কলকাতার ভাষাটাও এখনো তাদের কাছে শুদ্ধ। বাকি সব অশুদ্ধ ভাষা।
আঠারো বাড়িতে দেখবে একটা ড্রাই ক্লিনার্স আছে, নদীয়া শাল রিপিয়ারিং হাউজ। উনাদের পূর্ব পুরুষরা সম্ভবত সেখান থেকে এসেছিলেন, সেখানে একজন বয়স্ক ভদ্রমহিলা বসে থাকেন।
তাঁর সামনে একবার আলাপ করছিলাম, নদীয়া জায়গাটা কলকাতার কোনদিকে? উনি আমাদের আলাপ থামিয়ে বললেন, নদীয়া কলকাতায় না, সেটা অন্য একটা জায়গা, যে জায়গার ভাষা সবচেয়ে শুদ্ধ সেটাই নদীয়া। কলকাতার সঙ্গে নদীপথে যোগাযোগ নাকি আগে ছিল এই শহরের। বিস্তারিত জানি না।

মেউ : প্রজেক্ট কলকাতা—বাংলাদেশে কি বাস্তবায়িত হয়ে গেল নাকি? বিশ্ববিদ্যালয়ে বড়দের দ্বারা এবং সাহিত্যে বড় সম্পাদকদের আচরণে কতটা টের পান? তারা কি বুঝেন, কীভাবে কীভাবে অন্যের সংস্কৃতির ধারক হয়ে উঠেছেন তাঁরা?

উম্মে ফারহানা : আমার মনে হয় না। একটা হেজিমনিতে আমরা ঢুকে গেছি। ইদানিং কলোক্যালে লিখছেন অনেকে। কিন্তু দেখবে সেই কলোক্যাল সুপার ইম্পোজড। সেভাবে কথা তাঁরা বলেন না।
এবং কেউ বললে সেটা খুব প্রশংসা পায় না। তারমানে হলো প্রমিততে লিখব না, তাই একটা কৃত্রিম ভাষা তৈরি করে নিচ্ছি। কলকাতার স্ট্যান্ডার্ড ভাষার বিপক্ষে যাবার জন্যেই যাওয়া। এতে করেও কিন্তু একভাবে সেই ভাষাটাকে গুরুত্বপূর্ণ করে তোলাই হচ্ছে। আর কিছু না।
যদি আমরা নিজস্ব ভাষারীতিতে অকুণ্ঠভাবে বলতে লিখতে পারতাম তাহলে আমাদের নিজস্বতা দাঁড়াতো। পশ্চিম বাংলায় এখন কেমন কাজ হয়? মানে লেখক বা পাঠক না, সমালোচক হিসেবে তোমার কী মত? গতবারে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বাংলার ছাত্রকে পেয়েছিলাম। সে বলল, 'কিচ্ছু হচ্ছে না'! আমারও মনে হয়, উনাদের দাদাগিরি আমল শেষ হবার পথে। এটা আমরা, মানে অনেক বড় পত্রিকা আর বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টাররা, বুঝতে পারছিনা। খুব উল্লেখযোগ্য সাহিত্য সৃষ্টি যদি হয়েও থাকে, কেন্দ্রে তারা নেই।

মেউ : আমি অনেক বছর হয় তাদের কিছু পড়ি না, প্রবন্ধ পড়ি কেবল। কবিতা, গল্প, উপন্যাস পড়া হয় না। তাদের ফিল্ম দেখি। তবে ভাষার জায়গা থেকে কিছুকে নিই না, আর্টের জায়গা থেকে নিই, চিন্তাটা বুঝার চেষ্টা করি। হ্যাঁ, 'দাদাবাদ' নিয়ে আমিও ভাবি, শেষ ওই থিওরি!

উম্মে ফারহানা : সমসাময়িক পশ্চিম বাংলার লেখা আমি অবশ্য খুব বেশি পড়িওনি। সেজন্যই তোমার মত জানতে চাইলাম একাডেমিয়াতে ওই বাংলার গুরুত্ব কেমন? মানে সিলেবাসে রাখা নিয়ে? আমাদের দেশের বাংলা ভাষা সাহিত্য বিভাগগুলো এটাকে কীভাবে ব্যলান্স করে? নাকি এটা নিয়ে চিন্তার কিছু নেই? সবই পড়বে, সব ভাষারীতিই লিখবে, যার যা ইচ্ছা।

মেউ : এখন তো দেখছি, বাংলা-সাহিত্যের মধ্যে বাংলাদেশিরা প্রবেশ করছে আস্তে আস্তে, তবে সেটা সবখানে সমান না। সম্ভবত, একটি, দুইটি বিশ্ববিদ্যালয় এগিয়ে আসছে। অন্যরা এই হেজিমনি থেকে বের হতে পারবে না এত সহজে, বা বের হয়ে হ্যান্ডেল করার সাহসই পাবে কই, সেভাবে প্রস্তুতও হয় নি সংশ্লিষ্ট বাহকরা, এছাড়া সাংস্কৃতিক রাজনীতি তো আছেই, সহজ হবে না।

উম্মে ফারহানা : সিলেবাসে পাঠ্য যদি ওই বাংলার কন্টেন্ট বেশি থাকে তাহলে শিক্ষার্থীদের মনেই হবে ওটা সেন্টার, আর বাকি যা আছে সব মার্জিনে। তাদের ভাষাটা 'শুদ্ধ' আমাদেরটা অশুদ্ধ।
কলকাতায় গিয়েও অনেককে দেখি সেই ভাষায় কথা বলেন এবং খুব গর্ব করেন, 'আমার কথা শুনে তো ওরা বোঝে না আমি বাংলাদেশের'। বুঝলে কী? এত হীনমন্যতা কেন আমাদের? আমাদের ভাষায় যে বৈচিত্র্য আছে, তাদের তো সেটা নেই। কিংবা সাহিত্যের উপাদানেও কি খুব বৈচিত্র্য আছে কি? আমার তো মনে হয় তাদের ফিল্ম, গল্প উপন্যাস,গান সবকিছু কলকাতাকেন্দ্রিক। মানে একটা শহরের কথাই শুধু!

মেউ : হ্যাঁ। লেখকদের কেউ কেউ বের হয়ে এসেছেন নদীয়া-ভাষা থেকে। কিন্তু একাডেমিতে শিক্ষকরা আর্টিকেল লিখছেন ওই ভাষাতেই, মানে শুদ্ধ ভাষায়। একাডেমিক বই-পুস্তকও তাই। শিক্ষার্থীরা পরীক্ষাও দিচ্ছে প্রমিত ভাষায়। এখন ওপরের কাঠামো না বদলালে তো শিক্ষার্থীরা বদলাবে না। আপনার কি মনে হয়, শিক্ষার্থীদের খাতায় ভাষা বদলানোটা কি এত সহজে হবে?

উম্মে ফারহানা : না, সহজ হবে না। একেবারেই না। শুদ্ধবাদীরা মুখের ভাষায়ও 'নাই' শুনতে নারাজ, 'নেই' বলতে হবে। আর খাতায় তো নিশ্চয়ই আরো বেশি কড়াকড়ি থাকবে। আমার মনে হয় এখানে একটা চ্যালেঞ্জ আছে। সেটা হলো, আমাদের ভাষার বৈচিত্রটাই আমাদের দুর্বলতা।

মেউ : না, আমারও মনে হয় নেই-ওলারা ভাববে সব শেষ হয়ে গেল! অনেক ধন্যবাদ আপু, সময় দেওয়ার জন্যে।
উম্মে ফারহানা : তোমাকেও ধন্যবাদ।


ᕫᕬᕫᕬᕫᕬᕫᕬᕫᕬᕫᕬᕫᕬᕫᕬᕫᕬᕫᕬᕫᕬᕫᕬ
অন্যপ্রান্তে: উম্মে ফারহানা গল্পকার, পেশায় শিক্ষক। জন্মস্থান ময়মনসিংহ শহর। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগে ইংরেজি সাহিত্য পড়ান। প্রকাশিত গল্পগ্রন্থ: দীপাবলি (২০১৬)।
ᕫᕬᕫᕬᕫᕬᕫᕬᕫᕬᕫᕬᕫᕬᕫᕬᕫᕬᕫᕬᕫᕬᕫᕬ

লেখক পরিচিতি:
মেহেদী উল্লাহ জন্ম:১৯৮৯ সাল
মেহেদী উল্লাহ বাংলাদেশের কথাসাহিত্যিক। জন্মস্থান নোয়াখালীর সুবর্ণচর, বেড়ে ওঠা চাঁদপুরের কচুয়ায়। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা শেষে বর্তমানে জাতীয় কবি কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে ফোকলোর বিভাগে শিক্ষকতা করছেন। তিরোধানের মুসাবিদা (২০১৪) তাঁর প্রথম গল্পগ্রন্থ। তিরোধানের মুসাবিদা গ্রন্থের পান্ডুলিপির জন্য তিনি জেমকন তরুণ কথাসাহিত্য পুরস্কার-২০১৩ অর্জন করেন। প্রকাশিত অন্যান্য গল্পগ্রন্থ: রিসতা (২০১৫), ফারিয়া মুরগীর বাচ্চা গলা টিপে টিপে মারে (২০১৬), জ্বাজ্জলিমান জুদা (২০১৭), অনুমেয় উষ্ণ অনুরাগ (২০১৯)। প্রথম প্রকাশিত উপন্যাস: গোসলের পুকুরসমূহ (২০১৮)। প্রবন্ধ গ্রন্থসমূহ: ফোকলোরের প্রথম পাঠ (২০১৫), ফোকলোর তত্ত্বপ্রয়োগচরিত (২০২০), লোকছড়া: আখ্যানতত্ত্বের আলোকে (২০২০), নজরুল বিষয়ক সংকলন চর্চার ধরন (২০২০)।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ