bdtime

বঙ্গাব্দ ꘡

বায়েজিদ বোস্তামী’র গল্প ꘡ পারাপার

বায়েজিদ বোস্তামী


মরবার জন্য অন্য কোনও দিন বেছে নিতে চাইতো সে। এই ঘোর বরষার দিন বাদে অন্য যেকোনো দিন—হতে পারতো সেটা শীতের আগমনী বার্তাবাহী কার্তিকের কোনওদিন বা মাঘের তীব্র হিমেল কোনও দিন কিংবা চৈত্রের ধুলো-ওড়া দিন। বেঁচে থাকতে মরণ নিয়ে কখনো ভাবেনি সে। ভাবলে হয়তো কার্তিকের দিনই মরবার জন্য পছন্দ করতো। উঠানে মাড়াইয়ের জন্য ঢিবি করে রাখা ধানের মাতলা সুঘ্রাণ আসছে; তার সাথে যুক্ত হয়েছে পাশের ন্যাড়া ধানখেত থেকে উঠে আসা সদ্যকাটা ধানগাছের না-শুকানো কষ-কষ ঘ্রাণ; পাতলা কুয়াশা ভাসছে বাড়ির আশেপাশের খোলা মাঠে, খেতপ্রান্তরে এবং ধরা যাক, সময়টা সন্ধ্যা, মাগরিবের আযান পড়ছে পাড়ার মসজিদে। ছকু মোয়াজ্জিনের খোনা স্বরের আযান, মাইকের সুবাদে ছাড়িয়ে যাচ্ছে পাড়াকে পাড়া!

উঠানে পাতা টঙে বসে-বসে এইসব ভাবছিলো সাকিজল। সারাদিন ধরে থেমে থেমে ঝরবার পর একটা বিরতি চলছে বিষটির। টঙের ওপরের সিঁদুরে আমগাছের কালচে সবুজ পাতাগুলো চকচকে হয়ে উঠেছে। শ্রাবণ মাস পড়েছে দিন কয় আগে। এ-গাছে এখনো আম রয়ে গেছে। শ্রাবণের শেষ অবধি থাকবে। বাড়ির তো বটেই, পাড়ার সব গাছ আম দেওয়া শেষ করলে পর সিঁদুরে লক্ষ্মী আম দিতে শুরু করে। বরাবর এ-ই দেখে আসছে সাকিজল। এবারও ব্যতিক্রম হয় নাই।

বাড়িময় এখনো একগাদা লোকের ভিড়। মূলত ভোর থেকেই ভিড়টা চলছে। কমছেই না। ক্রমে কমে আসবে আশা করা যায়। বিকেল ফুরালেই ঝুপ করে সন্ধ্যা নামবে। দূর থেকে যারা এসেছে, তাদের মধ্যে ইতোমধ্যেই ফেরবার তাড়া লক্ষ করা যাচ্ছে। এতো ভীড়ভাট্টা কোনওকালেই পছন্দ নয় সাকিজলের। জীবিত থাকতে পছন্দ তো ছিলোই না, এখন মরে গিয়েও পছন্দ করতে পারছে না। অবশ্য মরে যাওয়া ব্যাপারটা-ই ঠিক বুঝে উঠতে পারেনি সে। ধাতস্থ হতে সময় লাগবে মনে হচ্ছে।

পিন্টুকে দ্যাখা যাচ্ছে টলোমলো পায়ে উঠানের কিনারের দিকে দৌঁড়াচ্ছে। সদ্য ঠিকঠাক হাঁটতে শিখেছে ছেলেটা। এই সময়ে বাচ্চাদের পা অস্থির থাকে। ছোটাছুটির মধ্যেই থাকে সারাক্ষণ। প্রাক-শৈশবের প্রায় জড়জীবনের পর নোতুন পাওয়া আনন্দেই হয়তো। নজরদারির মধ্যে রাখতে হয়। টঙে বসা সাকিজল উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে। যেহেতু, আশেপাশে কাউকেই পিন্টুর দিকে খেয়াল রাখতে দ্যাখা যাচ্ছে না।

'এই চ্যাংড়াক নিয়া আর পাওয়া গেইল না। কোনটে না কোনটে যাবার নাগচে। যমের বাড়ির চাইরও ভিতি তো পানি আর পানি। ডুবি মরার হাউস হইছে নাকি ব্যাটার মোর। উয়ার মাও মাগী-ই ব্যান কোনটে সন্দাইছে!—বিড়বিড় করতে থাকে সাকিজল।

শেষরাত থেকেই মুহুর্মুহু অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছে মমেনা। দাঁতকপাটি লেগে পড়ে থাকছে। এরমধ্যে কেউ যদি দাঁতের পাটির মধ্যে চামচ ঢুকিয়ে লেগে থাকা কপাট খুলে-টুলে দিয়ে, মুখে পানির ঝাপটা দিয়ে হুঁশ ফেরাচ্ছে তো সাথে সাথেই 'ও বাবাগো, মোর কী হইল গো!' 'মোর পিন্টু কাক আব্বা ডাকপে গো!' 'পিন্টুর বাপ, হামাকগুলাক ফ্যালে থুয়া তোমরা কোনটে গেইনেন গো!' ইত্যাদি বিলাপ করতে করতে ফের অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছে।

মাগীর গলা আর গতরের জোরের তারিফ না করে পারে না সাকিজল। না, বাপু, তার পক্ষে এরকম লাগাতার কান্নাকাটি করে যাওয়া সম্ভব ছিলো না।

শেষ পর্যন্ত কী মনে করে পিন্টু উঠান কিনারের দিকে না গিয়ে, আঙিনার দিকে দৌঁড়াতে শুরু করে। সাকিজলও টঙ থেকে উঠে ছেলেকে অনুসরণ করে আঙিনার দিকে এগোয়। আঙিনায় আগত সাগাইসোদর আর প্রতিবেশীদের একাংশের ছোট্টো একটা জটলা দাঁড়িয়ে গেছে মমেনার বিলাপ ও বেহুঁশ হওয়াকে কেন্দ্র করে। সে জটলার কেউ কেউ ব্যস্ত হয়ে পড়েছে হুঁশ ফেরাতে ও হুঁশ ফিরলে রীতিমতো উপভোগ করছে বিলাপগীতি। পাড়ায় মমেনার সখী হিশেবে পরিচিত ছবিতন তো নিজেও যোগ দিলো মমেনার সাথে। য্যানো পাড়ার কোনও বিয়েবাড়িতে দুই সখীতে গীত গাইতে লেগেছে! এ-পর্যন্ত ঠিকই লাগছিলো ব্যাপারটা। তার মৃত্যুতে বউ যে কষ্ট পাচ্ছে, নিজেকে একা এবং অসহায় ভাবছে—এতে তৃপ্তি-ই পায় সাকিজল। এমনিতে যা ধার মাগীর!

মেজাজটা সপ্তমে চড়ে যখন মমেনার বেহুঁশনাট্য ও বিলাপগীতি উপভোগের জটলায় একটি-দু'টি করে জোয়ান পুরুষও ঢুকে পড়ে। তা সে মাগীরও আক্কেলহিঞ্জার যদি কিছু থাকে! শাড়ির আবরণ বুকের ওপর থেকে কখন সরে গেছে, সে খেয়াল নাই। ব্লাউজের নিচের দিকের একটা বোতাম খোলাই ছিলো এইসব হুজ্জোতে, এরমধ্যে পিন্টু হারামিটাও আবার জটলা ঠেলে মায়ের কাছে ভেড়ে এবং বাকি বোতামগুলো খুলতে লাগে। মমেনার স্ফীত স্তনযুগের আটআনা উন্মোচিত হয়ে পড়ে। পিন্টু দুধের শিশু। তারই বা কী দোষ! কিন্তু জটলার মধ্যে ঢুকে পড়া জওয়ানদের কি সদ্য স্বামীহারার শোক বা দুধের শিশুর খিদে বুঝবার বিবেচনা আছে আদৌ? একেকটার চোখ কোটর থেকে ঠিকরে বেরোচ্ছে লাগে সাকিজলের। জটলামধ্যে পিয়ারুকে আবিষ্কার করবার পর কষে একটা লাথি মারতে ইচ্ছে করে মমেনার পাছায়। 'নাটক শুরু করছে নাঙের ঘরে জন্যে। বারোভাতারি কোনঠাকার!'—গজরাতে থাকে সাকিজল।  চারদিকে এক ঝলক তাকিয়ে ছবিতন-ই বরং নাক থেকে সিকনি ঝাড়তে ঝাড়তে সখীর বুক ঢাকতে ব্যস্ত হয়। এইবার বাধাপ্রাপ্ত পিন্টু কান্না জুড়ে দ্যায়!

জটলামধ্যে পিয়ারুর সরু নযর চোখে পড়ে না আর, দেখে কিছুটা স্বস্তিবোধ করে সাকিজল। যুগপৎ ক্রুদ্ধ ও বিরক্ত সাকিজল নিজেদের শোবার ঘরের বারান্দায় বসে পড়ে। পিপাসার্ত বোধ করে সে। বোধহয় ঝিমুনিও আসে খানিক।

গতকাল বিকেলেই পিয়ারুকে নিয়ে একচোট হয়ে গেছিলো মাগভাতারে। দুপুরে খাবার পর দোকান যায়নি আর সাকিজল। একটু গা এলিয়ে দিয়েছিলো বিছানায়। চোখটাও লেগে গিয়েছিলো আলবাত। সে-ই ভাতঘুম ভাঙতে-ভাঙতে আছরের ওয়াক্ত পার হয়ে গেছে কখন টেরই পায়নি। উঠে কিছুক্ষণ ভ্যাবলা মতো হয়ে থাকে। 'এহহে, বিকালের দোকানদারি মাটি হয়া গেইল আইজ!'—ভাবে সে। অবশ্য সেই অনুতপ্ত দশা বেশিক্ষণ স্থায়ী হয় না। বিছানা থেকেই পিয়ারু আর মমেনার উচ্ছ্বসিত হাস্যধ্বনি শুনে মনে-মনে ক্ষেপে যায় রগচটা, সন্দেহপ্রবণ সাকিজল।

বউ, বাপের পছন্দেই আনা। মুশকিলটা বাধে বউ যখন সাকিজলেরও পছন্দের হয়ে ওঠে। বলতে নেই, মমেনার প্রেমে পড়েছে সাকিজল। দেখনদারি সুন্দরী না মমেনা। বরং গায়ের রঙ চাপা-ই তার, আর নাকটাও টিকোলো না, গায়েগতরেও ছোটোখাটো গড়নের। চোখে পড়বার মধ্যে আছে কেবল স্বাস্থ্য। তা-ই বলে যাকে বলে ধুমসি তা নয় মমেনা, আটোসাঁটোই। তবুও লাগে যে ফেটে পড়বে যেকোনো মুহূর্তে। মশকারি করে বউকে বিচিকলাও ডাকে সাকিজল প্রায়শই। চোখেও কী য্যানো আছে বউয়ের! কী আছে, সেটা অবশ্য পাক্কা বছর পাঁচেক ঘর করে, পিন্টুর বাপ বনেও বুঝে উঠতে পারেনি।
আর হ্যাঁ, জিভ আছে মমেনার। বড্ডো ধারালো সে জিভ!

গোরুকে পানি খাওয়াতে গিয়ে মমেনা হয়তো পিয়ারুর সাথে ভাবী-দেওর সুলভ—পিয়ারু চাচাতো ভাই তো সাকিজলেরই—মশকারি করছিলো কোনও। তাইতেই হয়তো অই উচ্চস্বর হাসি। এইটুকুও সহ্য হয় না সাকিজলের। মমেনার বুঝতে-না-পারা চোখকে তার উড়ালপাখিই লাগে বরাবর। আর এই সন্দেহেই জীবন জেরবার!
'কী রে ঢলানি, বাড়িত কি আর কোনও কাম নাই তোর? না বাইরোতে থাকপু আইজক্যা!'—হাঁক ছাড়ে সাকিজল। মমেনাও জিভের কারুকাজ শুরু করে দ্যায় তৎক্ষণাৎ—'আলসিয়া মড়াটা দিনভর নিন পাড়ি এলানি উঠি দ্যাখো ক্যামোন ক্যাটক্যাটানি শুরু করছে। মরেও না ওটা। মোর গাও জুড়াইলা হয় তাহইলে!' গজগজ করতে করতে আঙিনায় ঢোকে মমেনা। একলাফে ঘরের বাইরে বেরিয়ে মমেনার চুলের ঝুঁটি ধরে সাকিজল। ঝটিতি কিছু উত্তমমধ্যম জোটে মমেনার। এবং বউ পিটিয়ে যুগপৎ ভীত ও লজ্জিত সাকিজল আঙিনার দড়িতে ঝোলানো শার্ট টেনে নিয়েই বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ে!
ফেরে শেষরাতে। নিজ পায়ে নয়। ঘাট অবধি ভ্যানে। ঘাট পেরোবার পর মৃত সাকিজলকে বাড়ি দিতে আসা লোকেদের কোলে।

রাতে দোকান বন্ধ করবার পর ইয়ার-দোস্তের সাথে মউজমাস্তির তালাশে গেছিলো সাকিজল। মন মেজাজ ভালো ছিলো না যেহেতু। টুয়েন্টি নাইনের আড্ডায় ঠিক পোষাচ্ছে না টের পেয়ে আনমনা সাকিজলকে জায়গা মতো নিয়ে যায় মিঠু। অই একটু গলা ভেজাতে আর কি! মাসে দুয়েকবার এই ঠেকে আসা-ই লাগে তার। বউ পেটানোর দিনে তো অবশ্যই। আর যা-ই হোক, একটু টাল না হলে ব্যাটাছইল তো আর বেটিছইলের পায়ে পড়তে পারে না! সে যতোই রাতগভীরে নিজ ঘরের নিভৃতিতে হোক! বলা চলে মানভঞ্জনের দায়ে-ই গেলে সাকিজল। কালকে রাতে কি একটু বেশি গিলেছিলো! বুকে সামান্য ব্যথা হলো। তারপর আর কিছু না। ব্যস! মরণ এতো সহজ! টের-ই পাওয়া গেলো না। অবাকই হয়েছিলো সে।

নিজে টের না পেলেও মরবার পর থেকেই অন্যদের আচরণে বেশ টের পাওয়া যাচ্ছে ব্যাপারটা। য্যামোন, সাকিজলের হৃদস্পন্দন থেমে গেছে এটা টের পাওয়ার পর-ই ঠেকের মালিক আকালু 'মুই এ্যাকনা মুতি আইসো রে, মিঠু। তুই বইসেক। আসি একটা ব্যবস্তা করমো এ্যালা দুইজনে মিলি। মড়া তো এ্যাটে থোওয়া যাবার নয়। ফ্যাচাং হইবে!'—বলে সে-ই যে গেছে, আর ফেরেনি। অন্তত মিঠুর ফোনকলে জাহিদুল ভ্যান নিয়ে আসা অবধি তো নাই-ই। দিনকয়েকের মধ্যে এলাকাতেই ফিরবে বলে মনে হয় না সাকিজলের। পলায়নোদ্যত আকালুর ভাবগতিক দেখে সাকিজলের হো হো করে হেসে উঠতে ইচ্ছে করেছিলো একবার। না, আকালুর মালে গোলমাল ছিলো না, গোলমালটা সাকিজলের কলকব্জার-ই ছিলো। পারলে নিজে আকালুকে খুঁজে বের করে একথা জানাতো সে।

কিংবা সাকিজলের বাবার কথা-ই ধরা যাক। সত্তরোর্ধ্ব মানুষটা আজকে দুপুরে ঝিরঝিরে বিষটির ভেতরে জানাযার নামাযের আগে যখন সমবেত লোকদের সামনে গিয়ে দাঁড়ালেন, নতমুখে, সত্যি বলতে কি, সাকিজলের মন খারাপ হয়ে গেছিলো। 'আব্বা কি জোয়ান ব্যাটার আগে চলি যাওয়া নিয়া শরমত পড়ছে! বুড়া হয়াও তাই বাঁচি থাকিল ইয়ারে জন্যে শরম পাইতোছে মানুষটা। আহহারে!'

বাপের সাথে সম্পর্কটা একটু দূরেরই তার। এক প্রকার শৈশবেই মা চলে গেলে পর বাপকে তালুই-ই জানে সে। না, অই অর্থে পর হন নাই বাপ। তবু বেশ বয়সে বিপত্নীক হবার পরও বছর বারো-পনেরোর মধ্যেই একে একে গুটিকয়েক বিয়ে করেছেন ভদ্রলোক। প্রথম স্ত্রীর মৃত্যুশোক পরবর্তীতে দারপরিগ্রহন না-করবার ভেতর দিয়ে জিইয়ে রাখবার প্রচলিত বা প্রত্যাশিত পথে হাঁটেন নাই, দাম্পত্য জীবন চালু রেখেছেন। এই নিয়ে বড়ো মেয়েদের ও তাদের জামাইদের লজ্জার কারণ আর নাতিনাতনিদের হাস্যরসের খোরাক তো হয়েছেনই।

মায়ের মৃত্যুর পর বড়ো বোনের কাছে মানুষ সাকিজলকে কৈশোরেই নিজের কাছে নিয়ে এসেছেন। সৎ মায়েদের উপরেও নযরদারি করেছেন যথাসম্ভব যাতে মা-হারা ছেলের অযত্ন না হয়। এতে বরং সাকিজলের বখবার পক্ষেই সুবিধে হয়। পড়াশোনার পাট দ্রুতই চুকিয়ে ফেলে সে। বদসঙ্গেও জড়ায়। খোদার খাসির মতো ইতিউতি ঘোরাঘুরি করতে শুরু করলে বাপ প্রথমে বাজারে দোকান খুলে দেন, আর তারপর-ই বিয়েটাও করিয়ে দেন। ব্যাবসায় আর বউ দুইয়েই মন বসেছে সাকিজলের, দেখে তৃপ্তও হন।

সাকিজলের বাপকে তালুই ভাবাটা অবশ্য তাতে বন্ধ হয় না। কারণও আছে। ছেলে লায়েক এবং সংসারী হয়ে উঠবার পরও জমিজমা তথা সংসারের পুরোটা ছাড়েননি হিশেবি মানুষটা। ছেলের ওপর আস্থার অভাবে যে ছাড়েননি, এমন নয়। বরং সংসারে তার কর্তৃত্ব-ই বজায় থাকুক সেই চাওয়া থেকেই ছেলেকে ধানি জমি খানিক ছেড়ে দিয়ে পৃথগন্ন করে দিয়েছেন; ছেলের বাড়িও আলাদা করে দিয়েছেন। ছেলের জন্য নেওয়া এই সব ব্যবস্থাই সঙ্গত, বিবেচনাপূর্ণ ঠেকেছে তার হিশাবে। সে সাকিজল কিংবা চারপাশের লোকজন যে যা-ই ভাবুক। সাকিজল নিজে কখনোই বাপের দিকটা বুঝতে চায়নি। বলা ভালো, সে চেষ্টাও সে করেনি। সেটা নেহাতই স্বার্থপরতার কারণে হয়তো। বা মা-হারা বলে বঞ্চিত এরকম ভাবনা থেকেও হতে পারে। সে-ই সম্ভাবনাই বেশি।

বারান্দায় বসে-বসে ঝিমাতে ঝিমাতে এইসব সাত-সতেরো ভাবতে-ভাবতেই সাকিজল খেয়াল করে, পানির পিপাসা পেয়েছে বলে মনে হলেও পানির জন্য সত্যি সত্যি তেষ্টা অনুভব করছে না সে। সেরকম করলে নিশ্চয়ই নিজেই উঠে গিয়ে কল চেপে খেয়ে নিতো। আরে, বিকাল গড়িয়ে গেলেও এখন অবধি কিচ্ছু পেটে পড়েনি—এতোক্ষনে মনে পড়ে তার! নাহয় লোকেদের ভীড়ভাট্টা-ই বাড়িতে, এরকম ভীড়ভাট্টা বছরে দুচারবার তো হয়ই। তাই বলে খাওয়া বন্ধ থাকে নাকি! সকালে উঠেই গরম ভাত খেয়ে বাজার যাওয়ার অভ্যাস তার। যতোই মুখরা হোক মমেনা, স্বামী-সন্তানের যত্নআত্তিতে খামতি নেই তার। একার সংসারে দুই হাতেই দশভুজার মতো সব সামলাতে জানে। খাটতেও পারে।

মরে গেলে ক্ষুৎ-পিপাসা থাকে না তাহলে? ক্লান্তিও তাহলে মিছামিছিই? এমনকি রাগটাও? রেগে গেলে বরাবরই নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হতো সাকিজলের। ছোটোবেলা থেকেই একটু দৌড়োলে, কি পরিশ্রম করলেই হাঁফ ধরে যেতো। সেসবের কিছুই তো হচ্ছে না আজ!
বেশ ভড়কে যায় সাকিজল। শরীরের লোম দাঁড়িয়ে গেছে বলে মনে হয় তার। গা-টা ঝাঁকুনি দিয়েও উঠলো নাকি। একবার চিমটি কেটে দেখবে?—সত্যিই সে আছে, নাকি নেই! গায়ে চিমটি কাটবার সাহস হয় না তার।

'মমেনা রে!'—ভয়ার্ত স্বরে বউকে ডাকে সাকিজল। ফ্যাঁসফ্যাঁসে শোনালো গলা নিজের কানেই। নাহ, বারান্দায় একা-একা বসে থাকতে ভয়ই লাগতে শুরু করে এবার। আঙিনায় জটলাটা নাই আর। খাঁ খাঁ করছে। মমেনাকে অবশ্য ডেকেও লাভ নেই। কই না কই বেহুঁশ হয়ে পড়ে আছে! লাথিটা মমেনার পাছায় কষাক বা না-কষাক, আবার তাকে মারতে চেয়েছে সে এ-কথা মনে হতেই সংকুচিত হয়ে পড়ে সাকিজল। তা এই ভীড়ে ভীড়াক্কার বাড়ির কোথাও কি নিরালা মিলবে একটু, যে, মমেনাকে দুটো ভালো কথা বলবে। বা লজ্জা-শরমের মাথা খেয়ে...!
উঠে পড়ে সাকিজল।

মমেনাকে পাওয়া গেলো ও-বাড়ির আঙিনায়। হুঁশেই আছে। যদিও কাদামাটি জড়ানো শাড়িটা বদলায়নি এখনো। চুলও আলুথালুই। মমেনার অস্ফুট বিলাপের মধ্যেই ছবিতন সান্ত্বনা দিয়ে যাচ্ছে—'কী আর করবু, বইন। কপাল তোর! নাইলে এংকা জুয়ান ভাতার...!' পিন্টু পাশেই খেলতে লেগেছে। ছবিতন পিন্টুকে নিয়ে এসে মমেনার কোলে বসিয়ে দেয়। 'নে, ছাওয়াটাক এ্যাকনা দুদ দে এ্যালা। নিজে তো খাইস নাই কিছু সারাদিন। ছাওয়াটাকও না খিলি মারবু? এইটা-ই এ্যালা আশা-ভরসা সউগে।'

মমেনা পিন্টুকে মাই দেয়। খানিক বাদেই 'ও খোদা গো, মোর পিন্টুর কী হইবে গো!'—উচ্চঃস্বরে কেঁদে ওঠে। ক্ষীণস্বরের গীতল বিলাপে ছেদ ঘটে। নিশ্চয়ই আরেক দফা বেহুঁশ হবে—ভাবে সাকিজল। এইবার  দৃশ্যটি বুকে বেঁধে তার। কালকে রাতের বুকের ব্যথা, যেটির কারণে এতোসব ঘটছে আজকে দিনভর, এর তুলনায় অনেক অল্পই ছিলো বলে বোধ হয়। চোখের কোনায় একটু পানিও কি এসে পড়ে?

উদ্ভ্রান্তের মতো ও-বাড়ির আঙিনা, উঠান পেরিয়ে ঘাটের পথ ধরে সে। পথে অনেকেই আসা-যাওয়া করছে। মামাতো ভাই নইমুদ্দি তার গা ঘেঁষে পার হয়ে গেলো। নির্বিকারভাবেই। হায়, তাকে কি কেউ দেখতে পাচ্ছে না! তাহলে, জানাযা শেষে যে নিঃস্পন্দ, নিথর শরীরটিকে ভেজা, স্যাঁতসেঁতে কবরে শুইয়ে রেখে এসেছে এরা সে-ই কি সাকিজল? সে সাকিজল হলে ঘাটের দিকে কে হাঁটছে? না, মাথাটা বোধহয় গেছে!  'মরি গেইলে মাথাও খারাপ হয় নাকি মাইনসের...হাহ! জোরেশোরে হেসে ওঠে সাকিজল!

সাকিজলদের এই পাড়াটা একটা বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মতো। মূল গ্রাম থেকে তো বটেই আশেপাশের গ্রাম থেকেও একদম আলাদা। মোটে পনেরো-কুড়িটি বাড়ি নিয়ে গড়ে উঠেছে। উত্তর আর পুব এই দুই দিক বয়ে গেছে ঘাঘট। দক্ষিণে ঘাঘটেরই মরা একটি ছড়া খাল মতো হয়ে আছে। পশ্চিম পাশটা পাশের গ্রামের দিকে খোলা। সে-দিকে পথ একটা আছে বটে, লোক চলাচল একেবারেই কম। গ্রামটাও অন্তত আধাঘন্টাটাক খেতখামারের ভেতর দিয়ে চলা সরু মেটে রাস্তা ধরে এগিয়ে গেলে পর শুরু হয়। ঘাঘটের চর মতো জমিই পাড়ার চারদিকে। লোকের বসত বলতে পাড়াটাই যা। ঘাট পার হলেই মূল গ্রাম, বাজারের সড়ক। মাঝে বওয়া নদীই বিচ্ছিন্নতা এনে দিয়েছে এপাড়ার।

ঘাটপাড়ে গোটা তিন-চারেক বাড়ি। তার-ই একটির উঠানপ্রান্তে ঘাট। যেহেতু, বরষাকাল। দিনে দিনে ঘাট নিচে নেমে যাবে। শীত আসতে আসতে সেটা শীর্ণ, শুষ্কপ্রায় ঘাঘটের একদম গা ঘেঁষে থাকবে। এখন ঘাঘটের পূর্ণ যৌবন হেতু পাড় ছাপিয়ে, পাড়ের আখখেত আর পাটখেত ছাপিয়ে গেরস্তবাড়ির উঠান অবধি পানি উঠে এসেছে। স্বাভাবিকভাবেই ঘাটও পাড়াতেই চলে এসেছে। নদী এবং নদীর ঘাটের স্বভাবই তো এই, কেবলই গতিপথ বদলায়, আর সরে সরে যায়।

ঘাটপাড়ে এখন বেশ বড়োসড়ো জটলা দ্যাখা যাচ্ছে। সাগাইসোদর সব বাড়িমুখো। ঘাটওয়ালা বাড়ির টঙে বসে আছে বড়ো বুবু। থেকে থেকে-ই 'ও ভাইধন রে!' ধ্বনি তুলছে, শাড়ির আঁচলে চোখের পানি মুছছে। বোনের পাশে বসে পড়ে সাকিজল!
বড়ো বুবুর দুই মেয়ে, মেয়ে জামাই, তাদের ছানাপোনা, সেজো দুলাভাই, সাকিজলের শ্বশুরবাড়ির দুইচারজন, একমাত্র মামু, মামাতো ভাই নইমুদ্দি আরও নানাজন অপেক্ষায় আছে পার হবে বলে। কিছুটা উৎকণ্ঠিত সকলেই। সূর্য ডুবেছে বলেই মনে হচ্ছে। আলো কমে এসেছে। আকাশে মেঘ জড়ো হচ্ছে। যেকোনো মুহূর্তে ঝরতে শুরু করবে ফের। স্বাভাবিকভাবেই সবারই বাড়ি ফিরবার তাড়া এখন।

সকাল থেকে ঘাটে নাও পারাপারের বিরতি নাই। পরিস্থিতি সামলাতে ঘাটের নিয়মিত নাও বাদেও আরেকটি নাও, পাড়ারই হানিফ মিয়ার মাছ-ধরা নাও, ঘাটে ছিলো। দিনভর দুই নাওয়ে মানুষ পারাপার করেছে। খানিক আগেই হানিফ মিয়া চলে গেছে। ঘাটের নাইয়া সুলেমানও হানিফের সাথেই উঠেছে। একে সারাদিনের পরিশ্রমে ক্লান্ত তার ওপর বাজারঘাটও করবার আছে! বিষটি নামবার আগেই বাজার থেকে ফিরতেও তো হবে।
নাও চালাচ্ছে সুলেমানের বড়ো ছেলে। তেরো-চোদ্দোর কিশোর। বাপের সাগরেদি করে অভ্যস্ত হলেও এই মড়াবাড়ির যাত্রী সামলাতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাকে।
ঘাটে নাও ভিড়লে সমবেত লোকজনের মধ্যে একটা হুল্লোড় লক্ষ করা গেলো। সবাই-ই আগে যেতে চায়। নাওয়ে তো একেবারে সবাইকে নেওয়া সম্ভব নয়। দূরের যারা, তারাই আগে উঠবে; মেয়েরাও উঠবে।

 'বেটিছইলেরা আগে যাউক। সাইঞ্জা হয়া আসিল। বাড়িত আইতের আন্দন, হাঁসমুরগি, গোরু-ছাগল তোলার আছে তামার।'—কেউ একজন বলে ওঠে।
'হ, হ। হামাক আগে যাওয়া নাগবে।'—সমবেত সায় শোনা যায় মেয়েদের তরফে। দেরি না করে চটজলদি কেউ কেউ উঠেও বসে। নাও ভরা হলে চলে যায়।

যারা যেতে পারে না তারা দাঁড়িয়ে থাকে। নানান আলাপে রত হয়। তাদের আলাপ ঘুরপাক খায় নদীর অই পারের অপেক্ষমাণ ব্যক্তি ও ক্রিয়াকর্মকে কেন্দ্র করে— ঘর-গেরস্থালি, সন্তান, খেত-খামার, বাজারঘাট—এইসব নিয়ে। ঘাটের এ-পারে যে কারণে এসেছিলো তারা, অর্থাৎ সাকিজলের মৃত্যু, সে প্রসঙ্গে কেউ একটি শব্দও উচ্চারণ করে না। হতে পারে, যে, তাদের সাকিজলকে নিয়ে আলাপের ভাণ্ডার ইতোমধ্যেই শেষ হয়ে এসেছে—দিনভর নানান স্মৃতিচারণ, ক্রন্দন, বিলাপ আর শঙ্কায়।
উপস্থিত মেজোবুবুর মেয়ে সখিনার জামাই এককভাবে নযর কাড়ে সবার। নইলে, যে যার পাশের জনের সাথে আলাপে ব্যস্ত এখানে।

জামাইটি ছোটোখাটো গড়নের মানুষ বলেই কি না—কেউ তাকে পাত্তা দিচ্ছে না, এরকম ধারণা থেকেই হয়তো—সবসময় হাঁকডাক, লাফঝাপ ছাড়া কথা বলতে পারে না। পরিবেশ-পরিস্থিতি বুঝে কথা বলাটা স্বভাবে নেই। নাও চলে গেলে রীতিমতো চিল্লাচিল্লি শুরু করে দেয় সে—'হামার যে পনেরো মাইল ঘাটা সাইকেল মারি যাওয়া নাগবে তাক কিছু নোয়ায়।' 'বেটিছইলের ঘরে হাঁসমুরগিই আগে হইল!' ইত্যাদি ইত্যাদি! সখিনার জামাইয়ের স্বভাব-চরিত্র যেহেতু জানা-ই সবার, ফলে, জামাইয়ের চিল্লানিতে বারেক তাকিয়ে যে যার আলাপে ফিরে যায়।
এরমধ্যে নাও ফিরে আসে।

যথারীতি হুড়োহুড়ি বেঁধে যায় অপেক্ষমাণদের মধ্যে। সখিনার জামাই ভীড় ঠেলে পয়লা উঠতে পারে না। নাও ভরে গেলে পর শেষমুহূর্তে লাফ দিয়ে নাওয়ে উঠতে গেলে নাও টাল খেয়ে যায় নাও। হৈ হৈ করে ওঠে নাওয়ের ও পাড়ের লোকেরা।
'এ জামাইটার আর আক্কেল-হিঞ্জার কিচ্ছু নাই' 'জামাই মানুষ তাই এ্যাদোন ক্যা?' 'ক্যা বাহে জামাই তোমার মায়ের নিকার কাজী আসি বসি আছে নাকি বাড়িত?' ইত্যকার মন্তব্য ধাইতে থাকে সখিনার জামাইয়ের দিকে। প্রথমে কিছুটা অপ্রস্তুত, কিছুটা শরমিন্দাও হয় বোধহয় সে। সমবেত ধিক্কার আর টিটকারিতে নাও থেকে দ্রুত নামতে গিয়ে পানিতে পড়ে যায় বেচারী!
এইবার ঘাটপাড়ের সকলেই সমস্বরে হেসে ওঠে।
সাকিজল বুবুর পাশে বসে এইসব দেখে। বুবুর ক্ষীণস্বর বিলাপও কি থেমে যায় কিছুক্ষণের জন্য? বুবুও কি একটু হেসে উঠলো? নইলে মুখে আঁচল তুলে দেবে ক্যানো! তাই তো মনে হলো সাকিজলের। সন্ধ্যার মুখ-আন্ধারির কারণে ঠিকঠাক দেখতে পায়নি যদিও।

নাহ, আর এক মুহূর্তও এখানে নয়—সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয় সাকিজল। ঘাট থেকে বাড়ির দিকে ফেরার পথ ধরে সে এবার। সরু রাস্তাটার পাশের শটিবনে জোনাক জ্বলতে শুরু করেছে। ছোটোবেলার কথা মনে পড়ে সাকিজলের। ভাইবোনদের সাথে কতোদিন এরকম সন্ধ্যায় জোনাক ধরতে শটিবনের ভিতরে ঢুকে পড়েছে। বাড়ির দিক থেকে আম্মার ডাকও ভেসে আসতে শোনে য্যানো, 'সাকি! এ বাবা, সাকি! ভর সইন্ধ্যাত কোনটে গেলুরে? বাড়ি আয়, বাপ!' সাকিজল বাড়ি অবধি আসে। উঠানের সিঁদুরে আমের গাছে বাদুড়ের দলের ক্যাঁচম্যাচ শোনা যায়। তলায় ধুপ করে আওয়াজ হয়। আম পড়লো নিশ্চয়ই। সাকিজল জানে, আমটা ফেটে গেছে। রস গড়াচ্ছে মাটিতে। সিঁদুরে আমের ধরনই ওরকম। এতো টুপটুপে রসালো যে মাটিতে পড়ামাত্রই ফেটে যায়। বাড়ির ভেতর থেকে ছোটো মার সুর করে কোরান পড়ার শব্দ আসছে। মাগরিবের আযান পড়েছে এরমধ্যেই। আব্বা মসজিদ থেকে ফেরেনি হয়তো এখনো। পিন্টু? পিন্টুর কোনও আওয়াজ নাই ক্যানো? ঘুমিয়ে পড়লো নাকি। মমেনা কি করছে? যাবে নাকি একবার বাড়ির দিকে! কিন্তু আম্মা ডাকছে তো—'সাকি, কোনটে, বাপ! আইত হয়া গেইল রে, হারামজাদা, বাড়িত আয়।' বাড়ির উঠানেই তো সাকিজল। আম্মার ডাক পশ্চিম দিক থেকে আসে ক্যানো? 'ও, মুই তো মরি গেইচো, আম্মা জানে। সেই জন্যে আম্মা গোরত যাবার জন্যে ডাইকপার নাগচে।'—রহস্যভেদ করবার তৃপ্তি নিয়ে বাড়ির উঠান পার হয়ে যায় সাকিজল।

সিঁদুরে আমগাছের বাদুড়দলের ক্যাঁচম্যাচে ভেতর বাড়ি থেকে মমেনার শ্রান্ত-স্বরের 'কোনটে গেইনেন গো, পিন্টুর বাপ!' সাকিজলের কান অবধি পৌঁছায় না।





সংক্ষিপ্ত লেখক পরিচিতি:
বায়েজিদ বোস্তামী (জন্ম: ১৯৮৭)
বায়েজিদ বোস্তামী কবি ও গদ্যকার।
জন্মস্থান রংপুর। 
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে পড়াশোনা শেষে এখন নিজের লেখালেখি করছেন। নিজস্ব ভাষা ভঙ্গিমায় গদ্য লিখছেন। ফিকশনের মধ্যেই তিনি বাঁচেন বলে মনে করেন। যে কারণে কিছু গল্পসল্প করতে চান। তাঁর প্রথম  গল্প-- গাঙডুবি (২০১৮) প্রকাশিত হয় একটি অনলাইন পোর্টালে। প্রথম গল্পবইয়ের জন্য পাণ্ডুলিপি গোছাচ্ছেন।
প্রকাশিত কবিতা বই: পাপের পুরাণ (২০১৯)

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ