bdtime

বঙ্গাব্দ ꘡

শফিক আশরাফের জানালা ꘡ আমাদের ভুটানযাত্রা ꘡ পর্ব-৭







আমাদের ভুটানযাত্রা [পর্ব-৭]


অনেক দূর থেকে একটা প্রশান্তির ধ্বনি ভেসে আসছে। যেন হাজার হাজার মানুষ একসঙ্গে বলছে-ওম শান্তি, ওম শান্তি, ওম তৎসত। এরকম একটা ছন্দময় সুরের শব্দে ঘুম ভেঙে গেল। ঘুম ভেঙে বিছানায় শুয়ে ভাবছিলাম হয়তো চমৎকার একট মোহময় স্বপ্নের ভেতর ছিলাম। কিন্তু কি আশ্চর্য সত্যি সত্যি একটা বিনবিন সুর ভেসে আসছে। অনেক মানুষ একসঙ্গে ওম শান্তির মতো ধ্বনি করছে! আমি মন খুলে সেই প্রশান্তির বাণী শুনলাম। হোটেলের আশপাশে অনেকগুলো প্যাগোডা আছে, সবগুলোতে একসঙ্গে সকালের প্রার্থনা হচ্ছে। সেই প্রার্থনার মনোমুগ্ধকর ধ্বনি ভেসে আসছে। সারারাত রুমহিটার চলার কারণে শীত টের পাইনি। বাচ্চা দুটো কুকড়েমুকড়ে শুয়ে আছে। স্বননের একটা পা আমার মুখের কাছে, বুননের একটা হাত খাটের বাইরে ঝুলে আছে। কম্বলের আরাম ছেড়ে উঠতে ইচ্ছে করলো না। আমার ঘুমভাঙা দেখে আইরিন জিজ্ঞাসা করলো, চা খাবো কি না? আমি যেন ওই কথাটা শোনার জন্যেই অপেক্ষা করছিলাম। মনে মনে বললাম. ‘আবার জিগায়!’ খুশি হয়ে মুখে বললাম, ‘আলবৎ খাবো’। গত রাতের জ্যোৎস্নার ঘোর এখনো মাথায় আলো ছড়াচ্ছে। বালিশের নীচ থেকে মোবাইলটা বের করে দেখি সকাল সোয়া সাতটা। সকাল আটটার মধ্যে গাড়ি আসার কথা। আইরিন টি-ব্যাগ দিয়ে চটকরে দু’কাপ চা বানিয়ে ফেললো। খাটে হেলান দিয়ে বসে বসে চা পান করলাম। ভুটানের এই সকাল, বিছানায় বসে এই এককাপ গরম চা, বাচ্চাদের এই ঘুমন্তমুখ পৃথিবীতে এটাই এখন সবচেয়ে সুন্দর দৃশ্য, পৃথিবীতে এটাই এখন আমার কাছে সবচেয়ে সুখকর মুহূর্ত। জীবনানন্দ দাশের কবিতার মতো মনে হয়:


‘অর্থ নয়, কীর্তি নয়, সচ্ছলতা নয়
আরো এক বিপন্ন বিস্ময়! আমাদের অন্তর্গত রক্তের ভেতর খেলা করে।’

চা পান শেষে চাঙ্গা হয়ে বিছানা ছেড়ে উঠে পড়লাম। বাচ্চাদের ডেকে তুলে বাথরুমে একটা হট শাওয়ার নিয়ে বেরিয়ে আসলাম। বাচ্চাদের কাপড়চোপড় পরিয়ে রেডি করতে করতেই আমাদের ড্রাইভার সুপো এসে সময় মতো হাজির। ওদের টাইমসেন্সটা আমার ভালো লাগলো। পৃথিবীতে সবচেয়ে সময় মেনে চলা মানুষ হলো জাপানের মানুষ। ওদের দশটার ট্রেন মানে দশটার ট্রেন। নয়টা ঊনষাটও না, দশটা একও না। কোন কারণে একদিন ট্রেন লেট হলে যথার্থ কারণ দর্শাতে না পারলে দায়িত্বরতদের চাকরি চলে যাবে। এজন্যে পৃথিবীতে জাপানি টাইম বলে একটা কথা ইদানীং চালু হয়েছে। আর আমাদের বাঙালিদের টাইমসেন্সের বড়ই ঘাটতি! বিশেষকরে তথাকথিত ভিআইপিরা তাদের গুরুত্ব বাড়ানোর জন্যে ইচ্ছে করেই সময় মতো কোথাও হাজির থাকে না কিংবা কাজটা শেষ করে না! একারণে আমরা অবশ্য তাদের উপর অসন্তুষ্টও না। কারণ ছোটবেলা থেকেই আমরা সাধু, সন্ন্যাসী, মুনি-ঋষির বিভিন্ন অলৌকিক ক্ষমতার সঙ্গে ভিআইপিদের ক্ষমতা মিলিয়ে-মিশিয়ে এক করে দেখি। অতএব তারা রুষ্ট হলে আমাদের সমূহ ক্ষতি।

আমরা সকাল আটটায় পুনাখার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়লাম। সকালের ভুটান মানে বেশ শীত ও কোথাও কোথাও মেঘে আচ্ছন্ন। গাড়ির হিটার চালিয়ে জানালা বন্ধ করে আমরা আরামদায়ক একটা আবহাওয়ায় বসে বসে বাইরের অপরূপ প্রকৃতি দেখছি। আঁকাবাঁকা পাহাড়ি রাস্তা। রাস্তাগুলো খানিক প্রশস্ত হওয়ার কারণে ভয় কম লাগে। শিলিগুড়ি থেকে দার্জিলিং যাওয়ার পাহাড়ি রাস্তা অনেক সরু। সেখানে মোড় ঘুরতেই আত্মা ছ্যাৎ করে উঠে, এই বুঝি পাহাড়ের কোল বেয়ে গড়িয়ে নিচে পড়ে গেলাম! সেটা এত নিচ যে তার কোন তল নেই।
ভুটানের রাস্তঘাট প্রকৃতি-পরিবেশ অনেক বেশি সুন্দর। দু’পাশের পাহাড়গুলো গাঢ় সবুজ, দূরে কোথাও পাহাড়ের কোল বেয়ে ঝর্না নেমে আসছে। শব্দ শোনা যাচ্ছে না কিন্তু ঝর্নার সাদা স্রােতধারার মনোরম দৃশ্য একটা বেহেস্তি পরশ নিয়ে আসছে। আমাদের রাস্তা ধরেই অনেক নিচ দিয়ে কোথাও বরফগলা পাহাড়ি নদী আমাদের সঙ্গে সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলেছে। সবচেয়ে সুন্দর লাগে মেঘের খেলা। কোথাও পাহাড়ের কোলে স্থির হয়ে আছে ধবধবে সাদা একখন্ড মেঘ, আবার কোথাও হালকা বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে দুই পাহাড়ের মাঝের শূন্য জায়গায়। আমরা বাংলাদেশে বসে শরৎকালের আকাশে ধবধবে সাদা মেঘ দেখি, সেটা অনেক উঁচু, আমাদের নাগালের বাইরে যেন স্বপ্নরাজ্য। শ্রাবণে-বর্ষায় কুচকুচে কালো মেঘ অনেকটা ত্রাস নিয়ে ভেসে যায়, আমরা
দোচুলাপাস
ভীতচোখে সেটা দেখি। মেঘের সঙ্গে ভেসে বেড়ানো, মেঘের উপরে উঠে মেঘ দেখা, মেঘের ভেতর ঢুকে যাওয়া অনেকটা স্বপ্নের মতো মনে হয়। এরপর চারপাশের পরিবেশ যদি হয় নির্মল, সঙ্গে যদি থাকে ঝর্না ও নদী তাহলে এটাকে পৃথিবীর স্বর্গ বলা ভুল হবে না। গাড়ির জানালার কাঁচ দিয়ে কোন পাশ রেখে কোন পাশ দেখবো! চারদিকেই অসাধারণ সৌন্দর্য। দূরে পাহাড়ের খাঁজে খাঁজে, গাছের পাতায় পাতায় এবার আমাদের চোখে পড়লো ধবধবে সাদা মতো বস্তু, কোথাও রোদের আলো পড়ে ঝিকঝিক করে উঠছে। আমি ড্রাইভারকে জিজ্ঞাসা করলাম, ওগুলো কি! বরফ নাকি? ড্রাইভার হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়লো। আমরা অবাক বিস্ময়ে গাছের পাতায় জমে থাকা বরফ দেখতে থাকি। আমাদের বরফ দেখা মানে ফ্রিজের গায়ে শক্ত হয়ে লেগে থাকা জমাট বরফ! কিংবা টেলিভিশনের পর্দায় ডিসকভারি চ্যানেলে বরফের দেশে ইগলো তৈরি করে সারভাইব করে বেয়ারগ্রিলের টিকে থাকার কৌশল দেখা। খালি চোখে বরফ দেখা, ধীরে ধীরে বরফের রাজ্যে ঢুকে পড়া এ এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা।

আমরা যখন দোচুলাপাস এসে থামলাম তখন মনে হচ্ছিল সেটা বরফরাজ্য! চারদিকেই সাদা বরফে ঢাকা। একটা মন্দিরের খোলা জায়গায় গাড়ি থেকে নামলাম। গাড়ি থেকে নেমেই শীতের একটা ধাক্কা খেলাম। গাড়ির হিটারে বেশ গরম হয়ে ছিলাম আর বাইরে মাইনাস তাপমাত্রা। স্বনন নেমেই দৌড়ে চলে গেল স্তুপ হয়ে জমে থাকা বরফের পাহাড়ে। আমি সেদিকে তাকাতে চমৎকার একটা সুন্দর দৃশ্য দেখে অবাক হলাম। কে যেন বরফ দিয়ে চমৎকার একটা মূর্তি বানিয়ে রেখেছে। মূর্তিটা তৈরি করেছে একটা হলুদ রঙের গাজর দিয়ে আর চোখ দুটো কালো পিচফল দিয়ে।
দোচুলাপাসে  কোনও পথিকের গড়া বরফ-মূর্তি
ফকফকা সাদা রঙের বরফের ভেতর মূর্তিটাকে এত চমৎকার লাগছিল, মূর্তির কারিগরের রুচি সৌন্দর্য দেখে আমি মুগ্ধ। বুনন গাড়ি থেকে নেমেই ঠাণ্ডার ধাক্কা সামলাতে না পেরে বললো, আমি গাড়িতেই থাকবো, তোমরা যাও। অগত্যা বুননকে গাড়িতে রেখেই আমরা তিনজন বেড়াতে বের হলাম। বৌদ্ধমন্দিরটা প্যাগোডা স্টাইলে একদম নিচ থেকে শুরু। আমাদের মসজিদে যেমন গম্বুজ থাকে, তেমনি প্যাগোডার ছাদটা কয়েকটা স্তরে সোজা উপরে উঠে যায়। এটা নিচ থেকে ধীরে ধীরে সরু হয়ে উপরে উঠে গেছে। এর একপাশে বরফ জমে সাদা হয়ে আছে অপরদিকে খোলা  ও শূন্য জায়গার পরেই পাহাড়। আমরা খোলা প্রান্তরের দিকে তাকিয়ে আবারো অভূতপূর্ব দৃশ্যের মুখোমুখি হলাম। পাহাড়ের ওপাড়ে কাঞ্চণজঙ্ঘার অপরূপ রূপে মোহিত হলাম। কাঞ্চণজঙ্ঘার বরফে সূর্যের আলো পড়ে সোনারঙ ধারণ করেছে। রূপ দেখে আমাদের মুখের ভাষা হারিয়ে গেল। মনে হচ্ছিল কোনও সোনার তৈরি পাহাড়ের কাছে এসে দাঁড়িয়েছি আমরা। এর আগে একবার কাঞ্চণজঙ্ঘার মাথা দেখার জন্যে দার্জিলিংয়ে ভোর চারটেয় উঠে স্বননকে ঘাড়ে করে শ্বাসকষ্ট নিয়ে টাইগার হিলের মাথায় বসে থেকেছি কিন্তু আমাদের দেখা দেয়নি সেই সৌন্দর্য! কিন্তু না চাইতেই সেটা যে এখানে এসে ঘোমটা খুলে দেবে সুন্দরী নর্তকীর মতো আর আমাদের সামনে নাচতে নাচতে হাজির হবে সেটা বুঝতে পারিনি। রূপ দেখে তাই বলে ফেললাম:
- প্রফেসর এনায়েত আলী ও উস্তাদ আলাউদ্দীন খাঁয়ের সেতারা ও সরোদে রাগ ‘বাগেশ্বরী আলাপ’র চেয়ে সুন্দর দৃশ্য! আইরিন সৌন্দর্য দেখতে দেখতে আমার কথা বুঝতে না পেরে বললো,
- কিছু বললা? আমি তার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললাম,
- বেশি সুন্দর কিছু দেখলে আমার মরে যেতে ইচ্ছে করে!
- যাহ্, কি যে বলো! মরা ছাড়া আরো অনেক কিছু বলার আছে।
- আমি হাসলাম।

কিন্তু আমার মনে হয় মৃত্যুই সবচেয়ে সুন্দর! আর ভয়াবহ কিছুর মাঝে মরে যাওয়া আরো বেশি সুন্দর। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবস্থায় কখনো মনে হতো, লালনের সুন্দর কয়েকটি সুন্দর গান কিংবা বাঁধনের গাওয়া কিছু রবীন্দ্রনাথের গানসহ আমাকে দরজার ভেতর আটকিয়ে রাখলে কিছুক্ষণ পর দেখা যাবে গান শুনতে শুনতে এর সৌন্দর্যের মাঝে আমি মরে শক্ত হয়ে পড়ে আছি! আবার কোন মেয়েকে পছন্দ হলে মনে হতো- এই সুন্দর মেয়েটা কারো গর্ভে জন্ম নেয়নি, এই সৌন্দর্য একদম মাটি ফেটে বেরিয়ে এসেছে! এই সুন্দরকে প্রেম নিবেদন করলেই আমার মৃত্যু হবে। হয়তো জীবনের প্রতি মায়া থেকেই...

কাঞ্চণজঙ্ঘার সৌন্দর্যে আমরা স্নান করতে করতে বরফের ওপাশে চলে গেলাম। স্বনন বরফের বল বানিয়ে এদিক ওদিক ঢিল মারছে। আমাকে দেখে আমার দিকে লক্ষ্য করে একটা ঢিল ছুড়ে মারলো। ঢিল আমার কাঁধে লেগে বরফের কুচি ছড়িয়ে পরলো চারপাশে। আমি স্বননের সঙ্গে আনন্দে যোগ দিলাম। বরফের বল দিয়ে তাকে মারা শুরু করলাম। খানিকক্ষণ পর আইরিনও আমাদের সঙ্গে ঢিলাঢিলিতে যোগ দিলো। দৌড়াদৌড়ি ঝাঁপাঝাঁপিতে আমাদের শীত অনেকখানি কমে গিয়েছে। বেশ খানিকটা সময় আমরা এখানে কাটালাম। ভাসমান কফিওয়ালা ডেকে দু’কাপ কফি খেলাম। এরপর এখান থেকে যাত্রা শুরু করলাম পুনাখা জংয়ের দিকে।

পাহাড়ের পেটঘেঁষে বানানো রাস্তা অনেকটা বরফে ঢেকে আছে। বরফের উপর দিয়ে গাড়ি চলতে চলতে অনেক জায়গায় এবড়ো-থেবড়ো হয়ে গেছে রাস্তাটা। নিচে শত শত ফিট গভীর খাদ, উপরে আকাশ ছোঁয়া পাহাড়। কিন্তু অবাককাণ্ড হলো কিছুক্ষণ পরেই আমরা উষ্ণ আবহাওয়ার মধ্যে প্রবেশ করলাম। রাস্তায় কোন বরফ নেই, একদম খটখটে। চারপাশের সবুজ, আকাশের নীল, ধবধবে সাদা মেঘ তাদের সমস্ত সৌন্দর্য নিয়ে আমাদের উপর যেন ঝাঁপিয়ে পড়লো। রাস্তার পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে বরফগলা খরস্রােতা নদী। গাড়িতে বসে নদীর কলকল ধ্বনি শুনতে পাচ্ছি। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপ্যায়ের মতো আমারও মনে হচ্ছে, প্রকৃতির ঘোমটা খোলা রূপ সহ্য করার শক্তি সবার মধ্যে থাকে না। আমরা মৃদু নিঃশ্বাসে সুন্দরের ভেতর দিয়ে যাত্রা করছি। ধীরে ধীরে আমরা পাহাড়ের উঁচু থেকে নদীর কাছে নেমে আসলাম।

ফাঁকা একটা জায়গা দেখে আমাদের গাড়ি থামাতে বললাম। গাড়ি থেকে নেমে অনেকটা দৌড়ে পাথুরে নদীর ধারে চলে আসলাম। আহা কি টলমলে নীল পানি! আকাশের নীল ও নদীর পানির নীল মিলেমিশে এত চমৎকার একটা পরিবেশ তৈরি করেছে যে মনে হয় এটা অন্যজগৎ। আমরা প্রচুর পাখির কলকাকলি শুনছি কিন্তু চট করে পাখিগুলো চোখে পড়ছে না, কিছু পাখি নদীতে ভাসতে দেখছি। বুনন চিৎকার করে বলে উঠলো:
- বাবা, দেখ দেখ ওই পাড়ে কত পাখি বসে আছে!
ভালো করে তাকিয়ে দেখি পাহাড়ের কোল ঘেঁষে বয়ে চলা পাথুরে নদীর ওপাড়ে শত শত শামুকখোল পাখির মতো দেখতে পাখিদল বসে কিচিরমিচির করছে। পাখিদের গায়ের রং পাথরের রঙের কাছাকাছি, ভালো করে লক্ষ্য না করলে পাখিদের পাথরই মনে হয়। এছাড়া রোদের প্রতিফলন, আকাশ থেকে চুইয়ে নদীতে পড়া নীল চোখে এক ধরনের ধাধাঁ লাগায়, ফলে সেটা চোখে সয়ে না গেলে পাখি দেখা যায় না!

নদীর ধারে, সেলফোন ক্যামেরায় সৌন্দর্য ঠিকমতো আসে নাই
আমরা নদীর পানিতে নার্সিসাসের মতো অনেকক্ষণ নিজেদের দেখলাম। বেলজিয়াম কাঁচের চেয়েও সেখানে নিজেদের ভালো দেখা যায়। একসময় ড্রাইভার সুপো এসে জিজ্ঞাসা করলো আমরা নদীতে রিভার রাফটিং করবো কি না? স্বনন খুব লাফাচ্ছে রাফটিং করার জন্যে আর আমি ওর কারণেই রাফটিং করার সাহস পাচ্ছি না। যদিও লাইফ জ্যাকেট, বেল্টটেল্ট বাঁধা থাকে তবুও স্বননের চঞ্চলতাকে বড় ভয়! আমি রাজি হবো হবো করছি। কিন্তু নদীর স্রােতের দিকে তাকিয়ে আইরিন এক কথায় না করে দিলো। আমি বললাম:
- বাচ্চাদের একটা স্মরণীয় দিন হয়ে থাকতো। আইরিন দার্শনিকের মতো বললো,
- কিছু সৌন্দর্য দূর থেকে দেখতে হয়, সকল সৌন্দর্যের ঘাড়ে চড়ে বসতে হয় না! দেখছো কেমন স্রােত! স্বননকে দেখ, এমনিতেই পানিতে নামার জন্যে ছটফট করছে, বোটে উঠে ও লাফ দিয়ে পানিতে পড়বে।
আমি আইরিনের শঙ্কা দেখে নিরস্ত হলাম। রাফটিং করবো না শুনে স্বনন দৌড়ে হাঁটু পানিতে নেমে গেল।


[চলবে]

শফিক আশরাফ (জন্ম: ৬ আগস্ট ১৯৭১)
শফিক আশরাফ গল্পকার, প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট। জন্মস্থান টাঙ্গাইলের কালিহাতী থানার অন্তর্ভুক্ত সিঙ্গাইর গ্রামে। বর্তমানে রংপুরে বসবাস করেন। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে বিভিন্ন লিটলম্যাগে লেখালেখির শুরু। ২০০০ সালে তিনি ও বন্ধু কবি শামীম নওরোজ এবং ফারুক আকন্দ মিলে অন্যতম ছোটকাগজ ‘চিহ্ন’ প্রথম বের করেন। পরবর্তী সময়ে ‘চিহ্ন’ সম্পাদক এবং আরো পরে প্রখ্যাত সাহিত্যিক শিমুল মাহমুদ সম্পাদিত ছোটকাগজ ‘কারুজ’ এর সহযোগী সম্পাদক ছিলেন। ছোটকাগজ অন্বীক্ষা, লোকপত্র, মাটি, প্রকৃতি -তে তিনি নিয়মিত লিখেছেন।


তাঁর প্রথম প্রকাশিত গল্প ‘নহর আলীর মা’ (১৯৯৯)। দীর্ঘ সময়ে তিনি বেশকিছু গল্প লিখেছেন।চন্দন আনোয়ার সম্পাদিত গল্প পঞ্চাশৎ, রাশেদ রহমান সম্পাদিত এই সময়ের নির্বাচিত ছোটগল্প প্রভৃতি সংকলনে তাঁর গল্প প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া তাঁতি সম্প্রদায়কে নিয়ে তাঁর প্রথম উপন্যাস ‘পাউঠি’র খসড়া সম্প্রতি শেষ হয়েছে। প্রকাশিতব্য গল্পগ্রন্থ ‘পাগল অথবা প্রত্যাশিত মৃত্যু’।   

প্রকাশিত গবেষণাগ্রন্থ: বাংলাদেশের গ্রাম ভিত্তিক ছোটগল্পে জীবন, সমাজ ও সংস্কৃতি ১৯৪৭-২০০০ (প্রকাশকাল ২০১৩); প্রবন্ধ-গ্রন্থ: সিনেমা ও সাহিত্য প্রাসঙ্গিক পাঠ (২০২০)।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ