গতিপথ ওয়েবজিন তার চতুর্থ বর্ষ অতিক্রম করে পঞ্চম বর্ষে পা রাখলো। এটা যতটা না উচ্ছ্বাসের খবর, তারও চাইতে বেশি আক্ষেপের। লেখা সংগ্রহ, বাছাই, সংকলন, সম্পাদনা ও প্রকাশের ক্ষেত্রে সর্বশেষ দুইটি বছর একেবারেই নিষ্ক্রিয়ভাবে কেটে গেল। অনিবার্যভাবে সম্পূর্ণ দায়ভার এর সম্পাদকের, যা তার একান্ত ব্যক্তিগত সমস্যা বটে! কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে তিনি তাই সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে করজোড়ে ক্ষমা ভিক্ষা চান।
তারপরও সবচেয়ে আনন্দের খবর হলো, গতিপথ নিষ্ফলা ও গতিহীন থাকলেও কখনও থেমে যায় নি, বন্ধ হয়ে যায় নি। বরং পাঠকের নিরন্তর পঠনের মধ্যেই এই ওয়েবজিন বেঁচে আছে, টিকে আছে। এতদিনে নতুন লেখা প্রকাশিত না হলেও দিনকে দিন নতুন পাঠকের সংখ্যা বেড়েছে। গুগল সার্চ ইঞ্জিনের প্রথম সারিতে উঠে এসেছে। অনলাইন বা সামাজিক মাধ্যমে কোনও লেখার লিঙ্ক শেয়ার ছাড়াই এর অর্গানিক পাঠকের সংখ্যা অবিশ্বাস্যভাবে বেড়েই চলেছে। প্রতিদিন শতাধিক পাঠকের কাছে বিভিন্ন লেখা পঠিত হচ্ছে। এটা সত্যিই খুব আনন্দের! গতিপথের এই অভাবনীয় অগ্রযাত্রায় শামিল সকল পাঠকের প্রতি হার্দিক ভালোবাসা ও শুভেচ্ছা রইল।
এ্ক্ষণে এইখানে দুই মহা-জনের প্রসঙ্গ উল্লেখ না করলেই নয়। এঁরা দু’জনেই বাংলা ভাষায় ব্লগজিন বা ওয়েব ম্যাগাজিনের বিকাশে দারুণভাবে ভূমিকা রেখে চলেছেন। একজন হলেন বই আলোচনার ওয়েবসাইট ‘গ্রন্থগত ডট কম’ এর উদ্যোক্তা ও সম্পাদক লেখক সুশান্ত বর্মণ। ওয়বসাইটের নকশা উন্নয়ন, নির্মাণ ও প্রযুক্তিগত জ্ঞান শেয়ারিংয়ের মাধ্যমে তিনি গতিপথকে সর্বদা গতিশীল রাখতে বিশেষ ভূমিকা রেখে চলেছেন। অপরজন হলেন বাংলা কথাসাহিত্যের অগ্রগামী সাধক ও সমসময়ের অনন্য গল্পকার কুলদা রায়। তিনি ‘গল্পপাঠ’ ওয়েব ম্যাগাজিনের অন্যতম উদ্যোক্তা ও সম্পাদক। তাঁর প্রগাঢ় ও হৃদ্গত আশ্রয়-প্রশ্রয়ে জন্মলগ্ন থেকেই ‘গতিপথ ডটকম’ ওয়েবস্পেসে পাঠকের চোখের সামনে সর্বদা ভেসে থাকতে পেরেছে। এই দুই পৃষ্ঠপোষক গতিপথের পথরেখা জুড়ে চির-নমস্য হয়ে থাকবেন।
এবারে কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে নিজেকে প্রশ্ন করা যাক। চারটি বছর তো গত হলো--নতুন ও সংকলিত শতাধিক লেখার প্রকাশ হলো; তাতে করে কার কী লাভ হলো? গতিপথ কি তার গন্তব্যের পথে থাকতে পেরেছে? খুব সহজে এর উত্তরে ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ কোনটিই বলা যাচ্ছে না। গতিপথের শুরুটা হয়েছিল নিদারুণ এক স্বপ্ন নিয়ে। দুইবছর ধরে নতুন কোনও লেখা প্রকাশিত হয় নি ঠিকই--সেটা তাই ব্যর্থতা। কিন্তু সফলতা হলো--দীর্ঘ নিষ্ক্রিয়তায় পড়েও গতিপথ পাঠকের কাছে টিকে ছিল-- আছে।
পঞ্চম বর্ষে এই ওয়েবজিনের নবতম যাত্রা শুরু হলো। বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করতে পারলে খুব ভালো হতো। কিন্তু অনেক সীমাবদ্ধতা মেনে নিতে হয়। তবে আগের মতোই নিয়মিত বা অনিয়মিতভাবে নতুন বা পুরনো সংকলিত লেখার প্রকাশ চলতে থাকবে। এখানে উল্লেখ করা খুবই যুক্তিসঙ্গত হবে যে, শুধু শুধু বা নিছক সাহিত্য ম্যাগাজিন করা গতিপথের গন্তব্য নয়। অনেক অনেক কবি আর লেখকের লেখা প্রকাশের ভাগাড় হয়ে ওঠার পরিণতিও গতিপথের নয়। বহুল প্রচার ও প্রসার ঘটিয়ে বিজ্ঞাপন কামাই করাও গতিপথের গন্তব্য নয়। গতিপথ কোনও প্রকাশনা সংস্থা বা তাদের মুখপত্রও নয়। এক্ষেত্রে গতিপথের দৃষ্টিভঙ্গি খুবই স্বচ্ছ ও সোজাসাপ্টা। আমরা বিশ্বাস করি, সাহিত্যের পরম্পরা মেনে হোক অথবা তা ভেঙ্গে চুরমার করে দিয়ে হোক সাহিত্যে নতুন নতুন যুগ সৃষ্টি হয়। নতুন নতুন ধারা তৈরি হয়। নানান ধরণের প্যাটার্ন সৃষ্টি হয়। সবগুলোই যে টিকে থাকে বা থাকবে এমন তো নয়। পৃথিবীর সব অঞ্চলের, সব ভাষার সাহিত্যেই তা ঘটে। আমরা সেই প্যাটার্নগুলো অনুসরণ করে যেতে চাই। শিশুর হাতেখড়ি কালে যেমন ভাষা তার আয়ত্তে থাকে না। প্রথমে বর্ণ চিনতে হয়, শব্দ শিখতে হয়। দিনের পর দিন চর্চা করতে হয়। চর্চার মাধ্যমেই একসময় প্রথম বাক্যটি লিখতে পারা যায়। তারও অনেক পরে বাক্যের পিঠে বাক্য বসিয়ে মনের ভাব প্রকাশ করতে পারা যায়। কিন্তু তার মনের ভেতর বোধ তৈরি না হলে সে কী করে লিখবে? এই ওয়েবজিনের বেলায়ও তার বোধটি সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ নয় কি? যেমন একজন ভালো লেখক হয়ে ওঠার বেলায়ও তার সাহিত্যবোধটি খুব জরুরি বিষয়। তাই শিখতে শিখতে বা চর্চার মধ্য দিয়ে বোধসম্পন্ন হয়ে বেড়ে ওঠা শ্রেয়তর। আমরা সে কাজটিই আনন্দের সাথে করে যেতে চাই।
আধুনিক বাংলা সাহিত্য দ্রুত বিকশিত হচ্ছে। দেশভাগের পরে পশ্চিম বাংলার সাহিত্য ও বাংলাদেশের সাহিত্যের সঙ্গে সঙ্গে ‘ডায়াসপোরা সাহিত্য’ দ্রুত বিকাশমান একটি শাখা। সেটা বিবেচনায় রেখে গতিপথের নবতম যাত্রায় ‘দেশভাগ’ ও ‘ডায়াসপোরা’ নামে পৃথক দুটি হাইলাইটস ট্যাব যুক্ত হবে। সকল পোস্টে দৃষ্টিনন্দন প্রচ্ছদ যুক্ত হবার আশা করি। এছাড়াও আরামবোধ হয় এমন ফন্ট, ইমেজ ও অলঙ্করণ যুক্ত হবে। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, চলার পথে অনেক নতুন ও গুরুত্বপূর্ণ লেখকের দেখা মিলবে। তাঁদের চিন্তা, চর্চা ও সাহিত্যবোধের সাথে পরিচিত হওয়া যাবে। সর্বোপরি নিয়মিত লেখা প্রকাশিত হলেই মনে করবো-- আমরা পথে আছি।
নবতম যাত্রায় যুক্ত থাকুন। মতামত দিন। নববর্ষের শুভেচ্ছা রইল।
ই-মেইল: gotipothbd@gmail.com
fb:www.facebook.com/gotipothbd
0 মন্তব্যসমূহ