bdtime

বঙ্গাব্দ ꘡

অন্ধকার সিরিজের পাঁচটি কবিতা ꘡ কুমার দীপ

অন্ধকারের মালতিগুচ্ছ


এক 

আঁধার আমার শ্যামের বাঁশি
আঁধার আমার রাধা
আঁধার রাতের বুকের ভেতর
হৃদয় আমার বাঁধা।

আঁধার আমার শকুন্তলা
আঁধার অলোকাপুরি
আঁধার রাতের বুকের ভেতর
অতল-ভুবন ঘুরি।

আঁধার আমার প্রমিথিউস
আঁধার ফিনিক্স পাখি
আঁধার রাতের বুকের ভেতর
আলোর স্বপ্ন আঁকি।

আঁধার, তুমি কাছেই থাকো
বুকের মাঝে শুয়ে
তোমার কাছে জীবনখানি
সঁপেছি খুব নুয়ে।



দুই

অন্ধকার দাঁড়িয়ে থাকে ল্যাম্পপোস্ট হয়ে
অন্ধকার মানুষের মতো হেঁটে যায়
আলাদিনের চেরাগ হাতে পেয়ে
অন্ধকারটা চাকা লাগিয়েছে পা’য়।

ঝলমলে ওই শপিংমলে

তাপ নিরোধক অফিসরুমে
নানান রকম ভাষণ মঞ্চে
অন্ধকারই নিপুণ ছবি আঁকে;

তোমরা যারা সোনার বালক

সোনালি বালিকা সাজো; শোনো--
তোমাদের এই নাচের শহরজুড়ে
অন্ধকারই দেবতারূপে থাকে।




তিন

আলোর কথা বলতে গিয়ে দেখি
চতুর্দিকটা অন্ধকারে ঢাকা
আঁধার যখন রাজাধিরাজ
চোখদুটোকে আজুল ক্যানো রাখা !

অন্ধ চোখে শুয়ে শুয়ে

বন্ধ ঘরে, দ্বিপ্রহরে
            অন্ধকারেই কলম চালাই
অন্ধকারের বুকের ভেতর 
চুপসে থাকা একতারাতে
            বেসুরো এক আগুন জ্বালাই।





চার

অন্ধকার নয়
কখনও কখনও আলো জ্বালাতেই ভয়

আলো জ্বললে কেউ না-কেউ

দেখে ফেলবে-
             ক্লিন্ন এই মুখ
             শরীরজোড়া কঙ্কাল
কারো না-কারো মনে হবে
মানুষ তো নয়-
             লোকটা কেবল
             অথর্ব এক- জঞ্জাল।

অন্ধকার নয়

কখনও কখনও আলো জ্বালাতেই ভয়
আলোর পোশাকে
অন্ধকারের দানবজন্ম হয়।



পাঁচ

সবাই ভাবছে দিনের শেষে
নামছে কেবল রাত
আমার কিন্তু শরীরজুড়ে
অন্ধকারের হাত।

শুধুই কি-গো শরীরজুড়ে ?

মনে কি নেই আরো ?
শরীরটাকে সরিয়ে দ্যাখো
আঁধার হবে গাঢ় !

আবার যখন সকাল হবে

রাতটা কি হবে শেষ ?
বুকের মাঝে রইবে জেগে
আঁধার অনিঃশেষ।

তোমরা ভাবছো দিনের শেষে

নামছে শুধুই রাত,
আমার কিন্তু হৃদয় জুড়ে
অন্ধকারের হাত !



লেখকের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি:
কুমার দীপ (জন্ম ১৯৭৮ সাল)
কুমার দীপ কবি ও গদ্যকার।
জন্মস্থান বাংলাদেশের সাতক্ষীরা। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে পড়াশোনা করে বর্তমানে বাগেরহাটে শিক্ষকতা করেন।
প্রকাশিত কবিতাবই: কোথাও কোনো মানুষ নেই (২০১০), ঘৃণার পিরিচে মুখ (২০১৫), রটে যাচ্ছে আঁধার (২০১৭),
মাতাল রাতের চাঁদ (২০২০), অন্ধকারের মালতিগুচ্ছ (২০২০)[যন্ত্রস্থ]
প্রবন্ধ-গ্রন্থ : নান্দনিক শামসুর রাহমান (২০১২), আধুনিক বাংলা সাহিত্য : পাঠ ও প্রতিকৃতি (২০১২), অনন্য শামসুর রাহমান (২০১৫), বাংলা কবিতায় ঐতিহ্য ও অন্যান্য অনুষঙ্গ (২০১৬)
গল্পগ্রন্থ : ভালোবাসার উল্টোরথে (২০১৪)

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ